ট্রাম্পের শুল্ক নীতি স্বৈরাচারী: রামগোপাল যাদব

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি স্বৈরাচারী: রামগোপাল যাদব

সাংসদ রামগোপাল যাদব ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকে স্বৈরাচারী আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেছেন যে আমেরিকাতে পরবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পরাজয় হবে, যার ফলে এই স্বৈরাচারিতা বন্ধ হবে।

রাম গোপাল: মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ভারতের উপর আমদানি শুল্ক (ট্যারিফ) দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্তে যেখানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, সেখানে ভারতেও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে সমাজবাদী পার্টির বর্ষীয়ান সাংসদ রামগোপাল যাদব কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এবং ট্রাম্পের এই 'স্বৈরাচারী' সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ভারত সহ অন্যান্য দেশকে কৌশলগত প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

আমেরিকার ট্যারিফ রাজনীতি নিয়ে তীব্র আক্রমণ

রামগোপাল যাদব স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে ট্রাম্পের নীতি কেবল ভারত নয়, বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও অস্থির করে তুলছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে আমেরিকা নিজের লাভের জন্য অন্যান্য দেশের উপর জোর করে বাণিজ্যিক চাপ সৃষ্টি করছে, এবং এটি গোটা বিশ্বের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তিনি বলেন, 'ট্রাম্পের এই ট্যারিফ সিদ্ধান্ত কেবল একতরফা বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি এক প্রকার অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এর ফলে ভারত-এর মতো উন্নয়নশীল দেশের পাশাপাশি অনেক ছোট দেশও প্রভাবিত হবে।'

ভারতের উপর ৫০% ট্যারিফ কেন লাগানো হল?

ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য হল, ভারত ও রাশিয়ার মধ্যে বাড়তে থাকা তেল ব্যবসার কারণে আমেরিকা অর্থনৈতিক ও কৌশলগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এই কারণে ট্রাম্প প্রথমে ২৫% এবং এখন ৫০% ট্যারিফ লাগু করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি এমনও বলেছেন যে ভারত ও রাশিয়ার অর্থনীতি 'ডেড ইকোনমি'-র স্থিতিতে রয়েছে, যা এখন আমেরিকার উপর নির্ভরশীল। রামগোপাল যাদব এর পাল্টা জবাবে বলেছেন যে 'ট্রাম্প নিজেই আমেরিকার মর্যাদাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামিয়ে আনছেন। ভারত কারও চাপে পড়ে নিজের বিদেশ নীতি পরিবর্তন করবে না।'

'স্বৈরাচারিতা' কিভাবে বন্ধ হবে: রামগোপাল যাদবের যুক্তি

রামগোপাল যাদব বলেছেন যে ট্রাম্পের এই প্রকার নীতি বন্ধ করার একমাত্র উপায় হল আমেরিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরিবর্তন। তিনি বলেন, 'আগামী বছর আমেরিকাতে প্রতিনিধি সভার (হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস) নির্বাচন হতে চলেছে। ট্রাম্পের পার্টি রিপাবলিকান যদি এই ধরনের নীতি জারি রাখে, তাহলে জনগণ তাদের জবাব দেবে।' তাঁর মতে, 'এই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির পরাজয় সম্ভাব্য এবং এর পরে ট্রাম্পের এই ধরনের স্বৈরাচারিতার উপর লাগাম পরানো যাবে।'

ভারতের জন্য কী পথ রয়েছে?

রামগোপাল যাদব ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন যে এই ট্যারিফ সংকট থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বিকল্প কৌশল তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন:

  • নতুন বাজারের সন্ধান করুন: ভারতের উচিত তার কাপড়, গয়না এবং হাতে তৈরি জিনিসপত্রের মতো পণ্য বিক্রির জন্য আমেরিকা ছাড়া অন্য দেশেও নতুন বাজার খুঁজে বের করা। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও ভিয়েতনামের মতো ছোট দেশও এখন বিশ্বজুড়ে তাদের পণ্য পাঠাচ্ছে।
  • গুণগত মান-এর উন্নতি: 'এক সময় ভারত টেক্সটাইলের শিরোমণি ছিল। কিন্তু গুণগত মানের অবনতি আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে। এখন জরুরি হল আমরা যেন প্রোডাক্ট কোয়ালিটি এবং ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে মনোযোগ দিই।'
  • কূটনৈতিক চ্যানেল সক্রিয় রাখা: 'আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বেরোবে। ভারতের উচিত চীন, রাশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানো এবং আমেরিকাকে কূটনৈতিক স্তরে বুঝিয়ে বলা।'

সরকারের রণনীতির উপর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া

রামগোপাল যাদব এই বিষয়টির প্রশংসা করেছেন যে ভারত সরকার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে রাশিয়াতে পাঠিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরও এই রণনীতির অংশ। তিনি বলেন, 'এটা জরুরি যে ভারত যেন বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে একা না করে। একটি কঠিন অর্থনৈতিক-কূটনৈতিক নীতির প্রয়োজন রয়েছে।'

আমেরিকার নীতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার সময়

রামগোপাল যাদব বলেছেন যে এখন শুধু জবাব দিলেই চলবে না, ভারতকে ভবিষ্যতের কথা ভেবে কঠিন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। আমাদের আত্মনির্ভর হতে হবে এবং এমন নতুন বাণিজ্যিক বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে, যাতে আমরা আমেরিকা-র মতো শক্তিশালী দেশের চাপে না আসি। ভারতের উচিত অন্য দেশের সঙ্গে মিলিত হয়ে এমন গোষ্ঠী তৈরি করা, যারা অর্থনৈতিকভাবে একে অপরের সমর্থন করতে পারে।

Leave a comment