ইসলামের কলঙ্ক মন্তব্যে শোরগোল

ইসলামের কলঙ্ক মন্তব্যে শোরগোল

জন্মাষ্টমীর দিন ঘরোয়া পুজোকে কেন্দ্র করে ফের বিতর্কে নুসরত জাহান। টলিপাড়ার অন্যতম বিতর্কিত নায়িকা হিসেবে পরিচিত নুসরতকে আবারও ট্রোলিংয়ের নিশানায় টেনে এনেছে এক শ্রেণির ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। অভিযোগ উঠেছে, মুসলিম হয়েও হিন্দুদের উৎসবে তিনি অংশ নেন, তাই তাঁকে ‘ইসলামের কলঙ্ক’ বলে কটাক্ষ করা হয়েছে।

সব ধর্মে আস্থা রাখেন নুসরত

প্রথম থেকেই নুসরত জাহান স্পষ্ট জানিয়ে এসেছেন, তিনি সব ধর্মকে সমানভাবে শ্রদ্ধা করেন। ইদ হোক বা দুর্গাপুজো, প্রতিটি উৎসবেই তাঁর উপস্থিতি ধরা পড়েছে। শাড়ি পরে অঞ্জলি দেওয়া থেকে শুরু করে রোজা রেখে ইদের নামাজ পড়া—দু’টোই তিনি নিষ্ঠাভরে পালন করেন। তবে এই ভিন্নধর্মী মানসিকতাই তাঁকে বারবার কটাক্ষের মুখে ফেলেছে।

জন্মাষ্টমীর আয়োজন ঘিরে কটাক্ষ

এই বছর যশ দাশগুপ্ত ও নুসরত একসঙ্গে তাঁদের বাড়িতে জন্মাষ্টমীর বিশেষ আয়োজন করেছিলেন। লাল কাপড়ে সাজানো কৃষ্ণমূর্তি, ফুলে সজ্জিত পুজোর মঞ্চ আর ভোগের থালা সাজানো—সব মিলিয়ে পূর্ণাঙ্গ আচারেই সম্পন্ন হয় উৎসব। কিন্তু সেই ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হতেই শুরু হয় ট্রোলিং। কেউ প্রশ্ন তোলেন, “ইদকে কি এমনভাবে পালন করতে দেখা যায়?” আবার কেউ সরাসরি তাঁকে ‘মুসলিম জাতির কলঙ্ক’ বলে আক্রমণ করেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটিজেনদের রোষ

ছবির নিচে ভিড় জমে নানা মন্তব্যের। একজন লেখেন—“আপনি কি মুসলিম নন?” অন্যজন কটাক্ষ করেন—“ঠাকুরকে ব্লার করে নিজেকে বেশি দেখাচ্ছেন।” এমনকি কেউ কেউ দাবি করেন, তিনি হিন্দুধর্ম গ্রহণ করে ফেলেছেন। এই ধারাবাহিক কটাক্ষই প্রমাণ করে, ব্যক্তিগত ধর্মবিশ্বাস আজও সমাজের একাংশে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

‘ট্রোল’কে পাত্তা দেন না নুসরত

তবে এইসব কটাক্ষ নিয়ে একেবারেই বিচলিত নন নায়িকা। আগেও দুর্গাপুজোর সিঁদুরখেলার ছবি পোস্ট করে তিনি ট্রোলের শিকার হয়েছিলেন। সিঁথিতে সিঁদুর পরার জন্য তাঁকে ‘ধর্মবিরোধী’ বলা হয়েছিল। কিন্তু তাতেও নুসরত বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করেননি। তাঁর বক্তব্য, তিনি সবসময়ই বিশ্বাস করেন ধর্ম মানুষকে ভেদ নয়, মিলনের বার্তা দেয়।

যশ-নুসরতের সম্পর্কের আলোচনাও জমে ওঠে

জন্মাষ্টমীর দিন শুধুই ধর্মীয় বিতর্ক নয়, আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে যশ-নুসরতের সম্পর্কও। গত কয়েক মাস ধরে তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে বলে টিনসেল টাউনে গুঞ্জন চলছিল। একসময় আলাদা থাকছিলেন বলেও শোনা যায়। তবে জন্মাষ্টমীর ছবিতে দুজনকে একসঙ্গে দেখে ভক্তরা খানিক স্বস্তি পান।

সোশ্যাল মিডিয়ার ধোঁয়াশা কাটল?

আড়ি মুক্তির পর থেকেই যশ-নুসরতের ব্যক্তিগত সম্পর্কে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে খবর ছড়িয়েছিল। তবে জন্মাষ্টমীর উৎসবে তাঁদের একসঙ্গে উপস্থিতি সেই গুঞ্জনে ভাঁটা দেয়। যদিও পুজোর ছবিতে দুজনকে একসঙ্গে পোজ দিতে দেখা যায়নি, তবু একই ঘরে, একই আচার পালনের দৃশ্য ভক্তদের মনে জল্পনা জাগায়—তাঁদের সম্পর্ক কি আবার স্বাভাবিক হচ্ছে?

সন্তানের ভূমিকা আলোচনায়

নুসরতের ছেলে ঈশানও জন্মাষ্টমীর আয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গা পেয়েছে। মা-ছেলের ছবি শেয়ার করে অভিনেত্রী জানান, সন্তান তাঁর জীবনের সর্বাধিক শক্তি। নেটিজেনদের অনেকেই লিখেছেন, “মায়ের জন্য ঈশানের বিশেষ আয়োজন দারুণ লাগল।” ফলে বিতর্কের মাঝেও এক উজ্জ্বল দিক উঠে আসে, নুসরত তাঁর পারিবারিক বন্ধনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন।

ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রশ্ন

এই ঘটনাকে ঘিরে বড় প্রশ্ন উঠছে—একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও উৎসব পালনের স্বাধীনতা কোথায় গিয়ে সীমাবদ্ধ হচ্ছে? কেবল মুসলিম হওয়ার কারণে কি তিনি অন্য ধর্মীয় আচার মানতে পারবেন না? নুসরত বহুবার বলেছেন, ধর্ম তাঁর কাছে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। অথচ সমাজের একাংশ এখনও তা মেনে নিতে নারাজ।

বিতর্কে বরাবরের মতো অনড় নায়িকা

জন্মাষ্টমীর এই বিতর্কে স্পষ্ট বোঝা গেল, নুসরত আগের মতোই অনড়। তিনি যেমন নিজের মতো জীবনযাপন করেন, তেমনি ভক্তদেরও জানান, ট্রোলিংয়ে কান না দিয়ে তিনি নিজের বিশ্বাসের পথে চলবেন। নুসরত জাহান যে কেবল টলিপাড়ার অভিনেত্রী নন, বরং সমাজে ভিন্ন মানসিকতার প্রতীক—এই বিতর্ক আবারও সেটাই প্রমাণ করে দিল।

Leave a comment