উজ্জয়িনে মহাকাল সওয়ারি: ২০২৫ সালের সময়সূচী ও গুরুত্ব

উজ্জয়িনে মহাকাল সওয়ারি: ২০২৫ সালের সময়সূচী ও গুরুত্ব

মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িন শহরে ১৪ই জুলাই ২০২৫, শ্রাবণ মাসের প্রথম সোমবার, বাবা মহাকালের প্রথম সওয়ারি বের করা হয়। হাজার হাজার ভক্ত ‘জয় মহাকাল’ ধ্বনি দিয়ে এই ঐতিহাসিক সওয়ারিতে অংশ নেন। এই আয়োজন কেবল একটি ধর্মীয় রীতি নয়, বরং উজ্জয়িনের আত্মার সঙ্গে জড়িত একটি প্রাচীন ঐতিহ্য, যা বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে।

১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে মহাকালেশ্বর বিশেষ

উজ্জয়িনে অবস্থিত মহাকালেশ্বর মন্দির হিন্দু ধর্মের ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম এবং এটিই একমাত্র জ্যোতির্লিঙ্গ যা দক্ষিণমুখী। বিশ্বাস করা হয়, এই শিবলিঙ্গ স্বয়ম্ভূ এবং সময় অর্থাৎ 'কাল'-এর উপরেও শাসন করে, তাই একে মহাকাল বলা হয়।

শ্রাবণ মাস শিব ভক্তদের জন্য অত্যন্ত বিশেষ। এই সময়ে বাবা মহাকালের বিশেষ সওয়ারি বের করা হয়, যেখানে তাঁকে সুসজ্জিত পালকি বা রথে বসিয়ে পুরো শহর পরিক্রমা করানো হয়।

মহাকালের সওয়ারি ঐতিহ্যের ইতিহাস

মহাকাল সওয়ারির সূচনার श्रेय রাজা ভোজকে দেওয়া হয়, যিনি তাঁর আমলে এটিকে একটি বিশাল আয়োজনে পরিণত করেন। সেই সময়ে হাতি, ঘোড়া এবং তরোয়ালবাজদের সঙ্গে মহাকালের সওয়ারি বের করা হতো। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ঐতিহ্য আরও জাঁকজমকপূর্ণ হয়েছে।

আজও সওয়ারিতে জীবন্ত চিত্র, অশ্বারোহীর দল এবং তরোয়ালবাজদের দেখা যায়। এই সওয়ারি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি বিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির জীবন্ত উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

২০২৫ সালে কবে কবে বের হবে মহাকালের সওয়ারি

এই বছর বাবা মহাকালের মোট ৬টি সওয়ারি বের হবে। প্রথম সওয়ারি ১৪ই জুলাই বের হয়েছে, বাকি সওয়ারিগুলির তারিখ নিচে দেওয়া হল:

  • দ্বিতীয় সওয়ারি: ২১শে জুলাই
  • তৃতীয় সওয়ারি: ২৮শে জুলাই
  • চতুর্থ সওয়ারি: ৪ঠা আগস্ট
  • পঞ্চম সওয়ারি: ১১ই আগস্ট
  • ষষ্ঠ সওয়ারি: ১৮ই আগস্ট

এই সব সওয়ারিতে মহাকালের পালকি বিভিন্ন রূপে সাজানো হয়। কখনও রুপোর পালকি, কখনও গরুড় বাহন, আবার কখনও হাতির উপরে বসে বাবা শহর পরিক্রমা করেন।

সওয়ারি যাত্রার ধর্মীয় গুরুত্ব

মহাকালের সওয়ারিকে ভগবান শিবের নগর ভ্রমণের রূপ হিসাবে দেখা হয়। বিশ্বাস করা হয়, এই সময়ে স্বয়ং শিব শহরের সুখ-শান্তি এবং জনগণের মঙ্গলের জন্য ভ্রমণ করেন। এই সওয়ারির সময় ভক্তরা রাস্তায় ফুল ছড়ান, ভজন-কীর্তন করেন এবং বাবার জয়ধ্বনিতে আকাশ মুখরিত হয়।

প্রতিটি সওয়ারিতে হাজার হাজার ভক্ত অংশ নেন, যার মধ্যে স্থানীয় নাগরিক থেকে শুরু করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তও থাকেন। উজ্জয়িনের প্রতিটি রাস্তা ও মোড়ে বাবার অভ্যর্থনার জন্য বিশাল সাজসজ্জা করা হয়।

প্রতিটি সওয়ারির সঙ্গে বিশেষ পূজা জড়িত

মহাকালের সওয়ারি কেবল একটি শোভাযাত্রা নয়, বরং প্রতিটি সওয়ারির দিনে মন্দিরে বিশেষ পূজা-অর্চনাও করা হয়। ভস্ম আরতির পর বাবাকে বিশেষ শৃঙ্গার পরানো হয়। এর পরেই সওয়ারি বের হয়।

ভক্তরা সওয়ারি পথের বিভিন্ন স্থানে জল সেবা, ভোগ প্রসাদ এবং ফুল দিয়ে বাবার অভ্যর্থনা জানান। অনেক জায়গায় প্যান্ডেল তৈরি করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করা হয়।

নিরাপত্তা এবং ব্যবস্থাপনার উপর প্রশাসনের নজর

প্রতি বছরের মতো এবারও প্রশাসন মহাকাল সওয়ারির জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে। পুলিশ বাহিনী, সিসিটিভি ক্যামেরা, মেডিক্যাল টিম এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সাহায্যে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

পুরসভা এবং অন্যান্য বিভাগগুলির তরফে পরিচ্ছন্নতা, আলো, ব্যারিকেডিং এবং রাস্তা নির্মাণের দিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। প্রশাসন নিশ্চিত করেছে যে কোনো ভক্তের কোনো অসুবিধা না হয়।

দেশ-বিদেশ থেকে ভক্তদের আগমন

মহাকালের সওয়ারি এখন কেবল উজ্জয়িনে সীমাবদ্ধ নেই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এই উৎসবে যোগ দিতে আসেন। এছাড়াও বিদেশে বসবাসকারী ভারতীয়রাও এই উপলক্ষে বিশেষভাবে উজ্জয়িনে আসেন।

বাবা মহাকালের এই সওয়ারি উজ্জয়িনকে ধর্মীয় পর্যটনের একটি বড় কেন্দ্র হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছে। রেল এবং পর্যটন বিভাগও এই উপলক্ষে বিশেষ ট্রেন ও প্যাকেজ চালায়।

ভক্তি, ঐতিহ্য এবং বিশ্বাসের মিলন

মহাকাল সওয়ারিতে অংশগ্রহণকারীদের জন্য এটি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি বিশ্বাসের একটি জীবন্ত অভিজ্ঞতা। প্রতিবার যখন বাবা শহর ভ্রমণে বের হন, তখন ভক্তদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো। এই ঐতিহ্য উজ্জয়িনের পরিচিতি হয়ে উঠেছে, যা প্রতি বছর শ্রাবণ মাসে তার পূর্ণ মহিমার সঙ্গে পুনরাবৃত্তি হয়।

Leave a comment