মোবাইল প্রযুক্তির জগতে আবারও একটি বড় চমক এসেছে। যেখানে সবাই স্যামসাং এবং শাওমির মতো বড় ব্র্যান্ডের কাছ থেকে নতুন উদ্ভাবনের প্রত্যাশা করছিল, সেখানে চীনের ব্র্যান্ড টেকনো সবাইকে অবাক করে তিনটি ভাঁজ করা যায় এমন একটি ফোল্ডেবল স্মার্টফোন উপস্থাপন করেছে। এই ফোনটির নাম রাখা হয়েছে ফ্যান্টম আলটিমেট জি ফোল্ড কনসেপ্ট, যা তার বিশেষ ডিজাইন এবং বৈশিষ্ট্যের কারণে খুব জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
ফোনের সবচেয়ে বিশেষত্ব: তিনবার ফোল্ড করা যায় এমন বড় স্ক্রিন
এই ফোনের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এটি তিনবার ভাঁজ করা যায়। টেকনো দাবি করেছে যে এটি বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ট্রিপল ফোল্ডেবল স্মার্টফোন হবে। এই ফোনে মোট ৯.৯৪ ইঞ্চি আকারের বিশাল ফোল্ডেবল ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে, যা বিভিন্ন মোডে কাজ করে। ব্যবহারকারী চাইলে এই বড় স্ক্রিনটিকে দুটি অংশে ভাঁজ করে ছোট করতে পারে।
ইনওয়ার্ড ডুয়াল হিঞ্জ সিস্টেম দ্বারা সজ্জিত
ফোনের ডিজাইন সম্পর্কে কথা বললে, টেকনো এতে ইনওয়ার্ড ডুয়াল হিঞ্জ মেকানিজম ব্যবহার করেছে, যা হুয়াওয়ের ফোল্ডেবল ফোনের সাথে অনেকটা মিলে যায়। এই মেকানিজম ফোনটিকে মজবুত করে এবং বারবার ভাঁজ করলেও স্ক্রিনটিকে খারাপ হতে দেয় না। টেকনোর এই কনসেপ্ট ফোনটি দেখতে খুব প্রিমিয়াম এবং হালকা।
G আকারে ভাঁজ হয় ফোন
ফোনটিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে এটি G অক্ষরের মতো আকারে ভাঁজ হয়। এই কারণেই কোম্পানি এর নাম দিয়েছে ‘G Fold’। রিপোর্ট অনুযায়ী, অনারও তাদের আসন্ন প্রো মডেলে একই ধরনের G আকৃতির ডিসপ্লে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে টেকনোর এই পদক্ষেপ অন্যান্য কোম্পানির জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভাঁজ করার পরে বেধ কমে খুবই কম হয়ে যায়
এই ফোনটি যখন সম্পূর্ণরূপে ভাঁজ করা হয়, তখন এর বেধ ১১.৪৯ মিমি হয়ে যায়, যা অন্যান্য ফোল্ডেবল ফোন থেকে বেশ পাতলা। অন্যদিকে, যখন এটি সম্পূর্ণরূপে খোলা হয়, তখন এর বেধ মাত্র ৩.৪৯ মিমি থাকে। তুলনা করলে, Huawei Mate XT Ultimate-এর বেধ ৩.৬ মিমি, অর্থাৎ টেকনোর ফোনটি তার থেকেও পাতলা।
ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ এবং এআই বৈশিষ্ট্য
ফোনের পিছনে ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ দেখতে পাওয়া যাবে। কোম্পানির দাবি, এই ক্যামেরা দিয়ে ব্যবহারকারী কোনো অসুবিধা ছাড়াই বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলতে পারবে। এছাড়াও এতে অনেক এআই ভিত্তিক বৈশিষ্ট্য থাকবে, যা ছবি এবং ভিডিওর গুণমান আরও উন্নত করবে।
ব্যাটারি এবং উপাদানেও রয়েছে বিশেষত্ব
ফোনটিতে ৫,০০০mAh-এর বেশি ব্যাটারি দেওয়া হবে, যাতে বড় স্ক্রিন থাকা সত্ত্বেও ব্যবহারকারীর ব্যাটারি ব্যাকআপ নিয়ে কোনো অভিযোগ না থাকে। এছাড়াও ফোনটিকে হালকা ও শক্তিশালী করতে এতে টাইটান ফাইবার কভার ব্যবহার করা হয়েছে। এই কভার ফোনটিকে স্ক্র্যাচ এবং ক্ষতি থেকে রক্ষা করবে।
ডিজাইনে প্রযুক্তির দারুণ মিশ্রণ
টেকনোর এই ফোনটি শুধুমাত্র একটি কনসেপ্ট মডেল, কিন্তু এর বৈশিষ্ট্য এবং ডিজাইন থেকে এটা স্পষ্ট যে কোম্পানি ভবিষ্যতে এটি উৎপাদনে আনতে পারে। ফোনটিতে ডিজাইন এবং প্রযুক্তির যে মিশ্রণ দেখা যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতের ফোল্ডেবল স্মার্টফোনের দিকনির্দেশ করতে পারে।
স্যামসাং এবং শাওমিকে ছাড়িয়ে গেল টেকনো
স্যামসাং সম্প্রতি তাদের Galaxy Z Fold 7 এবং Flip 7 স্মার্টফোন বাজারে এনেছে। কিন্তু ট্রিপল ফোল্ডেবল ফোনের দৌড়ে টেকনো তাদের থেকে এগিয়ে গেছে। স্যামসাং-এর ট্রিপল ফোল্ডেবল ফোনটি এই বছরের শেষ নাগাদ লঞ্চ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তার আগে টেকনো তাদের কনসেপ্ট মডেল প্রদর্শন করে গেম পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ব্যবহারকারীদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা প্রমাণ হতে পারে এই ফোন
ফোল্ডেবল ফোন এখন ধীরে ধীরে বাজারে নিজেদের জায়গা করে নিচ্ছে। কিন্তু টেকনোর এই ট্রিপল ফোল্ডেবল ফোন ব্যবহারকারীদের একটি নতুন অভিজ্ঞতা দিতে পারে। এর বড় স্ক্রিন, হালকা ওজন, পাতলা বডি এবং শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করতে পারে। যদি এই ফোনটি শীঘ্রই বাজারে আসে, তবে এটি স্যামসাং এবং শাওমির মতো ব্র্যান্ডের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
কোম্পানি আপাতত লঞ্চের তারিখ প্রকাশ করেনি
টেকনো এখনও পর্যন্ত এই ফোনের আনুষ্ঠানিক লঞ্চের তারিখ প্রকাশ করেনি। কিন্তু টেক জগতে এটি নিয়ে খুব আলোচনা হচ্ছে। মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে যে এই ট্রিপল ফোল্ডেবল ফোন কবে বাজারে আসবে এবং এর দাম কত হবে।
ফোল্ডেবল মার্কেটে টেকনো তৈরি করে নিল আলাদা পরিচিতি
যেখানে এতদিন ফোল্ডেবল ফোনের ক্ষেত্রে স্যামসাং এবং হুয়াওয়েরই আধিপত্য ছিল, সেখানে টেকনো তাদের শক্তিশালী প্রবেশের মাধ্যমে সবাইকে চমকে দিয়েছে। কোম্পানির এই প্রথম ট্রিপল ফোল্ডেবল কনসেপ্ট ফোনটি কেবল প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী নয়, ডিজাইন এর ক্ষেত্রেও এটি কারও থেকে কম নয়।