বেআইনি নির্মাণে শীর্ষ আদালতের কঠোর বার্তা

বেআইনি নির্মাণে শীর্ষ আদালতের কঠোর বার্তা

বেআইনি নির্মাণে কড়া পদক্ষেপে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ

কলকাতার বেআইনি নির্মাণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। এবার শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, সাধারণ মানুষের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে হলে প্রতিটি বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্যে ফের একবার শহরের নগর পরিকল্পনা ও প্রশাসনের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল।

দুই বিচারপতির বেঞ্চের স্পষ্ট অবস্থান

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং কেভি বিশ্বনাথন সমন্বিত বেঞ্চ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, কলকাতা হাইকোর্টকে বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনওরকম ছাড় না দিয়ে কঠোর পদক্ষেপ করতে হবে। বেআইনি বাড়ি বা প্রকল্পের মালিকরা যাতে আইনের ফাঁকফোকর ব্যবহার করতে না পারেন, তার জন্য আদালতের দিক থেকে এই শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে।

হাইকোর্টকে সঠিক সময়ে হস্তক্ষেপের পরামর্শ

শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, এটাই সঠিক সময় যখন হাইকোর্টকে আইনি পদক্ষেপ করতে হবে। অনেক বছর ধরে বিভিন্ন অভিযোগ জমে থাকলেও কার্যত তেমন কোনও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ হয়নি। এবার আদালতের কড়া বার্তা প্রশাসনিক স্তরে নতুন গতি আনতে পারে বলে মনে করছেন আইনি মহল।

পুরসভা কর্তাদের স্বস্তি, মেয়রের প্রতিক্রিয়া

সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। তাঁর মতে, মানুষের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে পুরসভা বারবার বাধার সম্মুখীন হয়েছে। আইনি জটিলতার কারণে অনেক সময় ভাঙার কাজ বা জরিমানা কার্যকর করা যায়নি। মেয়রের দাবি, শীর্ষ আদালতের এই স্পষ্ট অবস্থান আগামী দিনে পুরসভার হাতে শক্তি জোগাবে এবং প্রশাসনিক উদ্যোগকে আরও জোরদার করবে।

হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় বেআইনি নির্মাণের নজির

শুধু কলকাতা নয়, হাওড়ার গ্রামীণ এলাকাতেও একাধিক অনুমোদিত বাড়ি নিয়ম না মেনে তৈরি হয়েছিল। হাওড়া জেলা পরিষদের বৈঠকে সেসব বাড়ি ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রভাবশালী বাড়ির মালিকরা সেই সিদ্ধান্ত মানতে রাজি হননি। অবশেষে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। আদালত অবশ্য তাঁদের আবেদন শোনার আগে সরকারি নিয়মনীতি ও অনিয়মের খতিয়ান পরিষ্কারভাবে পেশ করার নির্দেশ দেয়।

হাইকোর্টে আবেদন খারিজ, সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ

হাওড়ার ওই বাড়ির মালিকরা ২০০৫ সালের ‘বাই–ল’ এবং ২০১৫ সালের নিয়মাবলিকে হাতিয়ার করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে হাইকোর্ট তাঁদের আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর আবেদনকারীরা সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান। সেখানে আবারও তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় শীর্ষ আদালত।

বেআইনি নির্মাণ রুখতে দ্রুত পদক্ষেপের তাগিদ

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা জানিয়ে দিয়েছেন, বেআইনি নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ যথেষ্ট সঠিক এবং সময়োপযোগী। তাই এগুলি দ্রুত কার্যকর করতে হবে। বিচারপতি পারদিওয়ালা আরও একবার মনে করিয়ে দেন, বেআইনি নির্মাণ বন্ধে প্রশাসনিক ও আইনি উদ্যোগকে গতি দিতে হবে, নইলে শহর ও গ্রামীণ এলাকার অবকাঠামো চরম বিপদের মুখে পড়বে।

আগেও দেওয়া হয়েছিল ভাঙার নির্দেশ

মে মাসেই বিচারপতি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন, হাওড়ার বেআইনি বাড়ি দ্রুত ভাঙা হোক। সেই সময়ও বেআইনি নির্মাণকারী পক্ষ আদালতের কাছে আবেদন করেছিলেন |

নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা, আইন মেনে শহর গড়া

কলকাতা ও হাওড়ার সাধারণ মানুষের একাংশ মনে করছেন, বেআইনি নির্মাণের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের এই কঠোর অবস্থান প্রশাসনকে নতুন বার্তা দেবে। নাগরিক সমাজের দাবি, শহরের পরিকল্পনা আইন মেনে হলে যেমন অবকাঠামোর চাপ কমবে, তেমনই সাধারণ মানুষের জীবনও আরও নিরাপদ হবে।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায় একদিকে যেমন পুরসভার প্রশাসনিক উদ্যোগকে গতি দেবে, তেমনই বেআইনি নির্মাণকে ঘিরে চলা রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তির দৌরকেও আঘাত করবে। অনেক সময় প্রভাবশালী মহলের চাপের কারণে প্রশাসন নীরব থেকেছে। এবার আদালতের শক্ত অবস্থান সেই নীরবতা ভাঙতে বাধ্য করবে।

সারসংক্ষেপ

সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট করেছে যে, বেআইনি নির্মাণের ক্ষেত্রে আর কোনও ছাড় নয়। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতেই এবার হাইকোর্ট ও পুরসভাকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শহরের স্বার্থে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বেআইনি নির্মাণ রুখতে প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে শীর্ষ আদালত।

Leave a comment