জিএসটি সংস্কারের পর এবার সরকার জমি, শ্রম আইন, কর ব্যবস্থা এবং বিচার ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হল নিয়ম সহজ করা, বিনিয়োগ ও ব্যবসাকে উৎসাহিত করা এবং সাধারণ মানুষের সরাসরি সুবিধা পৌঁছে দেওয়া। এই সংস্কারগুলির ফলে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং ভারতের উন্নয়নের গতি বাড়বে।
নতুন দিল্লি: জিএসটি সংস্কারের পর কেন্দ্রীয় সরকার পরবর্তী প্রজন্মের সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির নির্দেশনায় নীতি আয়োগের দলগুলিকে জমি, শ্রম আইন, কর এবং বিচার ব্যবস্থায় পরিবর্তনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জমির উচ্চমূল্য এবং জটিল নিয়ম বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে শ্রম আইন কর্মীদের সুরক্ষার জন্য আরও নমনীয় করার প্রয়োজন। কর ও আদালত সম্পর্কিত নিয়ম সহজ করে ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এই সংস্কারগুলি কার্যকর হলে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং সাধারণ মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে।
জমির উচ্চমূল্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
দেশে জমির উচ্চমূল্য শিল্প-ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। অনেক সময় বিনিয়োগকারীরা শুধু এই কারণে পিছিয়ে যান যে জমি কেনা এবং তাতে প্রকল্প শুরু করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এই সমস্যার সমাধান বের করার জন্য সরকার শহরগুলির কাছাকাছি ব্যক্তিগত শিল্প পার্ক তৈরির পরিকল্পনা বিবেচনা করছে। এই পার্কগুলিতে কম দামে জমি এবং প্রয়োজনীয় সুবিধা উপলব্ধ করানো হবে। এতে ছোট ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরাও স্বস্তি পাবেন।
শ্রম আইনে বড় পরিবর্তনের প্রস্তুতি
ভারতে শ্রম আইন দীর্ঘকাল ধরে জটিল এবং পুরনো বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই কারণগুলির জন্যই কোম্পানিগুলি কর্মচারী নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্তে সমস্যায় পড়ে। সরকারের পরিকল্পনা হল যে পুরনো আইনগুলি আর কার্যকর নয়, সেগুলি বাতিল করে নতুন এবং সহজ নিয়ম তৈরি করা। এই নিয়মগুলিতে কর্মীদের সুরক্ষা এবং কোম্পানিগুলির প্রয়োজন, উভয়ের মধ্যে ভারসাম্য রাখা হবে।
বিশেষ বিষয় হল, সরকার বেকার ভাতা (unemployment allowance) এর মতো ব্যবস্থার উপরও চিন্তা-ভাবনা করছে। অর্থাৎ, যদি কোনও কর্মীর চাকরি চলে যায়, তবে তাকে কিছু সময়ের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে। এতে কর্মীরা নিরাপত্তার অনুভূতি পাবেন এবং কোম্পানিগুলিও নিয়মের বোঝা থেকে মুক্ত হয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
কর নিয়ম সহজ হবে
ব্যবসায়ী ও কোম্পানিগুলির সবচেয়ে বড় চিন্তা কর নিয়ে। অনেক সময় কর কর্মকর্তারা পুরনো মামলাগুলি আবার খুলে দেন, যার ফলে কোম্পানিগুলির আস্থা টলে যায়। এই ভয়ের কারণে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসতে দ্বিধা করেন। এই সমস্যা মোকাবিলার জন্য সরকার কর নিয়মগুলিকে আরও স্বচ্ছ এবং সরল করার দিকে কাজ করছে।
এর পাশাপাশি, আদালতগুলিতে চুক্তি কার্যকর করতে যে সময় লাগে তা কমানোও জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে আদালতের মামলার নিষ্পত্তি হতে গড়ে চার বছরের বেশি সময় লেগে যায়। এটি ব্যবসা ও বিনিয়োগের পরিবেশের জন্য ভালো নয়।
নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে
সরকারের বিশ্বাস, যদি জমি, শ্রম ও কর সংক্রান্ত সংস্কারগুলি সঠিকভাবে কার্যকর হয়, তবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ দ্রুত বাড়বে। নতুন শিল্প-ব্যবসা খুলবে, যার ফলে দেশের যুবকরা চাকরির সুযোগ পাবে। পাশাপাশি উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়বে এবং ভারতের শিল্প ভিত্তি শক্তিশালী হবে।
নীতি আয়োগের সদস্য রাজীব গাবার নেতৃত্বে দুটি দল গঠন করা হয়েছে। এই দলগুলি নির্ধারণ করবে যে সংস্কারগুলি কোন ক্রমে কার্যকর করতে হবে এবং কীভাবে সাধারণ মানুষের কাছে তাদের সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে।
নতুন নিয়ম কার্যকর করার চ্যালেঞ্জ
অনেক শ্রম আইন ইতিমধ্যেই পরিবর্তন করা হয়েছে, কিন্তু সেগুলি এখনও পুরোপুরি কার্যকর করা হয়নি। অর্থনীতিবিদদের মতে, নতুন নিয়মগুলি সঠিকভাবে এবং দ্রুত কার্যকর হওয়া অত্যন্ত জরুরি। তবেই ব্যবসায় গতি আসবে এবং সংস্কারগুলির প্রকৃত প্রভাব দেখা যাবে।
সরকারের লক্ষ্য হল এমন একটি ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে বিনিয়োগকারীরা কোনও ভয় ও জটিল প্রক্রিয়া ছাড়াই ব্যবসা করতে পারেন। নিয়ম সহজ হবে, কর স্পষ্ট হবে এবং চুক্তিগুলির উপর আদালতের সিদ্ধান্ত সময়মতো আসবে। যখন এই সব হবে, তখন বিনিয়োগ বাড়বে, শিল্প-ব্যবসার প্রসার ঘটবে এবং উন্নয়নের গতিও দ্রুত হবে।