এসএসসি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে দিল্লিতে ছাত্র-শিক্ষকদের বিক্ষোভ, পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ

এসএসসি নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে দিল্লিতে ছাত্র-শিক্ষকদের বিক্ষোভ, পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ

এসএসসি-র নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে कथित অনিয়মের অভিযোগে সারা দেশ থেকে আসা হাজার হাজার ছাত্র ও শিক্ষক দিল্লির যন্তর মন্তরে একত্রিত হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখান। পরীক্ষার কেন্দ্রগুলির অনুचित বণ্টন, প্রযুক্তিগত সমস্যা এবং পরীক্ষা বাতিল হওয়ার মতো বিষয়গুলি ছাত্রদের ক্ষুব্ধ করেছে। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ এবং শিক্ষকদের গ্রেপ্তার বিতর্ককে আরও গভীর করেছে।

নয়াদিল্লি: ৩১ জুলাই, ২০২৫ তারিখে রাজধানী দিল্লির যন্তর মন্তর আবারও ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কর্মচারী নির্বাচন কমিশন (SSC)-এর সিলেকশন পোস্ট ফেজ ১৩ পরীক্ষার কথিত অনিয়ম এবং প্রযুক্তিগত ত্রুটির অভিযোগে দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আসা হাজার হাজার ছাত্র ও শিক্ষক একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এই প্রতিবাদ 'দিল্লি চলো' অভিযানের অধীনে আয়োজিত হয়েছিল, যেখানে এসএসসি-র পরীক্ষা ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার দাবি জানানো হয়।

ছাত্রদের আপত্তিগুলো কী কী?

বিক্ষোভকারী প্রার্থীদের অসন্তোষ বিভিন্ন স্তরে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। তাদের প্রধান অভিযোগগুলি হল:

  • পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোর অনুचित বণ্টন: অনেক ছাত্রকে তাদের নিজ রাজ্য থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে পরীক্ষার কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, উত্তর প্রদেশের কানপুরের এক ছাত্রকে কর্ণাটকে পরীক্ষার কেন্দ্র দেওয়া হয়েছিল, যার কারণে যাতায়াত এবং খরচ উভয় সমস্যাই বেড়েছে।
  • প্রযুক্তিগত ত্রুটি: পরীক্ষার সময় অনেক কেন্দ্রে সিস্টেম বিকল হয়ে যায়, সার্ভার ক্র্যাশ করে, মাউস কাজ করেনি এবং কিছু স্থানে পরীক্ষার্থীদের ঘরে আটকে রাখা হয়েছিল। ইন্দোরে কিছু ছাত্রের সঙ্গে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ।
  • পরীক্ষা আকস্মিকভাবে বাতিল হওয়া: ২৪ থেকে ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য সিলেকশন পোস্ট ফেজ ১৩-এর অনেক পরীক্ষা প্রযুক্তিগত ও প্রশাসনিক কারণে কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই বাতিল করা হয়েছিল। এতে ছাত্রদের মধ্যে গভীর অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
  • উত্তরপত্র ও ফলাফলে ভুল: বারবার উত্তরপত্র বা অ্যানসার কিতে ভুল এবং ফলাফলে অসঙ্গতি ছাত্রদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
  • ছাত্রীদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ: কিছু পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীদের গভীর রাত পর্যন্ত আটকে রাখার ঘটনা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

শিক্ষক ও সোশ্যাল মিডিয়ার সমর্থন

এই বিক্ষোভ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি সেই শিক্ষকদেরও সমর্থন পেয়েছে, যারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি করান। ইংরেজি বিষয়ের নীतू ম্যাম, রাকেশ যাদব, অভিনয় স্যার, আদিত্য রঞ্জন এবং গোপাল বর্মার মতো অনেক খ্যাতনামা শিক্ষক ছাত্রদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। এই শিক্ষকদের গ্রেপ্তার আন্দোলনকে আরও জোরদার করে তোলে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এই আন্দোলন নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং অনেক হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিং হতে শুরু করে।

পুলিশের পদক্ষেপে বাড়ল বিতর্ক

বিক্ষোভ প্রথমে শান্তিপূর্ণ ছিল, কিন্তু যখন ছাত্র ও শিক্ষকরা DoPT (Department of Personnel and Training) অফিসের দিকে অগ্রসর হন, তখন পুলিশ তাদের থামানোর চেষ্টা করে। এ সময় कथितভাবে বল প্রয়োগ করা হয় এবং অনেক বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ ছাত্র ও শিক্ষকদের বাসে ভরে নাজাফগড় ও বাওয়ানা থানায় নিয়ে যাচ্ছে।

কিছু শিক্ষক অভিযোগ করেছেন যে, আটকের সময় তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয়েছে। একজন শিক্ষকের হাত ভেঙে যাওয়া এবং মহিলা পুলিশ ছাড়াই মহিলা শিক্ষকদের আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কোনো সরকারি প্রতিক্রিয়া আসেনি, যা ছাত্র ও শিক্ষকদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এই বিক্ষোভ শুধু সাম্প্রতিক পরীক্ষার ত্রুটির বিরুদ্ধে ছিল না, বরং বছরের পর বছর ধরে চলে আসা প্রশাসনিক অবহেলা ও যোগাযোগহীনতার বিরুদ্ধেও ছিল। বিক্ষোভকারীরা স্পষ্টভাবে বলছেন যে, যতক্ষণ না এসএসসি-র পরীক্ষা ব্যবস্থায় सुधार আনা হচ্ছে, ততক্ষণ তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

Leave a comment