পর্যালোচনা: 'দ্য হান্ট: দ্য রাজীব গান্ধী অ্যাসাসিনেশন কেস' - একটি তথ্যপূর্ণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ ওয়েব সিরিজ

পর্যালোচনা: 'দ্য হান্ট: দ্য রাজীব গান্ধী অ্যাসাসিনেশন কেস' - একটি তথ্যপূর্ণ এবং ভারসাম্যপূর্ণ ওয়েব সিরিজ

নাগেশ কুকুনুর এই ওয়েব সিরিজে একজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার হত্যার ঘটনা অত্যন্ত প্রভাবশালীভাবে তুলে ধরেছেন, কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব বা এজেন্ডা ছাড়াই। শোটিতে কোনো মতাদর্শের প্রভাব দেখা যায় না, এবং এটিকে নিজের সুবিধার জন্য ব্যবহার করারও কোনো সুযোগ রাখা হয়নি।

বিনোদন: সনি লিভে মুক্তিপ্রাপ্ত নতুন ওয়েব সিরিজ The Hunt: The Rajiv Gandhi Assassination Case একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনাকে অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ এবং তথ্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করে। ১৯৯১ সালে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর হত্যা সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। এই হাই-প্রোফাইল কেস নিয়ে অনেক কিছু লেখা ও বলা হয়েছে, তবে নাগেশ কুকুনুরের পরিচালনায় তৈরি এই সিরিজটি এটিকে একটি নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখানোর সাহস দেখায়।

সিরিজটি কেমন

গল্পের কথা বলতে গেলে, এই শো লেখক অনিরুদ্ধ মিত্রের বই Ninety Days-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। গল্পটি শুরু হয় যখন রাজীব গান্ধীর হত্যা হয় এবং তারপর তদন্তকারী সংস্থাগুলির দৌড়াদৌড়ি, সূত্রগুলি মেলানোর চেষ্টা, এবং একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের পর্দা উন্মোচন করা হয়। সাতটি পর্বের এই সিরিজটি দর্শকদের বারবার ভাবতে বাধ্য করে যে কীভাবে একটি গণতান্ত্রিক দেশে এত বড় ষড়যন্ত্র ঘটানো হলো এবং তা সমাধানের জন্য কী ধরনের পেশাদার তদন্ত পদ্ধতির প্রয়োজন ছিল।

সবচেয়ে বিশেষ বিষয় হলো, এই পুরো গল্পে কোথাও কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা ঢোকানো হয়নি। সিরিজটি কোনো দলের পক্ষ নেয় না, আবার কারো দিকে আঙুলও তোলে না। এটি কেবল তথ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি একটি ইনভেস্টিগেশন ড্রামা, যা দেখায় কীভাবে একটি পেশাদার তদন্ত দল তাদের কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য্যের মাধ্যমে কেসটি সমাধান করেছে।

পরিচালনা ও অভিনয়

নাগেশ কুকুনুরের পরিচালনা সবসময়ই বাস্তবতার কাছাকাছি থেকেছে, এবং এখানেও তিনি এই কেসটিকে কোনো মশলাদার নাটক তৈরি না করে, অত্যন্ত পরিমিতভাবে চিত্রিত করেছেন। কোনো শ্লোগান নেই, কোনো আবেগপূর্ণ চালবাজি নেই — শুধু তথ্য, এবং সেই তথ্যের মাধ্যমেই গল্পের একটি শক্তিশালী বুনন তৈরি হয়েছে। অভিনয়ের কথা বলতে গেলে, অমিত সিয়ালের কাজ সত্যিই অসাধারণ।

ডি.আর. কার্তিকেয়ন (SIT প্রধান)-এর চরিত্রে তিনি একজন শান্ত, বুদ্ধিমান এবং পেশাদার অফিসারের চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। কোনো অতিরিক্ত অভিনয় নেই, কোনো অপ্রয়োজনীয় বীরত্ব নেই — অমিত সিয়াল দেখিয়েছেন একজন সত্যিকারের নেতা কীভাবে ঠান্ডা মাথায় তার দলকে নেতৃত্ব দেন। সাহিল বৈদ্য, ভগবতী পেরুমল, দানিশ ইকবাল, গিরিশ শর্মা এবং বিদ্যুত গার্গ-এর মতো অভিনেতারাও তাদের চরিত্রগুলিকে অত্যন্ত সত্যতা ও সততার সঙ্গে ফুটিয়ে তুলেছেন। ভগবতী পেরুমল (রাঘোথমনের) তামিল সংলাপের মাধ্যমে পুরো ঘটনাটিকে আরও বেশি বাস্তব করে তোলেন, যা এই কেসটিকে আরও বেশি বাস্তব মনে হতে সাহায্য করে।

সিরিজটির সিনেমাটোগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক এবং আর্ট ডিরেকশনও প্রশংসার যোগ্য। ৯০ দশকের পরিবেশ, পুলিশ স্টেশনের ভাষা, কেস ফাইলগুলির পরিবেশ — সবকিছু এত বিস্তারিতভাবে তৈরি করা হয়েছে যে মনে হবে আপনি যেন সেই জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছেন যেখানে এই কেসটির সমাধান করা হয়েছিল। মাঝে মাঝে আসল ফুটেজের ব্যবহার সিরিজটিকে আরও কার্যকর করে তোলে।

স্ক্রিনপ্লের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো, এটি দ্রুতগতির হওয়া সত্ত্বেও কোথাও একঘেয়ে লাগে না। ৫০-৫০ মিনিটের সাতটি পর্ব একটির পর একটি দেখতে ইচ্ছে করে। এমনকি মাঝে মাঝে তামিল ভাষার সংলাপও রয়েছে, যা পড়ার জন্য মনোযোগ দিতে হয়, তবে এটিই এটিকে একটি প্রামাণিক রূপ দেয়।

নাগেশ কুকুনুর অত্যন্ত বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন, এই সংবেদনশীল বিষয়টিকে কোনো রকম সেনসেশন তৈরি না করে দেখিয়েছেন। তিনি প্রতিটি চরিত্রকে যথেষ্ট স্থান দিয়েছেন, এবং গল্পের সত্যতাকেই আসল নায়ক বানিয়েছেন। এটি দেখায় যে একজন পরিচালক কতটা পরিণত হতে পারেন যখন তিনি কোনো এজেন্ডা চাপিয়ে দেওয়ার পরিবর্তে কেবল সত্য দেখাতে চান।

Leave a comment