স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও থমকে গেল চিকিৎসা

স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও থমকে গেল চিকিৎসা

৫২ বছরের ইলা দত্ত, যিনি দীর্ঘ দেড় বছর ধরে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন, তিনি এবার পেলেন না নিজের প্রাপ্য চিকিৎসা। অভিযোগ, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁর কেমোথেরাপি থমকে দিল বর্ধমানের এক বেসরকারি হাসপাতাল। শুধু চিকিৎসা না করানোই নয়, উলটে সরকারি হারে নির্ধারিত খরচের থেকেও অনেক বেশি অর্থ দাবি করা হয় তাঁর পরিবারের কাছে।

চলছিল চিকিৎসা, কিন্তু কেন থামল হঠাৎ?

ইলার পরিবার জানায়, প্রথম থেকেই ওই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে আসছেন তাঁরা। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দেখিয়েও রোগিণীর পরিবারকে চিকিৎসার জন্য বারবার অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। কিন্তু এবার সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, ‘কার্ড ব্লক হয়ে গিয়েছে’, তাই আর চিকিৎসা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে দাবি করা হয় বড় অঙ্কের অতিরিক্ত টাকা, যা দিতে অস্বীকার করেন ইলার মেয়ে উর্মিলা দত্ত।

অভিযোগ সামনে আসতেই প্রশাসনের তৎপরতা

এই ঘটনার খবর চাউর হতেই বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে। ঘটনাস্থলে পাঠানো হয় ডেপুটি সিএমওএইচ (১)-কে। দীর্ঘসময় ধরে চলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা, কিন্তু কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।

শেষমেশ মেডিক্যালে ঠাঁই ক্যান্সার রোগিণীর

চাপ সৃষ্টি হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজের অবস্থানে অনড়। শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসন ইলা দত্তের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বর্তমানে সেখানেই ভর্তি রয়েছেন তিনি। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি প্রকল্পের আওতায় থাকা এক ক্যান্সার রোগী যদি প্রাপ্য পরিষেবা না পান, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে ভরসা করবেন স্বাস্থ্যসাথীর উপর?

লিখিত অভিযোগ জমা পড়ল স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে

ইলার মেয়ে উর্মিলা দত্ত এই বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য)–এর কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগে তিনি জানান, দেড় বছর ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের চিকিৎসায় বারংবার অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকা সত্ত্বেও কোনও দিনই তা কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেননি। আর এবার তো সরাসরি চিকিৎসা বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে।

“কার্ড ব্লকড” যুক্তি মানছে না পরিবার

হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, রোগীর স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটি ‘ব্লক’ হয়ে গিয়েছে। তাই চিকিৎসা সম্ভব নয়। কিন্তু ইলার পরিবার স্পষ্ট জানায়, সরকারি পরিকাঠামোয় এমন কোনও তথ্য নেই। বরং বারংবার অতিরিক্ত অর্থ দাবি করাই মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন তাঁরা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এই আচরণে ক্ষুব্ধ জেলার চিকিৎসা মহলও।

সভাধিপতির ক্ষোভ, স্বাস্থ্য দপ্তরে রিপোর্ট

জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন লোহার জানিয়েছেন, একজন ক্যান্সার রোগী, যাঁর কাছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড আছে, তাঁকে পরিষেবা না দেওয়া খুবই দুর্ভাগ্যজনক। এর সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যে অতিরিক্ত টাকা দাবি করেছে, তাও গুরুতর অভিযোগ। বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে আরও কড়া পদক্ষেপ করা হবে।

‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের বিশ্বাসযোগ্যতায় ধাক্কা?

এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্প নিয়ে। সাধারণ মানুষের প্রাপ্য চিকিৎসা যদি এমন ভাবেই বাধা পায়, তবে এই প্রকল্পের উপর থেকে মানুষের আস্থা কি কমবে না? ক্যান্সারের মতো মারণ রোগে আক্রান্ত একজন রোগী যদি বেসরকারি হাসপাতালের বেড়াজালে পড়ে সঠিক সময়ে পরিষেবা না পান, তবে এ রাজ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছেই।

Leave a comment