গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় তাপাহ: হংকং ও চীনে স্কুল বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল, লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হলো

গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় তাপাহ: হংকং ও চীনে স্কুল বন্ধ, ফ্লাইট বাতিল, লক্ষাধিক মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরানো হলো

হংকং এবং চীনে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় তাপাহ-এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে। প্রবল বাতাস ও বৃষ্টির কারণে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। প্রায় ৬০,০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

World Update: হংকং এবং প্রতিবেশী চীনের কিছু অংশে বর্তমানে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড় তাপাহ (Tropical Storm Tapah) এর প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। এই ঝড় কেবল প্রবল বাতাস নিয়ে আসেনি, বরং অবিরাম বৃষ্টিও মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছে। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাতাসের গতিবেগ অনেক অঞ্চলে প্রতি ঘন্টায় ১৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা স্বাভাবিক জনজীবনকে ব্যাহত করেছে।

স্কুল বন্ধ এবং ফ্লাইট বাতিল

জনগণের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে হংকং প্রশাসন সোমবার সকল স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। অন্যদিকে, চীনের শেনজেন (Shenzhen) শহরেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র স্কুল নয়, নিরাপত্তার কারণে অনেক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়েছে।

খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিমান পরিষেবাও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়েছে। হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছাড়ার এবং এখানে অবতরণকারী অনেক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় অংশেও ১০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়েছে।

গণপরিবহনে প্রভাব

ফেরি, বাস এবং ট্রেনের মতো গণপরিবহন পরিষেবাগুলিতেও ঝড়ের গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। হংকং-এর মেট্রো রেল ব্যবস্থা সীমিত বিরতিতে চলছে। এতে দৈনিক যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। অনেক অঞ্চলে মানুষকে ঘরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যাতে কোনও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়।

হংকং অবজারভেটরি (Hong Kong Observatory) টাইফুন ৮ (Typhoon 8) সংকেত জারি করেছে, যা দেশটির তৃতীয় সর্বোচ্চ ঝড় সতর্কীকরণ। এই সতর্কতা স্থানীয় সময় অনুযায়ী অন্তত সকাল ১১টা পর্যন্ত জারি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

তাপাহ ধীরে ধীরে হংকং থেকে সরে যাচ্ছে

সোমবার সকালে হংকং-এর ল্যান্টাউ দ্বীপ (Lantau Island) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে বাতাসের গতিবেগ একটানা ১০১ কিমি প্রতি ঘন্টা রেকর্ড করা হয়েছে। কিছু সময়ের জন্য এই গতিবেগ বেড়ে ১৫১ কিমি প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত পৌঁছেছিল।

সকাল ৪:৫৫ মিনিটে আবহাওয়া দপ্তর তিন-স্তরীয় সতর্কীকরণে সর্বনিম্ন স্তরের বৃষ্টির সতর্কতা জারি করে। এরপর জানানো হয় যে তাপাহ ধীরে ধীরে হংকং থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮:৫০ মিনিটে এই ঝড় চীনের গুয়াংডং (Guangdong) প্রদেশের তাইশান (Taishan) অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। আশা করা হচ্ছে যে আগামী সময়ে হংকং-এ এর প্রভাব কমে যাবে।

চীনেও সতর্কতা এবং ত্রাণ কার্যক্রম

হংকং-এর সংলগ্ন চীনের শেনজেন শহরেও তাপাহ-এর প্রভাব দেখা গেছে। নিরাপত্তার কারণে স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং সমস্ত সরকারি প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। চীনের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলি থেকে হাজার হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। রবিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৬০,০০০ মানুষকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছিল। প্রশাসন ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের জন্য বিপুল সংখ্যক দল মোতায়েন করেছে।

ঝড়ের কারণে এখন পর্যন্ত কত ক্ষতি

এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কোনও বড় ভূমিধস (landslide) বা বন্যার (flood) নিশ্চিত খবর পাওয়া যায়নি। তবে, গাছ পড়ে যাওয়া, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং পরিবহন পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার মতো ঘটনা ক্রমাগত ঘটছে।

হংকং প্রশাসন জানিয়েছে যে ঝড়ের উপর ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া দপ্তর ঝড়ের তীব্রতা কমলেই বাণিজ্যিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা হবে। তবে, স্কুল সারা দিন বন্ধ থাকবে।

মানুষের কাছে কী আবেদন

স্থানীয় প্রশাসন জনসাধারণকে আবেদন করেছে যে যতক্ষণ না অত্যন্ত জরুরি, ততক্ষণ বাড়ির বাইরে বের হবেন না। যাদের বাইরে বের হতেই হবে, তাদের সাবধানে থাকতে এবং নিরাপদ পথ ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। হংকং অবজারভেটরি এবং চীনের আবহাওয়া দপ্তর ক্রমাগত আপডেট জারি করছে। নাগরিকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে তারা যেন গুজব থেকে দূরে থাকেন এবং কেবল সরকারি তথ্যের উপর বিশ্বাস রাখেন।

Leave a comment