ভোপালে মাদক চক্র: বিজেপি নেতার পদত্যাগ, রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য

ভোপালে মাদক চক্র: বিজেপি নেতার পদত্যাগ, রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য

মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা হাই-প্রোফাইল মাদক চক্রের ঘটনায় রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মাছলি গ্যাং-এর প্রধান ইয়াসিন আহমেদ মাছলির সঙ্গে জড়িত এই মাদক চক্রের তদন্ত চলাকালীন বিজেপি-ও একটি ধাক্কা খেয়েছে। গ্যাং-এর প্রধান ইয়াসিনের কাকা শহরিয়ার আহমেদ ওরফে শেরু, বিজেপি ভোপাল সংখ্যালঘু মোর্চার জেলা সভাপতির পদ থেকে নৈতিক দায়বদ্ধতা স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন।

ড্রাগস কেসে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার উল্লেখ

শহরিয়ার আহমেদ তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন যে তিনি দীর্ঘকাল ধরে দলের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন, কিন্তু সম্প্রতি ভোপাল পুলিশ কর্তৃক দায়ের করা একটি ফৌজদারি মামলায় তাঁর বড় ভাইয়ের পরিবারের সদস্যের নাম উঠে আসার কারণে দলের ভাবমূর্তি প্রভাবিত হচ্ছে। তিনি বলেন, মিডিয়াতে এই বিষয়টি ক্রমাগত শিরোনামে রয়েছে এবং এর প্রভাব দলের সুনামকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

শহরিয়ার স্পষ্ট করেছেন যে তিনি নিজে কোনও অবৈধ বা অপরাধমূলক কার্যকলাপের সাথে জড়িত নন, তবে একজন দলীয় কর্মী হিসাবে এই পরিস্থিতি তাঁর জন্য অসহনীয়। তাই তিনি পদ থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যাতে দলের মর্যাদা বজায় থাকে। তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছেন।

মাছলি গ্যাং-এর নেটওয়ার্ক এবং আরও একটি গ্রেফতার

ভোপাল পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ সম্প্রতি একটি হাই-প্রোফাইল ড্রাগস চক্রের পর্দাফাঁস করেছে। এই নেটওয়ার্কের প্রধান ইয়াসিন আহমেদ মাছলি, যিনি নিজেকে ভিডিও জকি বলে পরিচয় দিতেন, কিন্তু বাস্তবে ছিলেন মাদক চোরাচালানের একটি বড় মুখ। পুলিশের তদন্তে জানা গেছে যে ইয়াসিনের নেটওয়ার্ক ভোপালের নামী ক্লাব, বার এবং রেস্তোরাঁ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি এমডি ড্রাগস, কোকেন এবং চরস সরবরাহ করতেন।

ইয়াসিন ২ আগস্ট একটি বড় পার্টি আয়োজন করার কথা ছিল, যার প্রচার তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলিতেও করেছিলেন। যদিও, তার আগেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ রয়েছে যে তিনি হাই-প্রোফাইল পার্টিতে প্রথমে মেয়েদের বিনামূল্যে মাদক দিতেন এবং যখন তাদের নেশা হয়ে যেত, তখন তাদের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করতেন।

এই মামলায় পুলিশ ইয়াসিনের আরও এক ঘনিষ্ঠ সহযোগী অংশুল সিং ওরফে ভূরিকে গ্রেপ্তার করেছে। অংশুল কংগ্রেসের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের ছেলে এবং তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই অনেক ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রাজনৈতিক প্রভাব এবং আসন্ন প্রশ্ন

এই পুরো ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাবও দেখা যাচ্ছে। একদিকে যেখানে বিজেপির নেতা শহরিয়ার আহমেদকে পদ ছাড়তে হয়েছে, অন্যদিকে কংগ্রেসের প্রাক্তন কাউন্সিলরের ছেলে এই নেটওয়ার্কের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে উভয় প্রধান দলের নেতাদের পরিবারের নাম উঠে আসার কারণে রাজনৈতিক বাগযুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আপাতত পুলিশ পুরো মাদক নেটওয়ার্কের সংযোগকারী সূত্রগুলি জোড়ার চেষ্টা করছে এবং অন্যান্য সম্ভাব্য অভিযুক্তদের সন্ধান করা হচ্ছে। এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ভোপালের মতো শহরেও কীভাবে মাদকের জাল গভীরভাবে বিস্তৃত, এবং এতে জড়িত ব্যক্তিরা কীভাবে সামাজিকভাবে এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী।

Leave a comment