TMC-তে মমতা ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের কৌশল তৈরি করেছিলেন। ১২ মিনিটের অনলাইন মিটিংয়ে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হয়ে ইস্তফা দেন। এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংসদীয় দলের নেতা করা হয়।
West Bengal Politics: ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস (TMC)-এ বড়সড় পরিবর্তন আনার কৌশল তৈরি করা হয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দিল্লিতে দলের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের উদ্দেশ্যে নতুন দল তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মাত্র ১২ মিনিটের একটি অনলাইন বৈঠকে এই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র বিরোধিতা এবং ইস্তফার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়। এরপর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংসদীয় দলের নেতা ঘোষণা করা হয়, কিন্তু ভেতরে ভেতরে দলে অসন্তোষ স্পষ্ট দেখা যায়।
২০২৬ নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তুতি
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং TMC প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬-এ হতে চলা বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে আগে থেকেই সক্রিয় হয়ে গিয়েছেন। দিল্লিতে দলের উপস্থিতি আরও শক্তিশালী করতে এবং INDIA জোটে দলের অবস্থান স্থিতিশীল করতে তিনি তাঁর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলিত হয়ে সংগঠনে পরিবর্তনের পরিকল্পনা করেছিলেন।
এই কৌশল দলের অভ্যন্তরে শৃঙ্খলা, সমন্বয় এবং দিল্লি স্তরে निर्णायक নেতৃত্ব নিয়ে তৈরি করা হয়েছিল। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই পরিকল্পনার নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল যাতে তিনি দিল্লিতে দলের মুখ হতে পারেন, যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় দলের প্রধান মুখ হিসেবে থাকবেন।
নতুন দল এবং পুরনো অসন্তোষ
এই কৌশলের অধীনে লোকসভায় দলের মুখ্য সচেতক (Chief Whip) কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সংসদীয় দলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল। মমতা এবং অভিষেক চেয়েছিলেন যে নতুন এবং উদ্যমী দল দিল্লিতে TMC-কে নতুন রূপ দিক।
এনডিটিভির রিপোর্ট অনুযায়ী, এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয় একটি ১২ মিনিটের ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে। এই মিটিংয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে নতুন দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসন্তোষ এবং ইস্তফা
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলা মাত্রই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ হয়ে যান। তিনি মিটিংয়েই ইস্তফা দেন এবং এরপর মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলে নিজের অসন্তোষও প্রকাশ করেন। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে তাঁকে সাংসদদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের জন্য দায়ী করা হচ্ছে, যেখানে সংসদ অধিবেশন চলাকালীন অনেক সাংসদই উপস্থিত থাকেন না।
তিনি সরাসরি প্রশ্ন করেন যে যখন সাংসদরা নিজেরাই সংসদে আসেন না, তখন একা তাঁকে দোষ দেওয়া কতটা সঠিক। তিনি বাঁকুড়া, ব্যারাকপুর, দক্ষিণ কলকাতা এবং উত্তর কলকাতার মতো এলাকার সাংসদদের নাম উল্লেখ করে বলেন যে তাঁদের কখনও সংসদে দেখা যায় না।
TMC-র কৌশলে ধাক্কা
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আকস্মিক ইস্তফা এবং মন্তব্যে দলের কৌশলে বড়সড় ধাক্কা লাগে। এই পুরো ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়া এবং নিউজ মিডিয়ায় শিরোনামে আসে, যার ফলে দলের অভ্যন্তরীণ কলহ প্রকাশ্যে আসে।
এই ঘটনার পর দল সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও সংসদীয় দলের নেতার পদ থেকে সরিয়ে দেয় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই পরিবর্তন সাংগঠনিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু যেভাবে এটি হয়েছে, তা দলের ঐক্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন দায়িত্ব
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানোর পর এবার দল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে লোকসভায় সংসদীয় দলের নেতা নিযুক্ত করেছে। তাঁকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্তরসূরি হিসেবে মনে করা হয়। এখন দিল্লিতে দলের কৌশল, INDIA জোটের সঙ্গে যোগাযোগ এবং সংসদে দলের ভূমিকার নেতৃত্ব অভিষেকের হাতে থাকবে।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনায় অসন্তুষ্ট, কিন্তু তাঁরা এখন এগিয়ে যাওয়ার মনস্থির করেছেন। অভিষেক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে मनानेও চেষ্টা করেছেন এবং ইঙ্গিত দিয়েছেন যে তিনি শীঘ্রই দিল্লি এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করবেন।
মমতা-অভিষেকের সম্পর্কে নতুন সমীকরণ
গত কিছু সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মতভেদের খবর সামনে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনা থেকে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে এখন দুজনেই একই পথে হাঁটছেন। দুজনে মিলে দলের ভবিষ্যতের কৌশল নির্ধারণ করছেন।
সূত্রের খবর অনুযায়ী, TMC এখন দুটি স্তরে কাজ করছে—বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতৃত্ব সামলাবেন এবং দিল্লিতে অভিষেক দলের দিকনির্দেশ করবেন। এতে শুধু যে সংগঠন দ্বৈত নেতৃত্ব পাবে তাই নয়, কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ভারসাম্যও বজায় থাকবে।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ এবং প্রশ্ন
মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময় কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় নেতৃত্বের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভার্চুয়াল মিটিংয়ে তাঁর উপর সাংসদদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের অভিযোগ এনেছেন। তিনি প্রশ্ন করেন যে যখন সাংসদরা নিজেরাই সংসদে উপস্থিত থাকেন না, তখন তিনি একা কী করতে পারেন।