কর্ক সংক্রান্তি: এই দিনে করুন এই ৪ কাজ, প্রসন্ন হবেন সূর্যদেব!

কর্ক সংক্রান্তি: এই দিনে করুন এই ৪ কাজ, প্রসন্ন হবেন সূর্যদেব!

হিন্দু পঞ্জিকা অনুসারে, এই বছর ১৬ই জুলাই তারিখে সূর্যের গোচর কর্ক রাশিতে হতে চলেছে। জ্যোতিষশাস্ত্রে এই রাশি পরিবর্তনকে কর্ক সংক্রান্তি বলা হয়। এই সংক্রান্তি কেবল ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, জ্যোতিষশাস্ত্রীয় দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। কর্ক রাশি, সূর্যের মিত্র রাশি হিসেবে বিবেচিত হয়, তাই এই দিনে করা उपाय ও কর্ম বিশেষ ফলদায়ী বলে মনে করা হয়।

সংক্রান্তি কী এবং কেন এটি বিশেষ

সংক্রান্তি শব্দের অর্থ হল "স্থান পরিবর্তন"। যখন সূর্য এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে প্রবেশ করে, সেই সময়কে সংক্রান্তি বলা হয়। মোট ১২টি রাশিতে সূর্য প্রতি মাসে প্রবেশ করে, তাই এক বছরে ১২টি সংক্রান্তি হয়। তবে কর্ক এবং মকর সংক্রান্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়, কারণ এই দুটি সংক্রান্তিই সূর্যের দক্ষিণায়ন ও উত্তরায়নের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।

কর্ক সংক্রান্তি: দিনের গুরুত্ব ও পৌরাণিক তাৎপর্য

কর্ক সংক্রান্তি সেই সময়, যখন সূর্য মিথুন রাশি ত্যাগ করে কর্ক রাশিতে প্রবেশ করে। এই গোচরের পরে সূর্য দক্ষিণায়ণ হয়, যার অর্থ দিন ছোট হতে শুরু করে এবং রাত বড় হতে থাকে। পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, এই সময় আত্ম-চিন্তন, দান এবং তপস্যার। মনে করা হয়, এই দিনে সূর্যকে প্রসন্ন করার জন্য কিছু বিশেষ কর্ম করা অত্যন্ত শুভ।

এই চারটি কাজ করলে প্রসন্ন হন সূর্যদেব

পবিত্র নদীতে স্নান করা

কর্ক সংক্রান্তিতে গঙ্গা, যমুনা, গোদাবরী, নর্মদা-র মতো পবিত্র নদীতে স্নান করলে পাপ দূর হয় এবং পুণ্য লাভ হয়। যারা নদীর তীরে যেতে পারেন না, তাঁরা বাড়িতে স্নানের জলে গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করতে পারেন। এই স্নান আত্মিক শুদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়।

সূর্যকে অর্ঘ্য প্রদান করা

স্নানের পর তামার পাত্রে জল, তিল, চাল এবং লাল ফুল নিয়ে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য দেওয়া অত্যন্ত ফলদায়ক। এর ফলে সূর্যদেবের কৃপায় আত্মবিশ্বাস, নেতৃত্ব ক্ষমতা ও সম্মান বৃদ্ধি পায়। আরও বলা হয়, অর্ঘ্য প্রদানের মাধ্যমে কোষ্ঠীতে সূর্যের অবস্থান শক্তিশালী হয়, যা কর্মজীবন এবং স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়।

পশু-পাখিদের খাদ্য প্রদান করা

কর্ক সংক্রান্তির দিনে গরুকে সবুজ ঘাস, কুকুরকে রুটি এবং পাখিদের খাদ্য ও জল দিলে পুণ্য ফল লাভ হয়। বিশেষ করে এই দিনে কাক ও গরুকে भोजन করানো পিতৃপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য শ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। এছাড়া, পিঁপড়েকে আটা ও গুড় দেওয়ারও রীতি আছে, যা পিতৃ দোষ দূর করে।

সূর্য মন্ত্র জপ কেন বিশেষ

কর্ক সংক্রান্তিতে সূর্যদেবকে প্রসন্ন করার জন্য "ওঁ ঘৃणि সূর্যায় নমঃ" মন্ত্রটি ১০৮ বার জপ করার রীতি রয়েছে। এই মন্ত্র জপ শরীরের শক্তিকে স্থিতিশীল করে এবং মানসিক শান্তি এনে দেয়। এই জপ সূর্যকে অর্ঘ্য দেওয়ার সময় করলে আরও বেশি প্রভাবশালী হয়।

সূর্যের শক্তি জীবনের দিশা পরিবর্তন করে

জ্যোতিষে সূর্যকে আত্মা, পিতা, সরকার, উচ্চ পদ এবং আত্মবিশ্বাসের কারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যখন সূর্য শুভ অবস্থানে থাকে, তখন ব্যক্তির জীবনে মান-সম্মান, নেতৃত্ব, কর্মজীবনের উন্নতি এবং মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। কর্ক সংক্রান্তির মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে এই শুভত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।

ভবিষ্যতকে গড়ে তোলার বিশেষ সুযোগ

কর্ক সংক্রান্তি কেবল একটি জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনা নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক সুযোগও। এই দিন পুরনো কর্মের সংশোধন এবং নতুন অধ্যায় শুরু করার প্রতীক। এই দিনে করা প্রতিটি ছোট থেকে ছোট পুণ্যের কাজ ভবিষ্যতে বড় ফল দিতে পারে।

বিশ্বাসগুলির মধ্যে গভীর রহস্য লুকানো আছে

ভারতের ঐতিহ্যগুলিতে প্রতিটি দিনের নিজস্ব বিশেষত্ব রয়েছে। সংক্রান্তির মতো উৎসব বিজ্ঞান ও আধ্যাত্মিকতার এক অসাধারণ মিলন। সূর্যের গোচরের সঙ্গে যুক্ত এই সংক্রান্তি একদিকে যেমন জীবনের নতুন শুরুর ইঙ্গিত দেয়, তেমনই এটি প্রকৃতি সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রাখার গুরুত্বও শেখায়, যা প্রকৃত ধর্ম।

বিভিন্ন রাজ্যে বিশেষ আয়োজন

উত্তর ভারত থেকে দক্ষিণ ভারত পর্যন্ত, কর্ক সংক্রান্তির দিনে বিভিন্ন মন্দিরে বিশেষ পূজা, দান এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান করা হয়। অনেক স্থানে সূর্য মন্দিরগুলিতে সারাদিন ধরে ভজন-কীর্তনের আয়োজন করা হয় এবং গণভোজনও করানো হয়।

Leave a comment