ভারতের গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন: ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব নেতৃত্বে ভারত

ভারতের গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন: ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্ব নেতৃত্বে ভারত

ভারত গ্রিন হাইড্রোজেনের ক্ষেত্রে দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে। ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনের অধীনে ২০৩০ সালের মধ্যে ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। শক্তিশালী সম্পদ, সরকারি নীতি এবং শিল্পের সহযোগিতায় ভারত অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিশ্ব বাজারেও নেতৃত্ব দিতে চলেছে।

গ্রিন হাইড্রোজেন: ভারতের গ্রিন হাইড্রোজেন উচ্চাকাঙ্ক্ষা এখন বিশ্বব্যাপী আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ৪ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে অনুমোদিত ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনের জন্য সরকার ১৯,৭৪৪ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে, যার লক্ষ্য দেশকে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদন ও রপ্তানির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা। S&P Global Commodity Insights-এর কো-প্রেসিডেন্ট ডেভ আর্নসবার্গার ভারতের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেছেন যে, পর্যাপ্ত নবায়নযোগ্য সম্পদ এবং শিল্প পরিকাঠামোর জোরে ভারত আগামী বছরগুলিতে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বিশ্ব বাজারেও একটি শক্তিশালী অবস্থান অর্জন করবে।

জ্বালানি নীতিতে গ্রিন হাইড্রোজেন

ভারত গ্রিন হাইড্রোজেনকে তার জ্বালানি নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে। দেশের লক্ষ্য হল আগামী বছরগুলিতে অভ্যন্তরীণ জ্বালানি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি গ্রিন হাইড্রোজেনের একটি বড় রপ্তানিকারক হওয়া। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও মনে করে যে ভারত এই ক্ষেত্রে নেতা হতে পারে।

আন্তর্জাতিক রিপোর্টে ভারতের প্রশংসা

এস এন্ড পি গ্লোবাল কমোডিটি ইনসাইটস-এর কো-প্রেসিডেন্ট ডেভ আর্নসবার্গার বলেছেন যে, গ্রিন হাইড্রোজেনের উপর ভারতের মনোযোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি জানান যে, ভারত শুধু তার জ্বালানি আত্মনির্ভরশীলতাকেই শক্তিশালী করছে না বরং বিশ্ব বাজারেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। তার মতে, ভারতের ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশন বিশ্বের জন্যও একটি বড় অর্জন প্রমাণ হতে পারে।

ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনের সূচনা

ভারত সরকার ৪ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে ন্যাশনাল গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনকে অনুমোদন দিয়েছে। এর জন্য ১৯,৭৪৪ কোটি টাকা বাজেট রাখা হয়েছে। এই মিশনের উদ্দেশ্য হল ভারত গ্রিন হাইড্রোজেন এবং এর সাথে সম্পর্কিত পণ্যগুলির উৎপাদন ও রপ্তানির একটি বৈশ্বিক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হোক। সরকার ২০৩০ সাল পর্যন্ত ৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

ভারতের কাছে ইতিমধ্যেই নবায়নযোগ্য শক্তি সম্পদের প্রাচুর্য রয়েছে। সৌর ও বায়ুশক্তির বড় প্রকল্পগুলি ভারতকে গ্রিন হাইড্রোজেন উৎপাদনে শক্তিশালী করবে। শিল্প কাঠামো এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতাও ভারতকে এই ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে। এই কারণেই আগামী বছরগুলিতে ভারত অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপীও একটি বড় খেলোয়াড় হতে পারে।

সহযোগিতার মাধ্যমে গতি বাড়বে

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, গ্রিন হাইড্রোজেন সেক্টরে গতি আনতে সরকার এবং বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে সমন্বয় অপরিহার্য। ব্যবসায়ী এবং সাপ্লাই চেইনের সাথে যুক্ত অংশীদাররা যদি একসাথে কাজ করে, তবে এই ক্ষেত্রটি আরও দ্রুত এগিয়ে যাবে।

ভারত সরকার সম্প্রতি স্টার্ট-আপগুলিকে উৎসাহিত করার জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা শুরু করেছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় নবীন ও নবায়নযোগ্য শক্তি মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী দিল্লিতে প্রথম গ্রিন হাইড্রোজেন আর অ্যান্ড ডি কনফারেন্সের উদ্বোধন করেন। এই উপলক্ষে ১০০ কোটি টাকার একটি ফান্ডিং স্কিম ঘোষণা করা হয়। এই স্কিমের অধীনে প্রতিটি প্রকল্পকে পাইলট স্তরে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেওয়া হবে।

নতুন প্রযুক্তির উপর জোর

এই কনফারেন্সে ২৫টি স্টার্ট-আপ তাদের প্রকল্পগুলি উপস্থাপন করে। এর মধ্যে ইলেক্ট্রলাইজার নির্মাণ, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ভিত্তিক অপ্টিমাইজেশন এবং বায়োলজিক্যাল হাইড্রোজেন সলিউশনের মতো নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই উদ্যোগ স্টার্ট-আপগুলিকে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য উৎসাহিত করবে।

ভারতের উপর বিশ্বের নজর

আজ যখন বিশ্ব পরিচ্ছন্ন শক্তির দিকে এগোচ্ছে, এমন সময়ে ভারতের গ্রিন হাইড্রোজেন যাত্রা অন্যান্য দেশের জন্যও অনুপ্রেরণা হতে পারে। আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতকে এখন গ্রিন হাইড্রোজেন সেক্টরের উদীয়মান নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

Leave a comment