পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় টিএমসি বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহার বাড়িতে ইডির হানা। অর্থ পাচার এবং জাল নিয়োগের তদন্ত চলছে, সুপ্রিম কোর্ট কড়া অবস্থানে।
ইডি রেইড: পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি তদন্তে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসি) বিধায়ক জীবন কৃষ্ণ সাহার মুর্শিদাবাদের বাড়িতে বড় অভিযান চালিয়েছে। সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজ্যের অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে বেআইনিভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার জন্য ঘুষ নিয়েছিলেন। এই অভিযানটি অর্থ পাচার তদন্তের অংশ, যেখানে কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত অবৈধ আয় এবং অর্থের লেনদেনের তদন্ত করা হচ্ছে।
সাহার বাড়িতে ইডির হানা
জীবন কৃষ্ণ সাহার নাম প্রথমবার এপ্রিল ২০২৩-এ শিরোনামে আসে, যখন সিবিআই তাঁর বাড়িতে ৬০ ঘণ্টা ধরে দীর্ঘ তল্লাশি চালায়। সেই তল্লাশির সময় পুকুর থেকে মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছিল, যা প্রমাণ লোপাট করার জন্য ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। সিবিআই সাহাকে ১৭ এপ্রিল ২০২৩-এ গ্রেফতার করে। এরপর থেকে এই কেলেঙ্কারির তদন্ত ইডি এবং সিবিআই উভয় সংস্থাই করছে।
ইডি-র বর্তমান অভিযান সেই তদন্তেরই অংশ, যেখানে নতুন প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্র মারফত জানা গেছে, এই মামলায় সাহার স্ত্রী টগরী সাহা সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
শিক্ষক নিয়োগ কেলেঙ্কারির প্রকাশ
এই পুরো বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) সম্পর্কিত, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে যে হাজার হাজার শিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মচারীর নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে করা হয়েছে। বলা হচ্ছে যে এই নিয়োগের জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়া হয়েছিল। সাহার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে অনেক প্রার্থীর কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন।
তদন্তকারী সংস্থাগুলির দাবি, এই কেলেঙ্কারি শুধুমাত্র নিয়োগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এতে অর্থ পাচারের অনেক দিকও জড়িত। এই কারণেই ইডি এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে এবং কেলেঙ্কারিতে জড়িত অর্থের লেনদেনের গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টের কড়া অবস্থান
এপ্রিল ২০২৪-এ সুপ্রিম কোর্ট এই কেলেঙ্কারিতে হওয়া হাজার হাজার অবৈধ নিয়োগ বাতিল করে দিয়েছিল। আদালত নির্দেশ দিয়েছিল যে এই নিয়োগগুলির জায়গায় একটি নতুন এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হোক, যাতে যোগ্য প্রার্থীরা ন্যায়বিচার পান।
এর বিরুদ্ধে দায়ের করা পুনর্বিবেচনা পিটিশনগুলি সুপ্রিম কোর্ট ৫ আগস্ট ২০২৫-এ খারিজ করে দেয়, যার ফলে তার রায় আরও শক্তিশালী হয়। আদালত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে অবৈধভাবে নিযুক্ত হওয়া ব্যক্তিদের কোনো অবস্থাতেই চাকরিতে রাখা যাবে না।
টিএমসি নেতাদের গ্রেপ্তার এবং তদন্ত
এই কেলেঙ্কারিতে টিএমসির অনেক বড় নেতার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতারিতে তো পুরো রাজ্যে রাজনৈতিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। সাহার বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে যে তিনি তার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কেলেঙ্কারি করেছেন। সিবিআই এবং ইডি উভয় সংস্থাই ক্রমাগত এই মামলায় নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ করছে। অনেক নেতা ও অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং তদন্ত এখনও চলছে।