মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল স্পষ্ট করেছেন যে ভারত কোনো বাণিজ্য চুক্তি সময়সীমার চাপে করে না, এবং তা কেবল তখনই অনুমোদন দেবে যখন তা জাতীয় স্বার্থের অনুকূল এবং সম্পূর্ণরূপে ভারসাম্যপূর্ণ হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও ভারতের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন যে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য চুক্তি শীঘ্রই সম্পন্ন হতে পারে এবং এটি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ট্রাম্প এ কথাও নিশ্চিত করেছেন যে তাঁর প্রশাসন বেশ কয়েকটি দেশকে আমদানির শুল্ক নিয়ে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠাতে শুরু করেছে।
ট্রাম্প বলেছেন, “আমরা ব্রিটেনের সঙ্গে চুক্তি করেছি, চীনের সঙ্গে চুক্তি করেছি এবং এখন ভারতের সঙ্গে চুক্তি করার খুব কাছাকাছি রয়েছি।” তিনি আরও যোগ করেন যে যে দেশগুলির সঙ্গে চুক্তি হবে না, তাদের আমেরিকায় তাদের পণ্য পাঠাতে ভারী শুল্ক দিতে হবে।
ভারত অতিরিক্ত সময় পেল
ট্রাম্পের এই ঘোষণার ঠিক আগে, আমেরিকা উচ্চ শুল্কের স্থগিতাদেশ ৯ জুলাই থেকে ১ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারত বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার জন্য তিন সপ্তাহের অতিরিক্ত সময় পেয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের এই নমনীয়তাকে বাণিজ্য আলোচনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আমেরিকা ২ জুলাই থেকে ভারতের কিছু পণ্যের উপর উচ্চ আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিয়েছিল, যা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।
কৃষি ও দুগ্ধ শিল্প সবচেয়ে বড় বাধা
ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল কৃষি ও দুগ্ধ খাত। আমেরিকা চায় ভারত দুগ্ধ খাতে আরও বেশি প্রবেশাধিকার দিক, কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত কোনো মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (FTA) দুগ্ধ খাতের দরজা খোলেনি।
ভারতীয় দুগ্ধ শিল্প দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার এই দাবির বিরোধিতা করে আসছে, কারণ এর ফলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদকদের উপর প্রভাব পড়তে পারে। একইসঙ্গে, আমেরিকাও ভারত থেকে কৃষি পণ্যের উপর শুল্ক ছাড় চাইছে, যা বর্তমানে কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকা কোন কোন দেশকে শুল্কের নোটিশ পাঠিয়েছে
ট্রাম্প প্রশাসন সোমবার কয়েক ডজন দেশকে চিঠি পাঠিয়েছে, যেখানে তাদের পণ্যের উপর আমেরিকা কর্তৃক আরোপিত শুল্কের তথ্য দেওয়া হয়েছে। যে দেশগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে:
- বাংলাদেশ
- বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা
- কম্বোডিয়া
- ইন্দোনেশিয়া
- জাপান
- কাজাখস্তান
- লাওস
- মালয়েশিয়া
- সার্বিয়া
- দক্ষিণ আফ্রিকা
- দক্ষিণ কোরিয়া
- থাইল্যান্ড
- তিউনিসিয়া
এই দেশগুলোর প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেছেন, “এই দেশগুলো আমেরিকাকে লুট করছে। তারা আমাদের উপর এমন শুল্ক আরোপ করছে যা আগে কখনও হয়নি। কিছু দেশ ২০০ শতাংশের বেশি শুল্ক আদায় করছে, যা বাণিজ্যকে কঠিন করে তুলছে।”
শুল্ক এবং ট্রাম্পের নীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যকালে 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতির অধীনে বাণিজ্য নীতিতে বেশ কয়েকটি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। ট্রাম্প প্রায়ই দাবি করেছেন যে আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি অন্যান্য দেশের কারণে বেড়েছে এবং তাই তিনি শুল্কের মাধ্যমে ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছেন।
চীন ও ইউরোপের সঙ্গে শুল্ক যুদ্ধের পর, এখন ভারতের উপরও চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যে তারা যেন তাদের শুল্কের নিয়মে পরিবর্তন আনে অথবা মার্কিন পণ্যের উপর শুল্কের জন্য প্রস্তুত থাকে।
ভারতের সঙ্গে চুক্তি কেন জরুরি আমেরিকার জন্য
ভারত আমেরিকার জন্য একটি বড় এবং উদীয়মান ভোক্তা বাজার। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য বিগত বছরগুলোতে ভাল বৃদ্ধি দেখা গেছে। আমেরিকা ভারতের প্রধান রপ্তানি বাজারগুলির মধ্যে একটি এবং উভয় দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় ২০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
ট্রাম্পের চেষ্টা হল বাণিজ্য ভারসাম্য আমেরিকার পক্ষে আনা, যার জন্য তিনি আরও বেশি বাজার প্রবেশাধিকার এবং কম শুল্ক চান।
চুক্তির ইঙ্গিত এবং কূটনৈতিক চাল
ট্রাম্পের বিবৃতি এবং আমেরিকা কর্তৃক শুল্ক স্থগিতাদেশ বাড়ানো থেকে এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে সক্রিয় প্রচেষ্টা চলছে। যদিও ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো চূড়ান্ত ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যে কবে এই চুক্তি চূড়ান্ত হবে।
ভারত তার অভ্যন্তরীণ স্বার্থ বিবেচনা করে, বিশেষ করে সেই ক্ষেত্রগুলিতে যেখানে আমেরিকার চাপ বেশি, সেইসব দিকগুলি বিবেচনা করে এই চুক্তিটি চূড়ান্ত করতে চাইছে।