হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে শ্রাবণ মাসকে সবচেয়ে পবিত্র এবং ধর্মীয় মাসগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি শিব ভক্তদের জন্য অত্যন্ত বিশেষ, কারণ এই মাসে ভগবান শিবের বিশেষ পূজা করা হয়। ২০২৫ সালে শ্রাবণ মাস শুরু হয়েছিল ১১ই জুলাই থেকে এবং এখন এই পবিত্র মাসটি তার শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
এই বছর শ্রাবণ মাসের সমাপ্তি হবে ৯ই অগাস্ট ২০২৫ তারিখে। কিন্তু শ্রাবণ পূর্ণিমার তারিখ নিয়ে মানুষের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেক জায়গায় ৮ই অগাস্টকে পূর্ণিমা বলা হচ্ছে, আবার কিছু পঞ্জিকা অনুসারে এই তারিখটি ৯ই অগাস্ট বলে মনে করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক সময় এবং পূজা পদ্ধতি সম্পর্কে জানা জরুরি হয়ে পড়েছে।
শ্রাবণ পূর্ণিমা কবে, কোন দিন মানা হবে
শ্রাবণ পূর্ণিমার তারিখটি এবার ৮ই অগাস্ট ২০২৫ তারিখে দুপুর ২টো বেজে ১২ মিনিটে শুরু হয়ে ৯ই অগাস্ট দুপুর ১টা বেজে ৪ মিনিটে শেষ হবে। এই কারণে পঞ্জিকাতে দুই দিনের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে, তবে উদয়তিথি অনুসারে বেশিরভাগ ধর্মীয় কাজ ৯ই অগাস্ট তারিখে করা হবে।
তবে, যারা চন্দ্রের পূজা করেন, তাঁরা ৮ই অগাস্টেই উপবাস রাখবেন এবং রাতে চন্দ্রোদয়ের পর ভগবান চন্দ্রকে অর্ঘ্য নিবেদন করবেন। যেহেতু ৯ই অগাস্ট পূর্ণিমা তিথি দুপুর পর্যন্ত থাকবে, তাই উপবাস ও পূজা ৮ই অগাস্টেই বৈধ থাকবে।
৯ই অগাস্ট সাওয়নের শেষ দিন এবং রাখিবন্ধন উৎসব
পঞ্জিকা অনুসারে, যেদিন পূর্ণিমা তিথি শেষ হয়, সেদিনই শ্রাবণ মাসের সমাপ্তি ধরা হয়। এই বছর ৯ই অগাস্ট শ্রাবণ পূর্ণিমার সমাপ্তি হবে এবং এই দিনেই রাখিবন্ধন উৎসবও পালিত হবে। এই দিনে বোনেরা তাদের ভাইদের হাতে রাখি বাঁধবেন এবং ভাইয়েরা তাদের সুখ, সম্মান এবং রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেবেন।
রাখিবন্ধনেও চন্দ্রকে অর্ঘ্য দেওয়ার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, তাই এই দিনটি ধর্মীয়ভাবেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি এই দিনেই ভাদ্রপদ মাসের শুরু ধরা হবে।
শ্রাবণ পূর্ণিমায় চন্দ্র দর্শন ও পূজার মাহাত্ম্য
শ্রাবণ পূর্ণিমার দিনে চন্দ্রকে অর্ঘ্য দেওয়ার রীতি বহু বছর ধরে চলে আসছে। এই দিনে বিশেষ করে শিব ভক্তরা চন্দ্রের দর্শন করে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, চন্দ্রকে জল নিবেদন করলে মানসিক শান্তি ও সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়। যেহেতু ভগবান শিব চন্দ্রকে নিজের মস্তকে ধারণ করেছেন, তাই শ্রাবণ পূর্ণিমায় চন্দ্র পূজা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
চন্দ্রোদয়ের সময়: ৮ই অগাস্ট কখন অর্ঘ্য দেবেন
এই বছর শ্রাবণ পূর্ণিমায় চন্দ্রের উদয় হবে ৮ই অগাস্ট সন্ধ্যা ৬টা বেজে ৪২ মিনিটে। এই সময়ে চন্দ্রের দর্শন করে জল দিয়ে অর্ঘ্য দেওয়া শুভ বলে মনে করা হয়। পূজার পর চন্দ্র দেবকে মিষ্টি নিবেদন করা এবং পরিবারের সুখ-শান্তির জন্য প্রার্থনা করা বিশেষভাবে ফলদায়ক বলে মনে করা হয়।
স্নান ও দানের শুভ মুহূর্ত
শ্রাবণ পূর্ণিমার উপলক্ষে দান-পুণ্য ও স্নানেরও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। যারা উপবাস রাখেন না, তারাও এই দিনে স্নান ও দান অবশ্যই করেন। ৯ই অগাস্ট ভোর ৪টা বেজে ২২ মিনিট থেকে ৫টা বেজে ৪ মিনিট পর্যন্তের সময়টি স্নান ও দানের জন্য শুভ থাকবে। এই সময়ে পবিত্র নদীতে স্নান করে দান করা বিশেষভাবে পূণ্যজনক বলে মনে করা হয়।
সাওনের পূর্ণিমায় হয় অনেক ধর্মীয় অনুষ্ঠান
শ্রাবণ পূর্ণিমা কেবল সাওয়নের সমাপ্তির ইঙ্গিত দেয় না, বরং এই দিনে অনেক ধর্মীয় ক্রিয়া ও উৎসবও হয়।
- শ্রবণী উপকর্ম: এই দিনে ব্রাহ্মণরা বেদের অধ্যয়ন নতুন করে শুরু করেন এবং যজ্ঞোপবীত (পৈতে) ধারণের সংকল্প নেন।
- সত্যনারায়ণ ব্রত কথা: অনেক বাড়িতে ভগবান বিষ্ণুর কথা আয়োজন করা হয় এবং ব্রত রাখা হয়।
- রাখিবন্ধন: ভাই-বোনের এই পবিত্র উৎসব সারাদেশে আনন্দের সঙ্গে পালিত হয়।
- শিব পূজা: সাওয়নের শেষ দিনে বিশেষভাবে ভগবান শিবের জলাভিষেক ও পূজা করার রীতি আছে।
সাওন মাসের ধর্মীয় তাৎপর্য
সাওন মাস বিশেষভাবে ভগবান শিবকে উৎসর্গীকৃত। পুরো মাস জুড়েই শিব মন্দিরগুলিতে ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। সোমবার শিবলিঙ্গে জলাভিষেক করা এবং বেলপাতা, ধুতরা ইত্যাদি নিবেদন করা বিশেষভাবে ফলদায়ক বলে মনে করা হয়। অন্যদিকে সাওনের পূর্ণিমা সেই সকল ভক্তদের জন্য বিশেষ, যারা পুরো মাস ধরে ব্রত বা পূজার সংকল্প নিয়েছেন।
এই দিনে মানুষজন তাদের ব্রতের সমাপ্তি করেন এবং শিবের বিশেষ পূজার পাশাপাশি চন্দ্রকেও অর্ঘ্য নিবেদন করেন। কিছু কিছু জায়গায় এই দিনে বড় আকারে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে কথা, কীর্তন এবং ভান্ডারের মতো অনুষ্ঠানও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
৯ই অগাস্ট থেকে শুরু হবে ভাদ্রপদ মাস
সাওনের পর ভাদ্রপদ মাস শুরু হয়, যাকে ভাদো মাসও বলা হয়। ভাদ্রপদ মাসে কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী, হরীতালিকা तीज, গণেশ চতুর্থীর মতো গুরুত্বপূর্ণ উৎসব আসে। সাওয়নের সমাপ্তি এবং ভাদ্রপদের শুরু ধর্মীয়ভাবে একটি নতুন সূচনা বলে মনে করা হয়। তাই শ্রাবণ পূর্ণিমা কেবল সমাপ্তির প্রতীক নয়, এটি একটি নতুন অধ্যায়েরও সূচনা।