সাজা শেষ হওয়ার পরে বন্দিদের আর জেলে রাখা যাবে না, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের

সাজা শেষ হওয়ার পরে বন্দিদের আর জেলে রাখা যাবে না, ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টের

সুপ্রিম কোর্ট জেলে সাজা ভোগ করা বন্দিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং স্বস্তিদায়ক রায় দিয়েছে। এখন থেকে কোনও বন্দিকে তাঁর সাজা শেষ হওয়ার পরে জেলে রাখা হবে না এবং তাঁদের মুক্তির জন্য আবেদন করারও প্রয়োজন হবে না।

নয়া দিল্লি: জেলবন্দি বন্দিদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে এল বড় স্বস্তির খবর। সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে যে কোনও বন্দিকে তাঁর সাজা শেষ হওয়ার পরে অতিরিক্ত সময় জেলে রাখা যাবে না। এখন থেকে সাজা শেষ হলেই বন্দিদের বিনা মুক্তির আপিলে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেওয়া বাধ্যতামূলক হবে। 

বর্তমান ব্যবস্থায় বন্দিদের সাজা শেষ হওয়ার পরেও জেল থেকে বেরোনোর জন্য মুক্তির আবেদন করতে হত, যার কারণে অনেক সময় তাঁদের অপ্রয়োজনীয়ভাবে অতিরিক্ত সময় জেলে কাটাতে হত। এই নতুন রায়ে বন্দিদের অধিকার রক্ষা হবে এবং তাঁদের মুক্তির প্রক্রিয়া আরও দ্রুত ও সুগম হবে।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কী?

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারকের বেঞ্চ বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন এবং বিচারপতি বি ভি নাগারত্ন এই মামলায় স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে কোনও বন্দিকে তাঁর সাজা শেষ হওয়ার পরে জেলে রাখা অবৈধ হবে। বর্তমানে বন্দিদের সাজা শেষ হওয়ার পরে মুক্তির জন্য কোর্ট বা সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ডে আবেদন করতে হয়, যার ফলে অনেক সময় তাঁদের মুক্তি পেতে দেরি হয়।

এখন সুপ্রিম কোর্ট এটা নিশ্চিত করেছে যে সাজা শেষ হলে বন্দিদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে মুক্তি দেওয়া হবে, যাতে জেলগুলোতে ভিড় কম হয় এবং বন্দিদের অধিকারের সম্মান করা হয়।

পুরো বিষয়টা কী?

এই আদেশ একটি বিশেষ পিটিশনের প্রেক্ষিতে এসেছে, যা দিল্লির বিজনেসম্যান নিতিশ কাটারা মার্ডার কেসে (২০০২) ২০ বছরের সাজা ভোগ করা বন্দি সুখদেব যাদব ওরফে পালোয়ান দাখিল করেছিলেন। ৯ মার্চ পালোয়ানের সাজা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু রিভিউ বোর্ড তাঁর মুক্তির আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর পালোয়ান সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২৯ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে তৎক্ষণাৎ মুক্তি দেওয়ার আদেশ দেয়।

সুপ্রিম কোর্ট এই মামলায় সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ডকে কড়া তিরস্কার করেছে। কোর্ট বলেছে যে এই ধরনের নেতিবাচক এবং বিলম্বিত কার্যকলাপের কারণে বিচার ব্যবস্থার উপর প্রশ্ন ওঠে। সুপ্রিম কোর্ট সতর্ক করে জানিয়েছে যে এমন মনোভাব চলতে থাকলে অপরাধীরা জেলেই মারা যাবে। এই তিরস্কারের পরে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোর স্বরাষ্ট্র সচিবদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে তাঁরা যেন জেলগুলো পরিদর্শন করে এই আদেশের কঠোরভাবে পালন নিশ্চিত করেন।

কাদের আবেদন করতে হবে?

সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কার করে দিয়েছে যে শুধুমাত্র যে বন্দিরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত, তাঁদেরকেই মুক্তির জন্য সেন্টেন্স রিভিউ বোর্ড বা সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন করতে হবে। অন্য সকল বন্দি, যাদের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের সাজা শেষ হয়ে গেছে, তাঁদের কোনও অতিরিক্ত আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না। এই আদেশ বন্দিদের অধিকার রক্ষা করে এবং ন্যায় প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে সাহায্য করবে।

এই রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থায় বন্দিদের অধিকারের সুরক্ষার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে জেলগুলোতে ভিড় কম হবে, অপ্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং বন্দিদের ন্যায় বিচার পেতে সুবিধা হবে। এর পাশাপাশি এই রায় জেল প্রশাসনের উপরও ইতিবাচক চাপ সৃষ্টি করবে যে তারা যেন তাদের রেকর্ড সময় মতো আপডেট করে এবং সাজা শেষ করা বন্দিদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়।

Leave a comment