ইংল্যান্ডের মাটিতে কোহলি-উত্তর যুগে ইতিহাস গড়লেন শুভমান

ইংল্যান্ডের মাটিতে কোহলি-উত্তর যুগে ইতিহাস গড়লেন শুভমান
সর্বশেষ আপডেট: 30-11--0001

ভারতীয় ক্রিকেটের এক যুগের সমাপ্তি হয়েছে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির অবসরের মধ্য দিয়ে। সেই পর্ব পেরিয়ে, নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল শুভমান গিলকে সামনে রেখেই। বিদেশের কঠিন পরিবেশে, ঐতিহাসিক ইংল্যান্ড সফর দিয়ে শুরু হয়েছে গিলের অধিনায়কত্বে এক নতুন ভারত। স্লিপে ক্যাচ ফেলা, ইনিংসে ধস, ভঙ্গুর মিডল অর্ডার—সব সংকট পেছনে ফেলে ইংল্যান্ডের মাটিতে গিল যেভাবে দলকে নেতৃত্ব দিলেন, তা নিঃসন্দেহে বিরাট ও দ্রাবিড় পরবর্তী সময়ের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা। শুরুতেই তিনি প্রমাণ করলেন—তিনি কেবল উত্তরসূরি নন, ভবিষ্যতের স্থপতি।

বার্মিংহ্যামে ব্যাট হাতে বজ্রের মতো আছড়ে পড়লেন গিল

চাপের মুহূর্তে যেভাবে শুভমান গিল ব্যাট ধরলেন, তা ছিল একেবারে আলাদারকম। প্রথম ইনিংসে দল যখন ব্যাকফুটে, তখন ইংলিশ পেসারদের ছত্রভঙ্গ করে ২৬৯ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেললেন গিল। এই ইনিংস ছিল শুধুই রান সংগ্রহ নয়—তা ছিল এক অন্তর্নিহিত বার্তা, যে তিনি দায়িত্ব নিতে পারেন, সামনে থেকে দলকে টানতে পারেন। ত্রিশতরান না পেলেও, এই ইনিংসই টেস্ট ক্রিকেটে তাঁর স্থায়িত্বের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে দিল।

কোহলির ‘চার নম্বর’ এখন গিলের একচ্ছত্র অধিকার

টেস্ট ক্রিকেটে চার নম্বর পজিশন মানে এক শ্বাসরুদ্ধকর ভার—যা এতদিন কোহলির ছিল। কিন্তু মাত্র দুটো টেস্টেই গিল প্রমাণ করে দিলেন, তিনি এই দায়িত্বের জন্য প্রস্তুত। প্রতিপক্ষের স্লেজিং, উইকেটের সিম মুভমেন্ট, বিপর্যয়ের আবহ—সব সামলেই যেভাবে নিজেকে মেলে ধরলেন, তাতে ক্রিকেটপ্রেমীদের চোখে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, ভারতীয় ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ তিনি হয়ে উঠতে চলেছেন।

এজবাস্টনের আকাশ কাঁপিয়ে গিলের ডাবল, গাভাসকরের কণ্ঠে আবেগ

২৩ বছর আগে রাহুল দ্রাবিড় বিলেতে করেছিলেন দ্বিশতরান। এরপর দীর্ঘ শূন্যতা। সেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটালেন শুভমান গিল। গাভাসকর, যিনি নিজেই এক কিংবদন্তি, কমেন্ট্রি বক্সে আবেগে ভেসে গিয়ে বললেন, “শব্দ নেই এই ইনিংসের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য।” তিনি এটাও বললেন—পরের দ্বিশতরানের জন্য যেন আর এত দীর্ঘ প্রতীক্ষা না করতে হয় ভারতীয় ক্রিকেটকে।

প্রতিভার আগুনে জ্বলছে তরুণ ভারত, বলছেন গাভাসকর

শুধু গিল নন, তাঁর পাশে উঠে এসেছে আরও একাধিক নাম। যশস্বী জয়সওয়াল, রাহুল ত্রিপাঠী কিংবা রজত পাটিদার—যারা প্রতিদিন প্রমাণ করছে, ভবিষ্যতের ভারত অনেকটাই নিরাপদ হাতে। গাভাসকরের মতে, এই তরুণদের হাতেই ভারতের টেস্ট ক্রিকেট আবারও বিশ্বসেরার সিংহাসন ছুঁতে পারবে।

গিলের কথার প্রমাণ তাঁর পরিসংখ্যানে

সিরিজ শুরু হওয়ার আগেই ঘোষণা করেছিলেন, তিনিই হবেন সর্বাধিক রান সংগ্রাহক। অনেকেই তা তখন নিছক আত্মবিশ্বাস বলেই মনে করেছিলেন। কিন্তু একের পর এক ম্যাচে দৃঢ় ব্যাটিংয়ের মাধ্যমে গিল সেই কথাকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সিরিজে তিনিই সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। এবং সেটা করেছেন একবারও অহং না দেখিয়ে, নিঃশব্দ দক্ষতায়।

নেতৃত্বেও নজিরবিহীন সাফল্য, গড়লেন রেকর্ড শুভমান

তরুণ অধিনায়ক হিসেবে বিদেশ সফরে এত বড় ইনিংস এবং দলের পুনরুত্থান—এ এক বিরল ঘটনা। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে নয়, নেতৃত্বেও গিল দেখিয়ে দিলেন তিনি কতটা পরিণত। তাঁর অধীনে ভারতীয় দল যেন এক নতুন গতি ও আত্মবিশ্বাস খুঁজে পেয়েছে। ক্রিকেটবিশ্বে এখন প্রশ্ন একটাই—শুভমান কি ‘নেক্সট বিগ থিং’ হয়ে উঠছে?

Leave a comment