সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্যাক্টরিতে বিস্ফোরণ, শেয়ারে বড় পতন

সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্যাক্টরিতে বিস্ফোরণ, শেয়ারে বড় পতন

ফার্মা সেক্টরের কোম্পানি সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের শেয়ারগুলিতে সোমবার হঠাৎ বড় পতন দেখা যায়। তেলঙ্গানার সঙ্গারেড্ডি জেলার কোম্পানিটির একটি ইউনিটে বিস্ফোরণের খবর বাজারে আতঙ্ক সৃষ্টি করে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ে শেয়ারের দামে। সোমবার বিএসই-তে কোম্পানির শেয়ার প্রায় ১৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

শেয়ার বাজার খোলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের স্টক বড় পতনের সাথে 48.82 টাকায় নেমে আসে, যা আগের দিনের বন্ধের তুলনায় 11.53 শতাংশের পতন দেখায়। বেলা তিনটা পর্যন্ত স্টক এই স্তরের কাছাকাছি ট্রেড করতে থাকে। বিনিয়োগকারীদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হল, কোম্পানির এই শেয়ারটি 1 আগস্ট 2024 তারিখে তৈরি হওয়া 52-সপ্তাহের সর্বোচ্চ 69.89 টাকা থেকে প্রায় 32 শতাংশ নিচে নেমে এসেছে।

তেলেঙ্গানা ইউনিটে দুর্ঘটনা, আট জনের মৃত্যু

খবর অনুযায়ী, সোমবার সকালে তেলঙ্গানার সঙ্গারেড্ডি জেলার পাশমিলারাম শিল্পাঞ্চলে অবস্থিত সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্যাক্টরিতে জোরালো বিস্ফোরণ হয়। এই দুর্ঘটনা এতটাই গুরুতর ছিল যে প্রাথমিক প্রতিবেদনে আট জনের মৃত্যু এবং অনেকের আহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার সময় ইউনিটে কর্মরত অনেক শ্রমিকের আটকে থাকার আশঙ্কাও করা হচ্ছে, যাদের উদ্ধারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে।

ফায়ার ব্রিগেড ও পুলিশের দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য দমকলের গাড়ি আনা হয়। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, উদ্ধার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে এবং আহত কর্মীদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।

বিস্ফোরণের কারণ এখনো স্পষ্ট নয়

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এই ঘটনাকে সম্ভাব্য বিস্ফোরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, বিস্ফোরণের আসল কারণ কী ছিল, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সুরক্ষা বিধির অবহেলা, গ্যাস লিক অথবা যন্ত্রপাতির কারিগরি ত্রুটি – এই সব সম্ভাবনার তদন্ত চলছে।

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের অবস্থা দেখে এটি বিস্ফোরণ বলেই মনে হচ্ছে, তবে ফরেনসিক দলের রিপোর্টের পরেই নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব হবে।

কর্মচারীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন

এই ঘটনা আবারও ফার্মাসিউটিক্যাল ইউনিট এবং ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টগুলিতে কর্মীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পাশমিলারাম শিল্পাঞ্চলে আগেও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তবে এই ধরনের গুরুতর ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট যে নিরাপত্তা বিধিগুলি পালনে অনেক সময় ঢিলেমি দেখা যায়।

স্থানীয় শ্রমিক সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনগুলি এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং প্রশাসনের কাছে আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলিকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। একই সাথে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও আবেদন জানানো হয়েছে।

বাজারে অস্থিরতা

এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই সোমবার শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়। বিশেষ করে, ফার্মা সেক্টরের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ নিয়ে উদ্বেগ দেখা যায়। প্রাথমিক ট্রেডিংয়ের সময়ই কোম্পানির স্টকে বড় পতন রেকর্ড করা হয়।

ব্রোকারেজ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যতক্ষণ না দুর্ঘটনার পুরো তথ্য সামনে আসছে এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত বাজারে এই স্টক নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকবে। যদিও, কোম্পানির মৌলিক বিষয়গুলি দীর্ঘ সময় ধরে শক্তিশালী ছিল, তবে এমন দুর্ঘটনা স্বল্প মেয়াদে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।

বাজারের উপরও প্রভাব

সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের প্রভাব বাজারের অন্য অংশেও দেখা যায়। সোমবার সেনসেক্সও প্রায় 459 পয়েন্টের পতনের সাথে 83,599.24 স্তরে পৌঁছে যায়। যদিও, এই পতনের পিছনে অন্যান্য বৈশ্বিক কারণগুলিও দায়ী ছিল, তবে সিগাচির মতো মিডক্যাপ শেয়ারের পতন মিডক্যাপ ইনডেক্সেও চাপ সৃষ্টি করে।

কোম্পানির এখন পর্যন্ত পারফরম্যান্স

সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজ একটি ফার্মাসিউটিক্যাল এক্সিপিয়েন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি, যা প্রধানত মাইক্রোক্রিস্টালাইন সেলুলোজ (এমসিসি) উৎপাদন করে। এটি ভারতের অন্যতম প্রধান এমসিসি উৎপাদনকারী কোম্পানি হিসাবে বিবেচিত হয়। কোম্পানির তেলঙ্গানা এবং গুজরাটে উৎপাদন ইউনিট রয়েছে।

গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ার ভালো পারফর্ম করেছে এবং 1 আগস্ট 2024 তারিখে এর স্টক 69.89 টাকার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনার কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি হয়েছে এবং এখন স্টক প্রায় 32 শতাংশ কমে গেছে।

কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি আসেনি

ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও, সিগাচি ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রেস রিলিজ বা বিবৃতি আসেনি। বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির পক্ষ থেকে ঘটনার ব্যাখ্যা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার জন্য অপেক্ষা করছেন। বাজার বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কোম্পানিকে দ্রুত পরিস্থিতি স্পষ্ট করতে হবে, যাতে বাজারে তৈরি হওয়া অস্থিরতা কিছুটা কমানো যায়।

তদন্ত ও উদ্ধার অভিযান চলছে

স্থানীয় প্রশাসন এবং শিল্প নিরাপত্তা বিভাগের দলগুলি ফ্যাক্টরি পরিদর্শন শুরু করেছে। আপাতত ঘটনাস্থল সিল করে দেওয়া হয়েছে এবং সমস্ত রাসায়নিক ও যন্ত্রপাতির পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই সাথে, ফ্যাক্টরির আশেপাশের অনেক ইউনিটে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যাতে অন্য কোনো ঘটনা না ঘটে।

Leave a comment