আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: বিশ্ব রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?

আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক: বিশ্ব রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?

আলাস্কায় ট্রাম্প ও পুতিনের মুখোমুখি সাক্ষাৎ ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি, ইউরোপের নিরাপত্তা, রাশিয়ার অর্থনীতি এবং বিশ্ব রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণিত হতে পারে। পাঁচটি বড় বিষয় - যুদ্ধবিরতির শর্ত, ইউক্রেনের সীমানা, ইউরোপের নিরাপত্তা, রাশিয়ার অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং বিশ্ব সরবরাহ শৃঙ্খলের উপর এই বৈঠকের প্রভাব পড়া নিশ্চিত।

Trump and Putin Meeting: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঐতিহাসিক সাক্ষাৎ আলাস্কায় হতে চলেছে, যার দিকে পুরো বিশ্বের নজর রয়েছে। এই বৈঠক শুধু ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির চেষ্টা নয়, বরং ইউরোপের নিরাপত্তা এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ক্রিমিয়া ও ডনবাসের উপর রাশিয়ার দাবি, ইউক্রেনের সীমানা নিয়ে বিতর্ক, ইউরোপীয় দেশগুলির নিরাপত্তা চিন্তা এবং পুতিনের উপর বাড়তে থাকা অর্থনৈতিক চাপ - এই সবকিছু এই সাক্ষাৎকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

যুদ্ধবিরতির চেষ্টা

সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এটাই যে, পুতিন এবং ট্রাম্প কোনো যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে পারবেন কি না। ট্রাম্পের লক্ষ্য স্পষ্ট যে, তিনি রাশিয়াকে কোনো চুক্তির জন্য রাজি করাবেন যাতে যুদ্ধ বন্ধ করা যায়। কিন্তু এর শর্ত কী হবে, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া বার বার এই কথার উপর জোর দিয়েছে যে, ক্রিমিয়া এবং ডনবাসের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকতে হবে এবং ইউক্রেনকে ন্যাটো থেকে বাইরে থাকতে হবে। যদি আলোচনায় এই দাবি পুনরায় করা হয়, তাহলে চুক্তির রাস্তা সহজ দেখা যায় না।

ইউক্রেনের সীমানার ইস্যু

ইউক্রেনের সীমানা নিয়ে যেকোনো চুক্তি সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিয়েভ এবং ইউরোপ উভয়ই স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা ভূমির বদলে শান্তি - এই ধরণের কোনো চুক্তি মানবে না। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ক্রমাগত বলে এসেছেন যে, ইউক্রেনের সীমানা সংবিধানে উল্লেখ করা আছে এবং তাতে পরিবর্তন শুধুমাত্র সংসদ এবং গণভোটের মাধ্যমেই সম্ভব। এই অবস্থান পুতিনের শর্ত থেকে একেবারে আলাদা। তাই আলোচনার জন্য এটি সবচেয়ে বড় বাধা হতে পারে।

ইউরোপের নিরাপত্তা চিন্তা

ইউরোপীয় দেশগুলোর ভয়, যদি রাশিয়াকে ইউক্রেনের কোনো অংশ ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে এটি ভবিষ্যতে আরও বড় হামলার জন্য একটি ঘাঁটি হতে পারে। এই কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ন্যাটো ক্রমাগত যুদ্ধবিরতির নজরদারির কথা বলছে। যদিও রাশিয়া স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা বাইরের নজরদারি মানবে না। ইউরোপ এটাও মনে করে যে, রাশিয়া শক্তিশালী হলে বাল্টিক এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর উপর বিপদ আরও বাড়তে পারে।

রাশিয়ার অর্থনীতির উপর চাপ

যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সেনা কিছু অংশে অগ্রগতি লাভ করলেও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুতিন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছেন। তেল এবং গ্যাসের আয় কমেছে। মুদ্রাস্ফীতি ক্রমাগত বাড়ছে এবং বিপুল সংখ্যক যুবক দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। শ্রমিকের অভাবে শিল্পে প্রভাব পড়েছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়া আন্তর্জাতিক বাজার থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এই কারণে পুতিনের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সহজ হবে না।

বিশ্ব বাজার এবং সাপ্লাই চেইন

এই যুদ্ধের প্রভাব শুধু ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং পুরো বিশ্বের সাপ্লাই চেইন বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। খাদ্য, জ্বালানি এবং ধাতুর দামের ব্যাপক ওঠানামা দেখা গেছে। চীন এবং ভারতের মতো দেশ রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কিনতে থাকায় মস্কো কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এখন প্রশ্ন হল, পুতিন এই জটিল পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হবেন, নাকি তিনি দীর্ঘমেয়াদী কৌশল গ্রহণ করে বিশ্বকে আরও বেশি অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেবেন।

Leave a comment