শুভমন গিলের ঝলমলে ইনিংস: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৯ রানের রেকর্ড

শুভমন গিলের ঝলমলে ইনিংস: ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৬৯ রানের রেকর্ড

ভারতীয় টেস্ট দলের অধিনায়ক শুভমন গিল ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বার্মিংহামে খেলা দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচের প্রথম ইনিংসে অসাধারণ ২৬৯ রান করে রেকর্ড গড়েছেন। এই সিরিজে গিল দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন এবং এখন পর্যন্ত তিনটি ইনিংসে ৪২৪ রান করেছেন।

স্পোর্টস নিউজ: ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে বার্মিংহামে খেলা দ্বিতীয় টেস্টে ভারতীয় অধিনায়ক শুভমন গিল ঐতিহাসিক ইনিংস খেলে ক্রিকেট প্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছেন। গিল অধিনায়ক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব দারুণভাবে পালন করে ২৬৯ রানের এক অসাধারণ ইনিংস খেলেন, যা অনেক পুরনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। তাঁর এই বিশাল ইনিংসের সুবাদে টিম ইন্ডিয়া প্রথম ইনিংসে ৫৮৭ রানের বিশাল স্কোর গড়ে ইংল্যান্ডের উপর চাপ সৃষ্টি করেছে।

গিল তাঁর ৩৭৮ বলের ইনিংসে ৩০টি চার এবং ৩টি ছক্কার সাহায্যে এই স্কোর করেন। বিশেষ বিষয় হল, গিল তাঁর অধিনায়কত্বে সংযম এবং আগ্রাসনের এক অদ্ভুত মিশ্রণ দেখিয়েছেন, যা দীর্ঘদিন মনে রাখা হবে।

অধিনায়ক হিসেবে গিল ভেঙেছেন दिग्গজদের রেকর্ড

এই ইনিংসের সাথে শুভমন গিল বিরাট কোহলিকে পেছনে ফেলেছেন। কোহলি অধিনায়ক হিসেবে ২৫৪ রান করেছিলেন, কিন্তু গিল ২৬৯ রানের ইনিংস খেলে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের হয়ে অধিনায়কত্বে সর্বাধিক রান করা খেলোয়াড় হয়েছেন। এছাড়াও, গিল ইংল্যান্ডের মাটিতে ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক।

গিল ৩১১ বলে ডাবল সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন এবং এই সময়ে তিনি বিদেশে ২৫০ রানের গণ্ডি অতিক্রম করা চতুর্থ ভারতীয় অধিনায়ক হন। তাঁর আগে বীরেন্দ্র শেহবাগ, রাহুল দ্রাবিড় এবং মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন বিদেশি মাটিতে ২৫০+ রান করেছিলেন, তবে অধিনায়ক হিসেবে গিলের এই কৃতিত্ব ঐতিহাসিক হিসেবে বিবেচিত হবে।

সবচেয়ে কম বয়সী অধিনায়কদের মধ্যে গিল

গিল ২৫ বছর ২৯৮ দিন বয়সে এই কীর্তি গড়েছেন। এই বয়সে ডাবল সেঞ্চুরি করা তিনি ভারতের দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম অধিনায়ক। তাঁর আগে নবাব পতৌদি ২৩ বছর ৩৯ দিন বয়সে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ডাবল সেঞ্চুরি করেছিলেন। বিশ্বে সবচেয়ে কম বয়সে অধিনায়ক হিসেবে ইংল্যান্ডে ডাবল সেঞ্চুরি করার রেকর্ড এখনও দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রেম স্মিথের (২২ বছর ১৭৫ দিন) দখলে, তবে গিল এশিয়ার দিক থেকে এই মাইলফলক অর্জন করেছেন।

সেনা দেশগুলোতেও ইতিহাস সৃষ্টি

শুভমন গিল প্রথম এশীয় অধিনায়ক যিনি সেনা দেশগুলোতে (ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা) ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন। এর আগে শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশান ১৯৩ রানের ইনিংস খেলেছিলেন, কিন্তু গিল এই সংখ্যাটি অনেক পিছনে ফেলে দিয়েছেন। এশিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেনা দেশগুলোতে সর্বোচ্চ স্কোরের কথা বললে, গিল তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গেছেন। তাঁর আগে শুধু জাহির আব্বাস (২৭৪ রান) এবং জাভেদ মিয়াঁদাদ (২৭১ রান) রয়েছেন।

ইংল্যান্ডে ভারতীয়দের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর

গিল ইংল্যান্ডে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের করা সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ডও নিজের নামে করেছেন। এর আগে এই রেকর্ড সুনীল গাভাসকারের দখলে ছিল, যিনি ১৯৭৯ সালে ওভালে ২২১ রান করেছিলেন। গিল ২২২ রান করে এই ঐতিহাসিক কীর্তি ভেঙে দেন। গিলের ইনিংসে সঙ্গ দেন রবীন্দ্র জাদেজা এবং যশস্বী জয়সওয়াল। জাদেজা ৮২ রানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন, যেখানে জয়সওয়াল ৫৪ রান করেন।

গিল এবং জাদেজার মধ্যে ষষ্ঠ উইকেটের জন্য ২০৩ রানের গুরুত্বপূর্ণ জুটি হয়, যা ভারতের ইনিংসকে শক্তিশালী করে। এরপর গিল ওয়াশিংটন সুন্দরকে (অপ্রতিরোধ্য ৪৩) সঙ্গে নিয়ে জুটি গড়ে দলকে ৫৮৭ রানে পৌঁছে দেন। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় ইংল্যান্ড ৩ উইকেটের বিনিময়ে ৭৭ রান করে এবং তারা এখনও ভারত থেকে ৫১০ রানে পিছিয়ে। ভারতীয় বোলাররা শুরুতেই ধাক্কা দিয়ে ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপকে বিপদে ফেলে দেয়।

এজবাস্টনেও নাম লেখালেন

২৬৯ রানের এই ইনিংসের সাথে গিল এজবাস্টনে সবচেয়ে বেশি রান করা পঞ্চম ব্যাটসম্যান হয়েছেন। এই তালিকায় অ্যালিস্টার কুক (২৯৪), পিটার মে (২৮৫*), গ্রেম স্মিথ (২৭৭) এবং জাহির আব্বাস (২৭৪) অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। গিলের এই ইনিংস প্রমাণ করে যে তিনি শুধু একজন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানই নন, বরং ভারতকে আগামী এক দশক ধরে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। তাঁর ব্যাটিংয়ে দেখা যাওয়া আত্মবিশ্বাস এবং নেতৃত্ব ক্ষমতা আগামী দিনে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য খুবই শুভ লক্ষণ।

Leave a comment