সুপ্রিম কোর্ট রুশ মহিলা ভিক্টোরিয়া বসুর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারি করেছে। তিনি ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে পলাতক। আদালত পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে বিমানবন্দরগুলিতে নজরদারির নির্দেশ দিয়েছে।
নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্ট একটি ব্যতিক্রমী শিশু হেফাজতের মামলায় রুশ মহিলা ভিক্টোরিয়া বসুর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছে। মহিলার বিরুদ্ধে তাঁর ৫ বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে দেশ থেকে পালানোর চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক এবং দিল্লি পুলিশকে সতর্ক থাকার এবং মহিলার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের কঠোর মনোভাব
সুপ্রিম কোর্ট একটি অস্বাভাবিক চাইল্ড কাস্টডি মামলায় কঠোর অবস্থান নিয়ে কেন্দ্র সরকারকে রুশ মহিলা ভিক্টোরিয়া বসুর বিরুদ্ধে লুকআউট নোটিশ জারির নির্দেশ দিয়েছে। আদালত এই পদক্ষেপ নিয়েছে কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছে মহিলা তাঁর ৫ বছরের ছেলেকে নিয়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। আদালত বলেছে যে এই মামলায় কোনওরকম শৈথিল্য দেখা গেলে গুরুতর পরিণতি হতে পারে।
পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত এবং সীমান্তে সতর্কতা
আদালত ভিক্টোরিয়া বসুর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করার এবং সমস্ত বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দরে সতর্কতা জারির নির্দেশ দিয়েছে। নির্দেশে বলা হয়েছে যে মহিলা দেশ ছাড়ার চেষ্টা করতে পারেন, তাই ইমিগ্রেশন আধিকারিকদের যে কোনও মূল্যে সতর্ক থাকতে হবে।
চীনে প্রথম সাক্ষাৎ
এই মামলার শুরুটা চীনে একটি সাক্ষাতের মাধ্যমে। সৈকত বসু নামের এক ব্যক্তি কাজের সূত্রে চীনে থাকাকালীন রুশ মহিলা ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে পরিচিত হন। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং ২০১৭ সালে তাঁরা ভারতে এসে বিয়ে করেন। প্রথমে সবকিছু স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কে ফাটল ধরে।
সম্পর্কে তিক্ততা বৃদ্ধি, বিবাহ বিচ্ছেদের পরিস্থিতি
বিয়ের কয়েক বছর পর দুজনের মধ্যে মতভেদ বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয় যে দিল্লির সাকেত ফ্যামিলি কোর্টে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন দাখিল করা হয়। তবে সন্তানের হেফাজত নিয়ে দুজনের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছিল, যেখানে বলা হয়েছিল সপ্তাহে তিন দিন সন্তান তার মায়ের কাছে থাকবে।
২২ মে থেকে শিশুটি নিখোঁজ
সৈকত বসু জানান যে তিনি শেষবার তাঁর ছেলেকে ২২ মে দেখেছিলেন, যখন শিশুটি তার মায়ের সঙ্গে ছিল। এরপর থেকে সে নিখোঁজ। সৈকতের সন্দেহ, ভিক্টোরিয়া তার ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে এবং এখন অন্য কোনো দেশে যেতে পারে। তিনি আদালতে এও জানান যে মহিলার রুশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে।
রুশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ ও তদন্তের দাবি
সৈকতের দাবি, তিনি ভিক্টোরিয়াকে রুশ দূতাবাসের পিছনের দরজা দিয়ে চুপিসারে ঢুকতে দেখেছেন। এই যুক্তির ওপর ভিত্তি করে তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেন যে দূতাবাসের কিছু আধিকারিকের সমর্থন মহিলা পেতে পারেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বিদেশ মন্ত্রককে দূতাবাসের আধিকারিকের দিল্লির বাসভবনে তল্লাশি চালানোর প্রক্রিয়া বিবেচনা করার নির্দেশ দিয়েছে।
আদালতের ভর্ৎসনা ও কড়া নির্দেশ
বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বিচারপতি জয়মাল্য বাগচির বেঞ্চ মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে দিল্লি পুলিশকে দ্রুত শিশুটির সন্ধান করার এবং তার হেফাজত বাবাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। আদালত ভিক্টোরিয়ার আইনজীবীর ভূমিকার ওপরও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে, যিনি মহিলার উপস্থিতি এবং অবস্থান সম্পর্কে কোনও তথ্য থাকার কথা অস্বীকার করেছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রক উভয়কেই সুপ্রিম কোর্ট দায়িত্ব দিয়েছে যে তারা সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করবে। মামলার সংবেদনশীলতা বিবেচনা করে এটা জরুরি যে মহিলার গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয় এবং তার সম্ভাব্য বিদেশ যাত্রা বন্ধ করা হয়।