সিডনি ইউনিভার্সিটির এআই ডিভাইস: মস্তিষ্কের তরঙ্গ থেকে টেক্সট

সিডনি ইউনিভার্সিটির এআই ডিভাইস: মস্তিষ্কের তরঙ্গ থেকে টেক্সট

সিডনি ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা একটি নন-ইনভেসিভ এআই ডিভাইস তৈরি করেছেন যা মস্তিষ্কের তরঙ্গ পড়ে চিন্তাকে টেক্সটে রূপান্তরিত করে।

আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) এবং নিউরোসায়েন্সের সংমিশ্রণে এমন একটি প্রযুক্তি এসেছে যা ভবিষ্যতের কল্পনাকে আজকের বাস্তবে পরিণত করছে। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি, সিডনির (UTS) বিজ্ঞানীরা এমন একটি পরিধানযোগ্য ডিভাইস (Wearable Device) তৈরি করেছেন যা একজন ব্যক্তির মস্তিষ্কে চলমান চিন্তাভাবনাগুলিকে সরাসরি শব্দে পরিবর্তন করতে পারে। এই প্রযুক্তি বিশেষভাবে उन लोगों के लिए उपयोगी বলে মনে করা হচ্ছে যারা কথা বলতে পারে না, পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা কোনো নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডারের কারণে যোগাযোগ করতে অক্ষম।

এই এআই-পাওয়ার্ড ডিভাইসটি কীভাবে কাজ করে?

এই ডিভাইসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল এর ইলেক্ট্রোএনসেফালোগ্রাম (EEG) সিস্টেম। এতে ব্যবহারকারীকে একটি বিশেষ ইইজি ক্যাপ পরতে হয়, যা মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ (brainwaves) ধরে।

  1. ডেটা ক্যাপচার: ইইজি ক্যাপটি রিয়েল টাইমে মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ রেকর্ড করে।
  2. ডেটা স্থানান্তর: এই ডেটা ওয়্যারলেস মাধ্যমে একটি কম্পিউটার বা প্রসেসিং ইউনিটে স্থানান্তরিত হয়।
  3. এআই ডিকোডিং: এআই ভিত্তিক ডিপ লার্নিং মডেল এই ডেটা ডিকোড করে এবং ব্যক্তি কী ভাবছে তা সনাক্ত করার চেষ্টা করে।
  4. ভাষা মডেল পরিষ্করণ: একটি বৃহৎ ভাষা মডেল (যেমন জিপিটি ভিত্তিক সিস্টেম) এই চিন্তাগুলোকে সঠিক এবং স্পষ্ট বাক্যগুলিতে রূপান্তরিত করে।
  5. আউটপুট: চূড়ান্তভাবে, আপনি যা ভাবছেন তা টেক্সট আকারে স্ক্রিনে প্রদর্শিত হয়।

কতদূর এগিয়েছে এই আবিষ্কার?

এই প্রযুক্তি এখনও তার প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। বিজ্ঞানীরা এটিকে সীমিত শব্দভাণ্ডার এবং বাক্য গঠন এর ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যাতে প্রাথমিক পরীক্ষাগুলি নির্ভুল হতে পারে। বর্তমানে, এই ডিভাইসটি প্রায় ৭৫% নির্ভুলতার সাথে ব্যবহারকারীর চিন্তাভাবনাগুলিকে টেক্সটে পরিবর্তন করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীদের লক্ষ্য এই নির্ভুলতা ৯০% বা তার বেশি করা, যাতে এই প্রযুক্তি ব্যবহারিকভাবে ব্যবহার করা যায়।

ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (BCI) হল এমন একটি প্রযুক্তি যা সরাসরি মানব মস্তিষ্ককে কম্পিউটার বা কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে যুক্ত করে। এর উদ্দেশ্য হল চিন্তা এবং মেশিনের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা।

আজ বিশ্বজুড়ে অনেক কোম্পানি এই দিকে কাজ করছে:

  • নিউরালিঙ্ক (এলন মাস্কের কোম্পানি): মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চিপ ইমপ্লান্ট করে চিন্তা দিয়ে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করা।
  • প্যারাড্রোমিক্স (আমেরিকা): মাইক্রোইলেকট্রোডসের সাহায্যে নিউরাল ডেটা উচ্চ নির্ভুলতার সাথে পড়া।

তবে এই প্রযুক্তিগুলোতে সার্জারির প্রয়োজন হয়, যার কারণে অনেকে এটি গ্রহণ করতে দ্বিধা বোধ করেন।

সিডনির প্রযুক্তিকে বিশেষ কী করে তোলে?

সিডনি ইউনিভার্সিটির এই প্রযুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে নন-ইনভেসিভ (Non-Invasive)। এর মানে হল যে এতে কোনও সার্জারির প্রয়োজন হয় না, বা কোনও চিপ ইমপ্লান্ট করা হয় না। শুধুমাত্র একটি ইইজি ক্যাপ পরলেই এই ডিভাইসটি কাজ করতে শুরু করে। এই সুবিধাটি এটিকে কেবল নিরাপদ করে তোলে না, বরং ব্যাপক ব্যবহারের জন্যও উপযুক্ত করে তোলে।

কারা সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবেন?

এই প্রযুক্তি বোবা, পক্ষাঘাতগ্রস্ত, ALS, স্ট্রোক এবং মোটর নিউরোন রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য একটি আশীর্বাদের চেয়ে কম নয়।

  • যেসব মানুষ কথা বলতে পারে না, তারা শুধু চিন্তা করেই যোগাযোগ করতে পারবে।
  • ভবিষ্যতে এটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) এবং ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • সেনাবাহিনী, মহাকাশ মিশনে বা অত্যন্ত কোলাহলপূর্ণ এলাকায় কর্মরত ব্যক্তিরাও এর থেকে উপকৃত হতে পারেন।

ভবিষ্যতের কল্পনা: চিন্তা থেকে প্রযুক্তি পর্যন্ত

এখন সেই দিন বেশি দূরে নয়, যখন আপনি কেবল চিন্তা করেই টেক্সট লিখবেন, ইমেল পাঠাবেন বা ভার্চুয়াল জগতে ইন্টারঅ্যাক্ট করবেন। এই প্রযুক্তি মানব এবং মেশিনের মধ্যে যোগাযোগের সংজ্ঞা সম্পূর্ণরূপে পরিবর্তন করতে চলেছে। গবেষকরা মনে করেন যে আগামী বছরগুলোতে এটিকে মোবাইল অ্যাপস, স্মার্টগ্লাসেস এবং আইওটি ডিভাইসগুলোর সাথে একত্রিত করা যাবে।

Leave a comment