লাদাখে আকাশ প্রাইমের সফল পরীক্ষা: ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী

লাদাখে আকাশ প্রাইমের সফল পরীক্ষা: ভারতীয় সেনাবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা আরও শক্তিশালী

অপারেশন সিন্দুর চলাকালীন শত্রু পক্ষের ড্রোন হামলাগুলোকে নিখুঁতভাবে প্রতিহত করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এয়ার ডিফেন্স ইউনিট আরও একটি বড় সাফল্য পেয়েছে।

নয়াদিল্লি: ভারতের সামরিক শক্তি দিন দিন আরও শক্তিশালী হচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় সেনাবাহিনী লাদাখের অত্যন্ত দুর্গম এবং বরফ ঢাকা অঞ্চলে ১৫,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতায় আকাশ প্রাইম (Akash Prime) এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সফল পরীক্ষা করে সারা বিশ্বকে তাদের ক্ষমতা দেখিয়েছে। এই পরীক্ষায় ভারতীয় সেনাবাহিনী আকাশে দ্রুত উড়তে থাকা লক্ষ্যবস্তুতে নিখুঁত আঘাত হেনে ক্ষেপণাস্ত্রটির ক্ষমতা প্রমাণ করেছে।

লাদাখের উচ্চতা এবং কঠিন আবহাওয়াতেও সফল পরীক্ষা

লাদাখের কঠিন আবহাওয়া এবং বরফে ঢাকা পার্বত্য অঞ্চলে অক্সিজেনের চরম অভাব থাকা সত্ত্বেও আকাশ প্রাইম সাফল্যের সাথে দুটি পৃথক টার্গেট এয়ারক্রাফটকে আকাশে ধ্বংস করেছে। এই পরীক্ষার সময় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO) এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর এয়ার ডিফেন্স ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এই পরীক্ষাটি আরও প্রমাণ করে যে ভারতের দেশীয় প্রযুক্তি এখন যেকোনো চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে শত্রুর আধুনিক বিমান হামলা ব্যর্থ করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।

আকাশ প্রাইমের শক্তি এবং ক্ষমতা

আকাশ প্রাইম হল বর্তমান আকাশ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের আপগ্রেডেড এবং আরও আধুনিক সংস্করণ। এটি বিশেষভাবে উচ্চ পার্বত্য এবং অত্যন্ত ঠান্ডা অঞ্চলের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

  • ১৫,০০০ ফুট উচ্চতায় মোতায়েন করা যেতে পারে।
  • ২৫-৩০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বে থাকা আকাশ পথের লক্ষ্যবস্তুকে ধ্বংস করতে সক্ষম।
  • আকাশে দ্রুত উড়তে থাকা ড্রোন, এয়ারক্রাফট এবং ক্ষেপণাস্ত্রের মতো লক্ষ্যবস্তুগুলোকে ধ্বংস করতে পারে।
  • স্বদেশীয়ভাবে তৈরি Active Radio Frequency Seeker প্রযুক্তি যুক্ত।
  • অত্যধিক ঠান্ডা এবং কম অক্সিজেন যুক্ত এলাকাতেও নির্ভুলভাবে কাজ করে।

সেনাবাহিনীর এয়ার ডিফেন্স ইউনিট আরও শক্তিশালী হবে

ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য আকাশ প্রাইম একটি গেম-চেঞ্জার হিসাবে প্রমাণিত হবে। এর মাধ্যমে এয়ার ডিফেন্সের তৃতীয় এবং চতুর্থ রেজিমেন্ট শীঘ্রই গঠন করা হবে। অপারেশন সিন্দুর চলাকালীন পাকিস্তান কর্তৃক ড্রোন হামলার পরে ভারত তাদের বায়ু সুরক্ষা আরও শক্তিশালী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগের অভিযানে পাকিস্তান-সহ চীনের বিমান এবং তুরস্কের ড্রোন হামলাও সেনাবাহিনী ব্যর্থ করেছিল। এখন আকাশ প্রাইম আসাতে এই ধরনের বিপদ মোকাবেলা করা আরও সহজ হবে।

এই সফল পরীক্ষার মাধ্যমে ভারত তার প্রতিবেশী দেশ চীন ও পাকিস্তানকে সরাসরি বার্তা দিয়েছে যে ভারতের সামরিক শক্তি যেকোনো আবহাওয়া এবং পরিস্থিতিতে শত্রুর পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম। লাদাখের মতো সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরীক্ষা এটাই প্রমাণ করে যে ভারত ভবিষ্যতে যেকোনো চ্যালেঞ্জের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত।

ডিআরডিও-র আরও একটি বড় সাফল্য

আকাশ প্রাইম সিস্টেমটি ভারতের ডিআরডিও তৈরি করেছে, যারা এর আগেও ব্রহ্মোস এবং অগ্নি-র মতো ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। এই সিস্টেমটি কেবল দেশের সীমান্তকে মজবুত করবে না, সেই সাথে ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিকে বিশ্বব্যাপী নতুন পরিচিতি দেবে। আকাশ প্রাইম হল বর্তমান আকাশ সিস্টেমের উন্নত সংস্করণ। এটি বিশেষভাবে ভবিষ্যতের আকাশ পথের বিপদগুলোকে মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছে। এর রাডার সিস্টেম এবং মিসাইল গাইডার্স প্রযুক্তি আগের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত এবং নির্ভুল।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, লাদাখের মতো উঁচু অঞ্চলে এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সাফল্য ভবিষ্যতে ভারতের কৌশলগত নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনবে। এর ফলে ভারতের উত্তর সীমান্তে সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার হবে এবং শত্রুর ড্রোন ও বিমান হামলার যোগ্য জবাব দেওয়া সহজ হবে।

Leave a comment