ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণায় ভারতীয় ফার্মা শেয়ারে ধস, স্বস্তিতে জেনেরিক ওষুধ

ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণায় ভারতীয় ফার্মা শেয়ারে ধস, স্বস্তিতে জেনেরিক ওষুধ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ১লা অক্টোবর ২০২৫ থেকে ব্র্যান্ডেড এবং পেটেন্ট করা ওষুধের উপর ১০০% আমদানি শুল্ক আরোপের ঘোষণা করেছেন। এর প্রভাবে ভারতীয় ফার্মা শেয়ারে ২-৪% পতন দেখা গেছে। জেনেরিক ওষুধ এই শুল্ক থেকে ছাড় পেয়েছে, তবে ব্র্যান্ডেড ওষুধ সরবরাহকারী সংস্থাগুলির জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।

ফার্মা স্টকের পতন: ডোনাল্ড ট্রাম্প ২৬শে সেপ্টেম্বর ঘোষণা করেছেন যে ১লা অক্টোবর ২০২৫ থেকে আমেরিকায় ব্র্যান্ডেড এবং পেটেন্ট করা ওষুধের উপর ১০০% শুল্ক (ট্যারিফ) কার্যকর হবে। এর উদ্দেশ্য হল আমেরিকান সংস্থাগুলিকে আমেরিকায় উৎপাদন বাড়াতে উৎসাহিত করা। এই সিদ্ধান্তের পর ভারতীয় ফার্মা শেয়ারে পতন দেখা গেছে, যার মধ্যে ন্যাটকো ফার্মা, গ্ল্যান্ড ফার্মা এবং সান ফার্মা অন্তর্ভুক্ত। জেনেরিক ওষুধের উপর এই শুল্ক কার্যকর হবে না, যা ভারতীয় ফার্মা সংস্থাগুলিকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে।

ভারতীয় ফার্মা শেয়ারের পতন

ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে সকাল থেকেই ভারতীয় শেয়ার বাজারে ফার্মা সেক্টর তীব্র ধাক্কা খেয়েছে। সকাল ৯:২২ টা পর্যন্ত নিফটি ফার্মা সূচক ২.৩ শতাংশ কমে গেছে। ন্যাটকো ফার্মা, গ্ল্যান্ড ফার্মা এবং সান ফার্মার মতো প্রধান শেয়ার ৪ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। এই সময়ে সমস্ত প্রধান ফার্মা শেয়ার লাল চিহ্নে ব্যবসা করছিল।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে ব্র্যান্ডেড ওষুধের উপর ১০০ শতাংশ শুল্কের প্রভাব সরাসরি আমেরিকান বাজারে সংস্থাগুলির আয় এবং ভারতীয় ফার্মা সংস্থাগুলির শেয়ার মূল্যের উপর পড়বে। তবে, জেনেরিক ওষুধ এই শুল্ক থেকে ছাড় পেয়েছে। ভারতের ফার্মা সংস্থাগুলি দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকান বাজারে জেনেরিক ওষুধ সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। ডঃ রেড্ডিজ, লুপিন, সান ফার্মা এবং অরবিন্ডো ফার্মার মতো সংস্থাগুলির আয়ের একটি বড় অংশ আমেরিকা থেকে আসে।

জেনেরিক ওষুধে স্বস্তি

জেনেরিক ওষুধের উপর শুল্ক আরোপ না করার সিদ্ধান্ত আমেরিকান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, যদি জেনেরিক ওষুধের উপরও আমদানি শুল্ক আরোপ করা হতো, তাহলে আমেরিকায় ওষুধের ঘাটতি এবং দামের ব্যাপক বৃদ্ধি দেখা যেত। এই কারণেই আমেরিকান সরকার জেনেরিক ওষুধকে ছাড় দিয়েছে।

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

কোঠাক ইনস্টিটিউশনাল ইক্যুইটিজের মতে, ভারত আমেরিকার প্রায় ৪৫ শতাংশ জেনেরিক ওষুধ সরবরাহ করে। এছাড়াও, বায়োসিমিলার্সের ১০-১৫ শতাংশ চাহিদাও ভারত থেকে পূরণ হয়। ভারতীয় জেনেরিক ওষুধের কারণে আমেরিকান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা যথেষ্ট সাশ্রয়ী হয়।

সান ফার্মা এবং বায়োকনের মতো সংস্থাগুলি আমেরিকায় ব্র্যান্ডেড ওষুধও সরবরাহ করে। বায়োকন সম্প্রতি আমেরিকায় একটি নতুন প্ল্যান্ট শুরু করেছে, তাই এটি শুল্কের প্রভাবের বাইরে। অন্যদিকে, সান ফার্মার মতো সংস্থাগুলির উপর এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।

ট্রাম্পের কঠোর নীতি

ট্রাম্প এর আগেও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি ফার্মা সংস্থাগুলির উপর ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে আমেরিকায় ব্যবসা পরিচালনাকারী সংস্থাগুলির আমেরিকাতেই উৎপাদন করা উচিত। ট্রাম্প বলেছেন যে সংস্থাগুলি আমেরিকায় বিনিয়োগ এবং উৎপাদন করার জন্য প্রায় দেড় বছর সময় পাবে, তারপর শুল্ক কার্যকর করা হবে।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট জানিয়েছেন যে আমেরিকান সরবরাহ শৃঙ্খল বিদেশী দেশগুলির উপর অত্যধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তিনি বলেছেন যে জীবন রক্ষাকারী ওষুধ এবং গুরুত্বপূর্ণ ঔষধপত্র আমেরিকাতেই তৈরি হওয়া উচিত, চীন বা অন্যান্য দেশে নয়। এই সিদ্ধান্ত আমেরিকান অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বিনিয়োগকারী এবং বাজারের উপর প্রভাব

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতীয় ফার্মা সংস্থাগুলির আমেরিকান আয় প্রভাবিত হতে পারে। এর প্রভাব শেয়ার বাজারে দেখা গেছে এবং ফার্মা সেক্টরে ব্যাপক বিক্রি হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা এখন এই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন যে সংস্থাগুলি আমেরিকান শুল্ক বিধি অনুসারে তাদের উৎপাদন এবং বিনিয়োগের কৌশল কীভাবে নির্ধারণ করে।

ট্রাম্পের শুল্ক ঘোষণার পর ভারতীয় ফার্মা সংস্থাগুলির শেয়ারের গতিবিধি এবং আমেরিকান বাজারে বিনিয়োগের অবস্থা আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নির্ধারণ করবে যে বাজার কত দ্রুত স্থিতিশীল হয়। জেনেরিক ওষুধে ছাড় পাওয়ায় আমেরিকান স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি হবে না, তবে ব্র্যান্ডেড ওষুধের দাম এবং সরবরাহের উপর প্রভাব পড়তে পারে।

Leave a comment