মন্দিরের সিঁড়িতে বসার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও উপকারিতা

মন্দিরের সিঁড়িতে বসার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য ও উপকারিতা

সনাতন ধর্মে মন্দিরের সিঁড়িতে বসা পূজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। শাস্ত্র অনুসারে, এগুলি ভগবানের চরণের সমান, যেখানে বসে ভক্তরা মানসিক শান্তি পান এবং তাঁদের কামনা দ্রুত পূরণ হয়। এই ঐতিহ্য আধ্যাত্মিক শক্তির উৎসও বটে।

মন্দির দর্শনের পর সিঁড়িতে বসা: সনাতন ধর্মে এই প্রথাটি বেশ পুরনো এবং গুরুত্বপূর্ণ। মন্দিরের সিঁড়িগুলিকে ভগবানের চরণের সমান মনে করা হয়, তাই এখানে বসে ভক্তরা ভগবানের সান্নিধ্য অনুভব করেন। এই সময়ে ভক্তরা মানসিক শান্তি পান এবং তাঁদের মনোবাসনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করেন। মন্দিরের সিঁড়িতে বসা কেবল ধর্মীয় বিশ্বাসের অংশ নয়, এটি আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন এবং মনকে শুদ্ধ করার মাধ্যমও বটে।

মন্দিরের সিঁড়ি: ভগবানের চরণের মতো

সনাতন ধর্মের শাস্ত্রগুলিতে মন্দিরের নির্মাণকে ভগবানের স্বরূপ অনুসারে ডিজাইন করা হয়। মনে করা হয় যে মন্দিরের শিখর ভগবানের মুখ হয়, যেখানে নীচের দিকে তৈরি সিঁড়িগুলি তাঁর চরণের সমান। তাই যখন ভক্তরা পূজা-অর্চনার পর মন্দিরের সিঁড়িতে বসেন, তখন তাঁরা বিশ্বাস করেন যে তাঁরা সরাসরি ভগবানের চরণের কাছে বসে আছেন।

এই পরিস্থিতি ভক্তদের জন্য অত্যন্ত শুভ এবং পবিত্র, কারণ তাঁরা সেই সময় ভগবানের উপস্থিতি আরও বেশি অনুভব করেন। এই সময়ে তাঁদের মন শুদ্ধ হয় এবং তাঁরা ঈশ্বরের ভক্তিতে মগ্ন হয়ে যান। শাস্ত্র অনুসারে, এমনটা করলে ভক্তদের মনোবাসনা দ্রুত পূরণ হয় এবং তাঁরা মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক শক্তি অনুভব করেন।

মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস

মন্দিরের সিঁড়িতে বসা কেবল একটি ঐতিহ্য নয়, এটি এক ধরনের ধ্যানও। পূজার সময় যে অভ্যন্তরীণ চাপ, উদ্বেগ এবং চিন্তা মনে জেগে ওঠে, সেগুলি এই সময়ে বসে শেষ হয়ে যায়। ভক্তরা ভগবানের চরণের কাছে বসে তাঁদের মনকে শান্ত করেন, যা তাঁদের চাপমুক্ত ও প্রফুল্ল হতে সাহায্য করে।

এখানে বসে মনের চিন্তা একাগ্র হয়ে যায় এবং ভক্ত নিজেকে ভগবানের সাথে যুক্ত অনুভব করেন। এই কারণেই মন্দিরের সিঁড়িতে কিছু সময় বসা অনেক মানুষের জন্য ধ্যান এবং শান্তির উৎস হয়ে ওঠে। এর ফলে কেবল আধ্যাত্মিক লাভ হয় না, মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি হয়।

মন্দিরের সিঁড়িতে বসে পাঠ করার শ্লোক

শাস্ত্রগুলিতে মন্দিরের সিঁড়িতে বসে একটি বিশেষ শ্লোক জপ করারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, যা ভক্তের জীবনে সুখ, শান্তি এবং মোক্ষ লাভে সহায়ক হয়। এই শ্লোকটি সংস্কৃতে এই প্রকার:

অনায়া সেন মরণম্, বিনা দৈন্যে জীবনম্।
দেহান্তে তব সান্নিধ্যম্, দেহি মে পরমেশ্বরম্।।

এই শ্লোকের অর্থ হল "এমন মৃত্যু লাভ হোক যা কোনও কষ্ট ছাড়াই হয়, এবং এমন জীবন পাই যাতে দুঃখ না থাকে। হে পরমেশ্বর! আমাকে আপনার সান্নিধ্যে মৃত্যু দান করুন।"

এই শ্লোক জপ করার সময় শ্রদ্ধা ও ভক্তি ভাব থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই মন্ত্র ভক্তকে জীবন ও মৃত্যুর অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দেওয়ার কাজ করে এবং ভগবানের সান্নিধ্যে জীবন কাটানোর আশীর্বাদ প্রদান করে।

মন্দিরের সিঁড়িতে বসা: একটি পুরনো ঐতিহ্য

মন্দিরের সিঁড়িতে বসার ঐতিহ্য বহু শতাব্দীর পুরনো। প্রাচীনকালে যখন লোকেরা মন্দিরে গিয়ে পূজা করত, তখন তারা তাড়াহুড়ো করে ফিরে আসত না। পূজার পরে কিছু সময় তারা মন্দিরের বাইরে বা সিঁড়িতে বসে তাঁদের মনের কথা ভগবানকে জানাত, ধ্যান করত এবং মানসিক শান্তি লাভ করত।

আজকের ব্যস্ত জীবনে এই ঐতিহ্য হয়তো কমে যাচ্ছে, কিন্তু এর গুরুত্ব বোঝা প্রয়োজন। এটা কেবল আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ নয়, এটি এক প্রকার মন ও আত্মাকে সতেজ করার উপায়ও। যে ভক্তরা এটিকে গ্রহণ করেন, তাঁরা অধিক মানসিক স্থিতিশীলতা, আধ্যাত্মিক উন্নতি এবং জীবনে সুখ-শান্তি অনুভব করেন।

Leave a comment