ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বাতিল হচ্ছে আমেরিকার সাথে সুইজারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডের অস্ত্র চুক্তি

ট্রাম্পের শুল্কনীতির প্রভাবে বাতিল হচ্ছে আমেরিকার সাথে সুইজারল্যান্ড ও থাইল্যান্ডের অস্ত্র চুক্তি

ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রভাব এখন আমেরিকার অস্ত্র চুক্তিতেও দেখা যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ড F-35 চুক্তি এবং থাইল্যান্ড F-16 চুক্তি বাতিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Defence News: ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি এবং আমেরিকার বৈদেশিক কৌশলের প্রভাব এখন প্রতিরক্ষা চুক্তিতেও দেখা যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ড এবং থাইল্যান্ড আমেরিকার ফাইটার জেট কেনার চুক্তি থেকে হয় পিছিয়ে আসার চিন্তা করছে, অথবা বিকল্প পথ বেছে নিয়েছে। এটা শুধু এই দুটি দেশের সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটা একটা ইঙ্গিত যে, বিশ্বজুড়ে ছোট ও মাঝারি আকারের দেশগুলো আমেরিকার নীতি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে।

সুইজারল্যান্ড F-35 চুক্তি বাতিল করতে পারে

সুইজারল্যান্ড আমেরিকার প্রধান ডিফেন্স কোম্পানি লকহিড মার্টিনের থেকে 36টি F-35 ফাইটার জেট কেনার জন্য 9.1 বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছিল। কিন্তু এখন এই চুক্তিটি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এর কারণ হল, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প কর্তৃক সুইজারল্যান্ডের পণ্যের উপর চাপানো ভারী শুল্ক। ট্রাম্প প্রশাসন সুইস ঘড়ি, কফি ক্যাপসুল এবং অন্যান্য পণ্যের উপর প্রায় 39% পর্যন্ত ট্যাক্স বসিয়েছে। এতে সুইস সরকার ও সেখানকার জনগণের মধ্যে গভীর অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

এই অসন্তোষের কারণে অনেক রাজনীতিবিদ এবং নাগরিক প্রশ্ন তুলছেন যে, যখন আমেরিকা তাদের ব্যবসার ক্ষতি করছে, তখন তারা কেন আমেরিকার কাছ থেকে এত দামি ফাইটার জেট কিনবে। এই চুক্তি নিয়ে সুইস সংসদ এবং মিডিয়াতে বিতর্ক শুরু হয়েছে।

থাইল্যান্ডের সুইডিশ গ্রিপেন পছন্দ, কিনবে না আমেরিকার F-16

থাইল্যান্ড একটি বড় পদক্ষেপ নিয়ে আমেরিকার F-16 জেট কেনার চুক্তি বাতিল করেছে। এর পরিবর্তে, তারা সুইডেনের কোম্পানি সাব (SAAB)-এর গ্রিপেন ফাইটার জেটকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। প্রায় 600 মিলিয়ন ডলারের এই চুক্তিটি থাইল্যান্ড 10 মাসের পর্যালোচনার পর চূড়ান্ত করেছে। বিশেষ বিষয় হল এই সিদ্ধান্তটি এমন সময়ে এসেছে, যখন থাইল্যান্ড কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে সাম্প্রতিক সংঘর্ষে F-16 ব্যবহার করেছিল।

থাইল্যান্ডের বায়ুসেনা বলছে যে, গ্রিপেন তাদের নিরাপত্তা এবং কৌশলগত লক্ষ্যের জন্য বেশি উপযোগী। এছাড়াও, এই চুক্তি থাইল্যান্ডের সার্বভৌমত্বকেও শক্তিশালী করে, কারণ তারা এখন আমেরিকার উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকতে চায় না।

ভরসায় ফাটল

সুইজারল্যান্ড এবং থাইল্যান্ড উভয়ের সিদ্ধান্তের মূল কারণ হল ভরসায় ফাটল। আমেরিকার নীতি, বিশেষ করে ট্রাম্পের আমলে, মিত্র দেশগুলোর জন্য কম নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠছে। শুল্ক, সামরিক চাপ এবং কূটনৈতিক অস্থিরতা অনেক দেশকে ভাবতে বাধ্য করেছে যে, তারা তাদের নিরাপত্তা এবং বিদেশ নীতি নিয়ে আমেরিকার উপর কতটা ভরসা করতে পারবে।

শুল্কের কারণে বাণিজ্যিক ক্ষতি

ট্রাম্পের শুল্ক নীতি আমেরিকার বাণিজ্যিক অংশীদারদের প্রভাবিত করেছে। সুইজারল্যান্ডের উদাহরণে এটা স্পষ্ট যে, একটি অর্থনৈতিক ধাক্কা কিভাবে একটি প্রতিরক্ষা চুক্তিকেও প্রভাবিত করতে পারে। যখন কোনও দেশের পণ্যের উপর ভারী কর আরোপ করা হয়, তখন সেই দেশ রাজনৈতিক ও প্রতিরক্ষা স্তরেও আমেরিকার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে পারে।

গ্রিপেন: একটি সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য বিকল্প

সুইডেনের গ্রিপেন ফাইটার জেট একটি সাশ্রয়ী এবং প্রযুক্তিগতভাবে শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হয়। এর রক্ষণাবেক্ষণ সহজ এবং ছোট দেশগুলোর জন্য এটি একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প হয়ে উঠছে। F-35 এবং F-16-এর মতো আমেরিকান জেটের তুলনায় এটি বেশ সস্তা। এর পাশাপাশি, সুইডেনের রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা এবং স্থিতিশীলতাও একটি বড় কারণ, যে কারণে দেশগুলো এখন গ্রিপেনের মতো বিকল্পের দিকে ঝুঁকছে।

কৌশলগত স্বাধীনতার দিকে অগ্রসর হওয়া দেশ

ছোট এবং মাঝারি আকারের দেশগুলো এখন শুধু আমেরিকার উপর নির্ভর করতে চায় না। তারা তাদের প্রতিরক্ষা নীতিতে বৈচিত্র্য আনতে চায়, যাতে কোনও একটি দেশের চাপে না আসে। থাইল্যান্ডের গ্রিপেন বেছে নেওয়া সেই দিকেই একটি পদক্ষেপ। সুইজারল্যান্ডও তার নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে চায় এবং তাই তারা আমেরিকার সঙ্গে যে কোনও মূল্যে চুক্তি করতে রাজি নয়।

যদি সুইজারল্যান্ড F-35 চুক্তি বাতিল করে, তাহলে এটি আমেরিকার ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির জন্য একটি বড় ধাক্কা হবে। এতে অন্য দেশগুলোও একই পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত হতে পারে। ট্রাম্পের নীতির কারণে আমেরিকা একটি নির্ভরযোগ্য প্রতিরক্ষা সহযোগী হিসেবে দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

Leave a comment