থাইরোকেয়ার টেকনোলজিস ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে অসাধারণ ফল করেছে। কোম্পানি আয়, মুনাফা এবং অপারেটিং মার্জিনে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো পারফর্ম করেছে। এই শক্তিশালী পারফরম্যান্সের পর ব্রোকারেজ হাউস আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ থাইরোকেয়ারের শেয়ারের উপর ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রেখেছে এবং এর টার্গেট প্রাইস আগের এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৪৬০ টাকা করেছে। বর্তমানে এর শেয়ারের দাম ১২০৬ টাকার কাছাকাছি, অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যতে প্রায় ২১ শতাংশ লাভ পেতে পারেন।
দামী পরীক্ষা এবং রেট বাড়ার কারণে আয়ে উল্লম্ফন
কোম্পানি এই ত্রৈমাসিকে কিছু নতুন এবং বিশেষ পরীক্ষা চালু করেছে, যা সাধারণত ব্যয়বহুল। এছাড়াও, পুরনো টেস্টের দামও ১.৫ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এর সরাসরি প্রভাব কোম্পানির প্রতি রোগীর আয়ের উপর পড়েছে, যা এখন বেড়ে ৩৮৩ টাকা প্রতি রোগী হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যাটি প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। এর মানে হল যে থাইরোকেয়ার এখন কম রোগী থেকে বেশি আয় করতে পারছে।
উভয় ব্যবসায়িক মডেল থেকে এসেছে গতি
থাইরোকেয়ারের ব্যবসা দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত - একটি পার্টনারশিপ মডেল এবং অন্যটি ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেল। সাম্প্রতিক ফলাফল থেকে জানা যায় যে কোম্পানি উভয় বিভাগেই জোরালো বৃদ্ধি পেয়েছে। পার্টনারশিপ বিভাগে বার্ষিক ভিত্তিতে ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা গেছে, যেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি বিভাগে ২০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে কোম্পানি তার নেটওয়ার্কিং এবং পরিষেবা ক্রমাগত শক্তিশালী করছে।
মুনাফা এবং মার্জিনেও জোর
এই ত্রৈমাসিকে কোম্পানির অপারেটিং পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। থাইরোকেয়ারের নরমালাইজড ইবিআইটিডিএ মার্জিন এখন ৩৪.৫ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত বছরের একই ত্রৈমাসিকের তুলনায় ৩.৫ শতাংশ বেশি। তবে, এইবার কোম্পানি তার কর্মীদের ইএসওপি (এমপ্লয়ি স্টক অপশন প্ল্যান) এর অধীনে প্রায় ৫.৫৪ কোটি টাকার শেয়ার দিয়েছে, যার কারণে রিপোর্ট করা মার্জিন কমে প্রায় ৩০ শতাংশ হয়েছে। তা সত্ত্বেও, থাইরোকেয়ারের সামগ্রিক আর্থিক অবস্থা শক্তিশালী রয়েছে।
ফ্র্যাঞ্চাইজি বাড়ানোর পরিকল্পনায় কাজ দ্রুত
কোম্পানি এখন তাদের সম্প্রসারণের পরিকল্পনাকে আরও আগ্রাসী করছে। থাইরোকেয়ারের লক্ষ্য হল পুরো ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রায় ১২০০টি নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজি যুক্ত করা। এতে ছোট শহর এবং শহরগুলিতে কোম্পানির বিস্তার আরও দ্রুত হবে। এর পাশাপাশি কোম্পানির ফোকাস এখন সাধারণ টেস্ট থেকে সরে গিয়ে আরও বিশেষায়িত টেস্টের দিকে, কারণ এতে প্রতি রোগীর আয় বেশি এবং মুনাফাও বেশি থাকে।
আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজের রিপোর্টে ভরসা
ব্রোকারেজ হাউস আইসিআইসিআই সিকিউরিটিজ বিশ্বাস করে যে কোম্পানি ভবিষ্যতে আয় এবং মুনাফা উভয় ক্ষেত্রেই আরও ভালো করবে। এই কারণে ব্রোকারেজ কোম্পানি FY26 এবং FY27 এর EPS অনুমানও যথাক্রমে ১৯ শতাংশ এবং ১৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। ব্রোকারেজের মতে থাইরোকেয়ারের বৃদ্ধির কৌশল এবং মুনাফার দিক সঠিক এবং এতে শেয়ারের মূল্য বাড়তে পারে।
কর্মচারীরাও উপকৃত
কোম্পানি এই ত্রৈমাসিকে তাদের কর্মীদের স্টক অপশন দেওয়ার পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্পের অধীনে ৫.৫৪ কোটি টাকার শেয়ার দেওয়া হয়েছে, যা কর্মীদের মধ্যে কোম্পানির সাথে সম্পৃক্ততা এবং বিশ্বাস বাড়িয়েছে। এতে বোঝা যায় যে কোম্পানি শুধু মুনাফার দিকেই নয়, টিম বিল্ডিংয়ের দিকেও নজর দিচ্ছে।
ডিজিটাল সুবিধা এবং পরিষেবার প্রভাব
কোম্পানি তাদের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং হোম কালেকশন পরিষেবাকেও শক্তিশালী করেছে। এতে শুধু গ্রাহকের অভিজ্ঞতা ভালো হয়নি, কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালুও বেড়েছে। থাইরোকেয়ারের এই কৌশলই তাকে তার প্রতিযোগীদের থেকে আলাদা করে। অনলাইন বুকিং, বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ এবং ডিজিটাল রিপোর্টের সুবিধার কারণে গ্রাহকরা সহজেই যুক্ত হতে পারছেন।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে
থাইরোকেয়ারের ভালো পারফরম্যান্স এবং ভবিষ্যতের কৌশল দেখে বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। ব্রোকারেজ ফার্মের রিপোর্ট এবং শেয়ারের দামের টার্গেট এটাই দেখায় যে কোম্পানি আগামী দিনে আরও ভালো করতে পারবে। শেয়ার বাজারে হেলথকেয়ার সেক্টরের চাহিদাও ক্রমাগত বজায় রয়েছে, যার সুবিধা থাইরোকেয়ারের মতো কোম্পানিগুলি পাচ্ছে।