হাতকাটা ব্লাউজ নিয়ে ক্ষোভ, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
বাংলা ছোটপর্দার অন্যতম জনপ্রিয় মুখ শ্বেতা ভট্টাচার্য আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, শরীর দেখিয়ে নয়, বরং অভিনয় দক্ষতার জোরেই তিনি রোজগার করেন। তাঁর বক্তব্য—‘আমি শরীর বেচে খাই না, আমি অভিনয় করে খাই।’ এই মন্তব্য মুহূর্তে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে চর্চার ঝড় তোলে।
প্রথম থেকেই পোশাক নিয়ে আপত্তি
কেরিয়ারের শুরু থেকেই পোশাকের ক্ষেত্রে নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন শ্বেতা। তিনি জানান, এক সময় তাঁকে হাতকাটা ব্লাউজ বা ছোট পোশাক পরার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি স্পষ্টভাবে না করেছিলেন। শিল্পী মহলের অনেকেই তাঁকে সতর্ক করেছিলেন—এমন মনোভাব অভিনয় জগতে টিকে থাকতে সাহায্য করবে না। তবু নিজের বিশ্বাস থেকে এক পা সরেননি নায়িকা।
সোশ্যাল মিডিয়ায় কটাক্ষ ও সমর্থনের ঢল
এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই মুহূর্তে তা ঝড়ের গতিতে ভাইরাল হয়। কেউ কেউ শ্বেতার সাহসী অবস্থানকে কুর্নিশ করেন, আবার অনেকে তাঁকে ব্যঙ্গ করে কটাক্ষ করতে শুরু করেন। এমন পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়ে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় আরেকটি ভিডিও বার্তা দেন। সেখানে স্পষ্ট করেন, স্লিভলেস ব্লাউজ পরা না পরা একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, এর সঙ্গে চরিত্রের ভাল-মন্দের কোনও যোগ নেই।
সহকর্মী অভিনেতাদের প্রতিক্রিয়া
শ্বেতার মন্তব্যে টলিপাড়ায়ও তৈরি হয় বিভাজন। অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় খোলাখুলি শ্বেতার বিরোধিতা করেন। তাঁর মতে, কারও পোশাককে খাটো করা উচিত নয়। অন্যদিকে, প্রখ্যাত অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর শ্বেতার পাশে দাঁড়িয়ে জানান, প্রত্যেকের নিজের মতো করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। ফলে বিতর্কে রীতিমতো দু’ভাগ হয়ে যায় শিল্পী মহল।
দীর্ঘ ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা
প্রায় দেড় দশক ধরে ধারাবাহিকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন শ্বেতা ভট্টাচার্য। টেলিভিশনের পর্দায় তাঁকে কখনও শরীর দেখানো পোশাকে দেখা যায়নি। তাঁর চরিত্রগুলিও সেইভাবে লেখা হয়নি। ফলে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন নিজের মতো করে কাজ করতে। এই অভিজ্ঞতাই তাঁকে আরও দৃঢ় করেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ধারাবাহিক থেকে সিনেমায় সাফল্য
শ্বেতা ভট্টাচার্যের ঝুলিতে রয়েছে একের পর এক জনপ্রিয় ধারাবাহিক—‘কনক কাকন’, ‘জারোয়ার ঝুমকো’, ‘সিঁদুর খেলা’, ‘তুমি রবে নীরবে’, ‘যমুনা ঢাকি’, ‘সোহাগ জল’ থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক ‘কোন গোপনে মন ভেসেছে’। শুধু ছোটপর্দাই নয়, বড়পর্দাতেও তাঁর উপস্থিতি লক্ষণীয়। দেবের বিপরীতে ‘প্রজাপতি’ ছবিতে তাঁকে দেখা গিয়েছিল, যা দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
চাপের মুখে ব্যাখ্যা দিলেন নায়িকা
প্রচণ্ড চাপের মুখে অবশেষে শ্বেতা ফের মুখ খোলেন। তিনি জানান, কারও পোশাক নিয়ে তাঁর আসলে কোনও মন্তব্য নেই। বরং যে যেমনভাবে পোশাক ক্যারি করতে পারে, তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত। তাঁর নিজের ক্ষেত্রে তিনি স্লিভলেস ব্লাউজ ক্যারি করতে পারেন না বলেই তা এড়িয়ে চলেন। এটি কোনও বাহবা পাওয়ার বিষয় নয়, বরং তাঁর ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা।
'ভালো মেয়ে' ইমেজ নিয়ে খোলাখুলি
নিজের ভিডিওতে শ্বেতা আরও যোগ করেন, কেউ যদি স্লিভলেস পরে তবে সে খারাপ নয়, আবার তিনি না পরলে তিনিও ভালো নন—এমন ধারণা একেবারেই ভুল। তবে মজার ছলেই তিনি বলেন, ‘আমি খুব ভালো মেয়ে।’ তাঁর কথায়, কেরিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে কেউ তাঁকে বলেছিলেন, শরীর না দেখালে তিনি বেচতে পারবেন না নিজেকে। সেই কথার জবাব দিতেই তিনি এমন মন্তব্য করেছিলেন।
বিতর্কে আঘাত পেলেও আত্মবিশ্বাস অটুট
পুরো বিতর্ক শ্বেতাকে অস্বস্তিতে ফেললেও তাঁর আত্মবিশ্বাসে টলন ধরাতে পারেনি। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, কাজের জগতে পোশাক নয়, প্রতিভাই আসল। অভিনয় দিয়ে দর্শকদের মন জয় করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য। পোশাকের পছন্দ নিয়ে তিনি আর কোনও মন্তব্য করবেন না বলেও জানান।
সমালোচনা না সমর্থন—দু’দিকেই আলো
টলিপাড়ার বাইরেও সাধারণ দর্শকদের মধ্যে শ্বেতার মন্তব্য নিয়ে চলেছে আলোচনা। একাংশ মনে করছেন, তিনি অত্যন্ত সাহসীভাবে নিজের মত প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, কেউ কেউ মনে করছেন, তাঁর বক্তব্য অন্যদের ছোট করছে। তবে সব মিলিয়ে একটি সাধারণ বার্তাই স্পষ্ট—নারীর পোশাক তার ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, যা নিয়ে প্রকাশ্যে বিতর্ক তোলা প্রয়োজন নেই।