সোনীপতের NH-44-এর ৫টি ব্ল্যাক স্পটে তৈরি হবে ফুট ওভারব্রিজ

সোনীপতের NH-44-এর ৫টি ব্ল্যাক স্পটে তৈরি হবে ফুট ওভারব্রিজ

সোনিপাতের কুন্ডলী-গান্নৌর NH-44-এর পাঁচটি ব্ল্যাক স্পটে এবার ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করা হবে। মন্ত্রকের অনুমোদন পাওয়ার পর NHAI শীঘ্রই কাজ শুরু করবে। শ্রমিক ও পথচারীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এবং সড়ক নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হবে।

হরিয়ানা: সোনিপাতের কুন্ডলী-গান্নৌর জাতীয় সড়ক-44-এ ক্রমাগত দুর্ঘটনা কমাতে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। আট মাস দেরির পর কেন্দ্র মন্ত্রক পাঁচটি ব্ল্যাক স্পটে ফুট ওভারব্রিজ (FOB) তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। গত বছর ডিসেম্বরে NHAI এবং পুলিশ বিভাগ এই স্থানগুলি চিহ্নিত করে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। শ্রমিক ও পথচারীদের হাইওয়ে পার হওয়ার সময় প্রাণহানির ঘটনা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার পর এবার NHAI শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু করবে।

আট মাস পর সবুজ সংকেত

গত বছর ডিসেম্বরে NHAI এবং পুলিশ বিভাগ একসঙ্গে NH-44-এর ব্ল্যাক স্পটগুলি চিহ্নিত করেছিল। সড়ক নিরাপত্তা কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে এই জায়গাগুলিতে পথচারীদের নিরাপত্তার জন্য ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করা জরুরি। তবে মন্ত্রকের অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি। প্রায় আট মাস ধরে প্রস্তাবটি আটকে ছিল। অবশেষে এই স্থানগুলিতে এফওবি নির্মাণের সবুজ সংকেত পাওয়া গেছে।

কোথায় ফুট ওভারব্রিজ তৈরি হবে

কুন্ডলী থেকে গান্নৌর পর্যন্ত পাঁচটি প্রধান স্থানে পথচারী উপরের সেতু তৈরি করা হবে। এর মধ্যে ড্রেন নম্বর আট থেকে ESI ডিসপেনসারি পর্যন্ত অংশ অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়টি পিয়াউ মানিয়ারীর কাছে কুন্ডলীতে তৈরি হবে। তৃতীয় ওভারব্রিজটি পহেল নিউট্রিশন সেন্টার থেকে এক্সাইড সেন্টার হয়ে অন্তিল অটো ওয়ার্কস, বাহালগড় পর্যন্ত তৈরি করা হবে। চতুর্থটি চিরঞ্জীবী হাসপাতাল থেকে টুডে ডেইরীজ প্রাইভেট লিমিটেড পর্যন্ত এলাকা জুড়ে তৈরি হবে। অন্যদিকে, পঞ্চমটি গুলশান ধাবা থেকে সিদ্ধার্থ পাঞ্জাবি ধাবা, মূরথাল পর্যন্ত তৈরি হবে। এছাড়াও মদন ধাবা থেকে ঝিলমিল ধাবা, মূরথাল এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হবে।

কেন এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল

NH-44 দিল্লি থেকে পাঞ্জাব এবং জম্মু পর্যন্ত যাওয়া সবচেয়ে ব্যস্ততম রাস্তা। সোনিপত জেলার অংশের মধ্যে দিয়ে যাওয়া এই হাইওয়েতে দিন-রাত ভারী যানবাহন এবং দ্রুতগতির গাড়ি চলাচল করে। এর মধ্যে শ্রমিক ও স্থানীয় মানুষজন পায়ে হেঁটে রাস্তা পার হন। অনেক সময় ট্রাক ও গাড়ির ধাক্কায় দুর্ঘটনা ঘটে। গত বছরই জিটি রোডের ২০টি ব্ল্যাক স্পট নির্মূল করা হয়েছিল, কিন্তু কিছু সময় পর নতুন পাঁচটি বিপজ্জনক পয়েন্ট সামনে আসে।

দুর্ঘটনার রেকর্ড

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে অতিরিক্ত গতি এবং বেপরোয়া ড্রাইভিংয়ের কারণে দুর্ঘটনায় বহু মানুষ মারা গেছেন। ২০১৭ সালে ৪৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫১১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ২০১৮ সালে ২৭৭টি দুর্ঘটনায় ৪৮৩ জনের মৃত্যু হয়। ২০১৯ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে ২১৮তে দাঁড়ালেও ৩৮৯ জন মারা যান। ২০২০ সালে লকডাউন সত্ত্বেও ১৭৪টি দুর্ঘটনায় ৪৮৭ জন প্রাণ হারান। ২০২১ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭৪টি দুর্ঘটনা এবং ৫৩৭ জনের মৃত্যু। ২০২২ সালে ৩৮৫টি দুর্ঘটনায় ৩৯০ জন প্রাণ হারান। ২০২৩ সালে দুর্ঘটনার সংখ্যা কম হলেও ৩৭৯ জনের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালে জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১৯টি দুর্ঘটনায় ২৫৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এই বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দুর্ঘটনায় ১৭৯ জন মারা গেছেন।

চালানের সংখ্যাও চমকে দেওয়ার মতো

NH-44-এ নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত অতিরিক্ত গতির জন্য হাজার হাজার চালান কাটা হয়েছে। মার্চ মাসে ৬৭৬৭টি, এপ্রিল মাসে ৩৯০৬টি, মে মাসে ৫৫৩৪টি এবং জুন মাসে ৪৯৫৬টি যানবাহন চালকের জরিমানা করা হয়েছে। হেলমেট ছাড়া এবং সিটবেল্ট না বাঁধার ক্ষেত্রেও বড় সংখ্যা সামনে এসেছে। এছাড়াও মদ্যপান করে গাড়ি চালানো, মোবাইলে কথা বলা এবং ভুল দিকে গাড়ি চালানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও বিশাল চালান করা হয়েছে।

শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকে নজর রাখা হবে

হাইওয়ের পাশে থাকা শিল্পাঞ্চলে হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা প্রতিদিন রাস্তা পার হন। অনেক সময় কারখানা থেকে ফেরার পথে রাতে দুর্ঘটনা ঘটে। তাই বড় শিল্পাঞ্চলের সামনে আগে থেকেই একটি ফুট ওভারব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। এখন মন্ত্রক বাকি পাঁচটি স্থানেও নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। শীঘ্রই কাজ শুরু করে এই জায়গাগুলোকে নিরাপদ করা হবে।

NHAI আধিকারিকরা সড়ক নিরাপত্তা কমিটির আগের বৈঠকে অনুমোদনের সাথে সম্পর্কিত এটিআর জমা দিয়েছেন। এখন নির্মাণ কাজের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। বিভাগের দাবি, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এই স্থানগুলোতে কাজ শুরু হয়ে যাবে। এতে পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং হাইওয়েতে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমবে বলে আশা করা যায়।

Leave a comment