শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা আজকাল অনেকেরই প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে। বিনিয়োগের সবচেয়ে সহজ এবং সুশৃঙ্খল উপায় হল এসআইপি (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান)। এসআইপির মাধ্যমে আপনি প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে দীর্ঘ মেয়াদে একটি বৃহৎ তহবিল তৈরি করতে পারেন।
আজকাল, অধিকাংশ মানুষই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে যারা অল্প অল্প করে প্রতি মাসে বিনিয়োগ করে ভবিষ্যতের জন্য একটি বড় তহবিল তৈরি করতে চান, তাদের জন্য এসআইপি বা সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান একটি চমৎকার বিকল্প হিসেবে উঠে এসেছে। এর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল, আপনি এতে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন এবং ধীরে ধীরে একটি ভালো তহবিল তৈরি করতে পারেন।
এসআইপি-র ফর্মুলা কিভাবে কাজ করে
এসআইপি-তে বিনিয়োগকারী একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রতি মাসে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড স্কিমে জমা করেন। সেই স্কিমের অর্থ শেয়ার বাজার এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করা হয়। এই অর্থ চক্রবৃদ্ধি হারে (compounding) প্রতি বছর বাড়তে থাকে। আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করেন এবং বার্ষিক রিটার্ন ১২ শতাংশ ধরে নেন, তাহলে আপনি ভালো রিটার্ন পেতে পারেন।
১০ লক্ষ টাকা জমা করার জন্য কত এসআইপি প্রয়োজন
এবার প্রশ্ন হল, যদি কেউ ১০ লক্ষ টাকার তহবিল তৈরি করতে চায়, তাহলে প্রতি মাসে কত টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এবং কত বছর ধরে বিনিয়োগ করতে হবে। নিচে তিনটি ভিন্ন এসআইপি অ্যামাউন্টের উদাহরণ দেওয়া হলো:
যদি আপনি প্রতি মাসে ২০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন
রিটার্ন অনুমান: বার্ষিক ১২ শতাংশ
সময়কাল: ১৬ বছর
মোট বিনিয়োগ: ৩,৮৪,০০০ টাকা
রিটার্ন: ৭,০৭,৬১৯ টাকা
মোট তহবিল: প্রায় ১০,৯১,৬১৯ টাকা
প্রতি মাসে মাত্র ২০০০ টাকা বিনিয়োগ করে ১৬ বছর পর আপনি ১০ লক্ষ টাকার বেশি তহবিল তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার মূলধন কম, তবে সময় বেশি দিতে হবে।
যদি আপনি প্রতি মাসে ৩০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন
রিটার্ন অনুমান: বার্ষিক ১২ শতাংশ
সময়কাল: ১৩ বছর
মোট বিনিয়োগ: ৪,৬৮,০০০ টাকা
রিটার্ন: ৬,০৫,৫০১ টাকা
মোট তহবিল: প্রায় ১০,৭৩,৫০১ টাকা
৩০০০ টাকা মাসের এসআইপি করলে ১০ লক্ষের অঙ্ক ছুঁতে ১৩ বছর সময় লাগবে। এই উদাহরণে বিনিয়োগ কিছুটা বেশি, কিন্তু সময় কম লাগছে।
যদি আপনি প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা বিনিয়োগ করেন
রিটার্ন অনুমান: বার্ষিক ১২ শতাংশ
সময়কাল: ১০ বছর
মোট বিনিয়োগ: ৬ লক্ষ টাকা
রিটার্ন: ৫,২০,১৭৯ টাকা
মোট তহবিল: প্রায় ১১,২০,১৭৯ টাকা
৫০০০ টাকার এসআইপি করলে আপনি ১০ বছরেই ১০ লক্ষের বেশি টাকার তহবিল তৈরি করতে পারেন। এখানে আপনার মাসিক বিনিয়োগের পরিমাণ কিছুটা বেশি, কিন্তু সময় কম লাগবে এবং রিটার্নও ভালো পাওয়া যাবে।
বাজারের উপর নির্ভর করে মুনাফা
এসআইপির মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে রিটার্ন সম্পূর্ণরূপে বাজারের পারফরম্যান্সের উপর নির্ভর করে। বিনিয়োগের সময় যত বেশি হবে, চক্রবৃদ্ধির প্রভাব তত বেশি দেখা যাবে। সাধারণত, মিউচুয়াল ফান্ড থেকে বার্ষিক ১২ থেকে ১৪ শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যেতে পারে, তবে এটি নিশ্চিত নয়।
ছোট বিনিয়োগ থেকেও তৈরি হতে পারে বড় তহবিল
এটা স্পষ্ট যে, যদি কারো কাছে বেশি পরিমাণ অর্থ না থাকে, তবেও তিনি ছোট ছোট বিনিয়োগের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি বড় তহবিল তৈরি করতে পারেন। সময় এবং ধৈর্য ধরে বিনিয়োগ করলে, ২০০০ টাকা প্রতি মাসের এসআইপি থেকেও আপনি ১০ লক্ষ টাকার তহবিল তৈরি করতে পারেন।
এসআইপির বৈশিষ্ট্য কি কি?
- প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা সহজ
- অটো ডেবিট-এর মাধ্যমে বিনিয়োগের সুবিধা
- দীর্ঘ মেয়াদে ভালো রিটার্ন
- ট্যাক্স সেভিং ফান্ডে বিনিয়োগ করলে ট্যাক্স ছাড় পাওয়া যায়
- চক্রবৃদ্ধির মাধ্যমে দ্রুত রিটার্ন বাড়ে
এসআইপি সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
- যত দ্রুত শুরু করবেন, তত সুবিধা হবে
- সময়ের সাথে এসআইপির পরিমাণ বৃদ্ধি করাও একটি ভালো উপায়
- দীর্ঘ সময় ধরে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি কমে যায়
- প্রতি মাসের বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখা জরুরি