সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ: ‘তারিখে তারিখ’ চলবে না, প্রতিদিন হবে শুনানি

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ: ‘তারিখে তারিখ’ চলবে না, প্রতিদিন হবে শুনানি

Supreme Court on Speedy Trial: বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি মামলার ধীরগতি নিয়ে কড়া মন্তব্য করেছে। বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছে যে, ‘তারিখে তারিখ’ প্রথা আর চলবে না। আদালত সমস্ত হাইকোর্টকে প্রতিদিন শুনানি চালিয়ে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে। বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, তিন দশক আগে যে রীতি ছিল, তা ফেরানোর সময় এখন এসেছে। আদালত এই প্রথা পুনর্বহাল করলে দেশের বিচারব্যবস্থা আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ হবে।

সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশ 

সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, দেশের সমস্ত আদালতে মামলার সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এবং এর ফলে বিচার প্রক্রিয়ায় গুরুতর বিলম্ব হচ্ছে। আদালত বলেছে, গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল মামলার ক্ষেত্রে নিয়মিত, প্রতিদিনের শুনানি অপরিহার্য। সুপ্রিম কোর্ট আশা করছে যে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে আদালতগুলো কার্যকর ও দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে পারবে। আদালত এও নির্দেশ দিয়েছে, বিচারক ও প্রশাসনিক সংস্থাগুলোকে এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

কেন জরুরি প্রতিদিনের শুনানি

বেঞ্চের মতে, প্রায় তিন দশক আগে দেশের আদালতগুলোতে প্রতিদিন শুনানি করা একটি নিয়মিত রীতি ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে বিচারক সংখ্যা সীমিত, প্রশাসনিক জটিলতা বেশি এবং তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিলম্ব থাকার কারণে অধিকাংশ মামলা স্থগিত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট মনে করছে, যদি প্রতিদিনের শুনানি পুনরায় চালু হয়, তবে মামলা জট কমানো সম্ভব এবং নাগরিকরা দ্রুত ন্যায় পেতে পারবে। আদালত আরও বলেছে, সংবেদনশীল মামলা এবং জনমতের মামলা বিশেষভাবে নিয়মিতভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন।

মামলা সংখ্যা এবং জটিলতা

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের সমস্ত আদালতে মোট ৪.৬ কোটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে নিম্ন আদালতে ৬৩ লক্ষ এবং হাইকোর্টেও প্রায় সমান সংখ্যক মামলা আছে। সুপ্রিম কোর্টে ৮৬ হাজারের বেশি মামলা এখনও বিচারাধীন। বেঞ্চ উল্লেখ করেছে যে, সময়, সম্পদ, এবং বিচারক সংখ্যার ঘাটতি, তদন্তে বিলম্ব এবং টালবাহানির কারণে এই জট তৈরি হয়েছে। মামলার দীর্ঘস্থায়ী বিলম্ব দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ণ করছে।

সংস্কার ও পদক্ষেপ

সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে যে তারা বিশেষ কমিটি গঠন করবে, যা নিয়মিত শুনানি কার্যকর করা এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য সুপারিশ দেবে। বেঞ্চ আরও বলেছে, পুলিশ তদন্তের কার্যকারিতা, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে এই সংস্কার প্রয়োগ করা জরুরি। আদালত আশা করছে, এই পদক্ষেপ দেশের বিচারব্যবস্থায় কার্যকর পরিবর্তন আনবে এবং দীর্ঘমেয়াদি মামলা সমাধানের জন্য নতুন দিশা দেখাবে।

সুপ্রিম কোর্ট দেশের বিচারব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি মামলা এবং ‘তারিখে তারিখ’ পদ্ধতির কারণে দীর্ঘ বিলম্ব নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। আদালত সমস্ত হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছে যে, প্রতিদিন নিয়মিত শুনানি করা হবে। বিচারক অভাব, প্রশাসনিক জটিলতা এবং টালবাহানির কারণে কোটি কোটি মামলা এখনও বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। এই পদক্ষেপ দেশব্যাপী দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ায় নতুন গতি আনবে।

 

 

Leave a comment