সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর মামলা টাটাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্যের বড় ধাক্কা!

সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর মামলা টাটাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাজ্যের বড় ধাক্কা!

সিঙ্গুরের টাটা ন্যানো কারখানা যাত্রার এক গভীর কাহিনি। জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে প্রকল্প ভেস্তে যাওয়া, আর সেই জমি ফেরত দেওয়ার পর রাজ্য ও টাটাদের মধ্যে ক্ষতিপূরণের প্রশ্নে উত্তেজনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। টাটা গোষ্ঠী রাজ্যের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও রাজ্য সরকারের টানাটানির মধ্যেই মামলাটি আদালতের দ্বারে পৌঁছেছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, টাটাদের দাবি অযৌক্তিক ও বেশি, ফলে ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি নয় তারা। এই বিরোধের জেরে মামলা গড়ায় আদালতে, যা অনেক দিন ধরেই রাজনৈতিক ও আইনি মহলে সরব হয়ে উঠেছে।

আদালতের মধ্যস্থতা ও আরবিট্রেটর নিয়োগ

বিচারালয়ের বোঝা হালকা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট এক ধরনের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিন সদস্যের আরবিট্রেটর বোর্ড গঠন করে। এই বোর্ডের কাজ ছিল টাটাদের ও রাজ্যের মধ্যে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করা। কিন্তু আরবিট্রেটররা টাটাদের পক্ষে রায় দেয়, যার ফলে রাজ্য সরকারের প্রতি ক্ষতিপূরণের নির্দেশ জারি হয়। যদিও এই রায়ে রাজ্য সন্তুষ্ট নয়, কারণ তারা অভিযোগ করে বোর্ডের এক বিচারপতি পক্ষপাতদুষ্ট, যা মামলার গতি ও পরিণতিতে অশান্তি সৃষ্টি করে।

রাজ্যের আপত্তি ও হাইকোর্টের রায়

রাজ্য সরকার এই পক্ষপাতদুষ্ট বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তোলে। তারা দাবি করে, ওই বিচারপতি নিয়মবহির্ভূতভাবে টাটাদের আমন্ত্রণে একাধিকবার নাগপুরে গিয়েছেন। রাজ্যের এই আপত্তি উচ্চ আদালতে নথিভুক্ত হয় এবং তারা হাইকোর্টে আপিল করে। তবে হাইকোর্ট রাজ্যের আপিল খারিজ করে, যা রাজ্যের পক্ষে এক বড় ধাক্কা। এর পরেই রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়, আশা করে যে তাদের আপত্তির বিষয়টি শীর্ষ আদালত বিবেচনা করবেন।

সুপ্রিম কোর্টে মামলার শোনানি

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটি উঠে। বিচারপতি পি নরসিমহা ও অতুল এস চান্দুরকরের সামনে দুই পক্ষের আইনজীবী তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। রাজ্যের পক্ষে কপিল সিবল কঠোর ভাষায় বলেন, “এই ধরনের পক্ষপাতদুষ্টতা আইনি ন্যায়বিচারের স্বার্থে অত্যন্ত ক্ষতিকর।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, যে বিচারপতি টাটাদের আমন্ত্রণে একাধিকবার গেছেন, তার সঙ্গে এই মামলা ন্যায্য বিচার হবে না।

টাটাদের আইনজীবীর তীব্র পাল্টা যুক্তি

বিকল্পপক্ষ টাটাদের আইনজীবী মুকুল রোহতগি এই অভিযোগকে নিন্দনীয় ও অসাংবিধানিক হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি বলেন, “একজন বিচারপতির বিরুদ্ধে এই ধরনের অবাঞ্ছিত অভিযোগ সম্পূর্ণ বেআইনি এবং এটা আদালতের প্রতি অসম্মানজনক।” তিনি সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন করেন, রাজ্যের এই আপত্তি বাতিল করে রাজ্যকে জরিমানা করার নির্দেশ দেওয়া হোক। টাটাদের আইনজীবী এই বিষয়ে আদালতের নিকট যথাযথ নথিপত্রও উপস্থাপন করেন।

আদালতের তীব্র মন্তব্য ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

দুই বিচারপতি কপিল সিবলকে সতর্ক করেন যে, যদি দেখা যায় অভিযোগটি ভিত্তিহীন বা অন্যায্য, তাহলে রাজ্য সরকারকে বড় ধরনের জরিমানা করা হবে। এই কঠোর সতর্কতা শুনে সিবল তাদের নথিপত্র ফেরত নেন। এর মধ্যেই মামলার ভবিষ্যত নিয়ে কৌতূহল বেড়ে যায়। রাজ্যের জন্য এটা নিঃসন্দেহে এক আইনি চ্যালেঞ্জ, কারণ সুপ্রিম কোর্টের কঠোর মনোভাব স্পষ্ট।

চরম পরিস্থিতি ও আদালতের চূড়ান্ত রায়

মুকুল রোহতগি আবারও নিজেদের অবস্থান পোক্ত করার চেষ্টা করেন, রাজ্য সরকারের আপত্তিকে ‘অবৈধ’ বলে উল্লেখ করে বড় জরিমানা দাবী করেন। শীর্ষ আদালত এই মামলায় রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয়। এর ফলে রাজ্যের জন্য একটি বড় ধাক্কা এসেছে, কারণ এই রায় রাজ্যের আইনি অবস্থান দুর্বল করে দিয়েছে। এদিকে টাটা গোষ্ঠীর জন্য এটা বড় সাফল্যের বিষয় হিসেবে ধরা হচ্ছে। এই রায়ের পর রাজ্যের কী পদক্ষেপ নেবে তা এখন দেখার বিষয়।

Leave a comment