উদয়পুর ফাইলস: কানহাইয়া লাল সাহু হত্যা মামলার শুনানি, সিনেমা মুক্তির ভবিষ্যৎ

উদয়পুর ফাইলস: কানহাইয়া লাল সাহু হত্যা মামলার শুনানি, সিনেমা মুক্তির ভবিষ্যৎ

কানহাইয়া লাল সাহু হত্যাকাণ্ড নিয়ে তৈরি হওয়া ক্রাইম ড্রামা থ্রিলার চলচ্চিত্র 'উদয়পুর ফাইলস' বর্তমানে বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। এই সিনেমাটি সেই চাঞ্চল্যকর এবং বীভৎস ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে, যা উদয়পুরের দর্জি কানহাইয়া লাল-এর দিনের আলোয় নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সারা দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল।

Udaipur Files: ২০২২ সালের আলোচিত কানহাইয়া লাল সাহু হত্যাকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত 'উদয়পুর ফাইলস' সিনেমাটি আবারও আলোচনার শিরোনামে। এই সিনেমাটিকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টে আজ গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হতে চলেছে, যেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সিনেমাটি মুক্তি পাবে কিনা, নাকি আপাতত এর ওপর স্থগিতাদেশ বজায় থাকবে। উল্লেখ্য, সিনেমাটির মুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদনটি করেছেন কানহাইয়া লাল সাহু হত্যা মামলার আসামি মোহাম্মদ জাভেদ। 

আসামির বক্তব্য হল, যতক্ষণ না পর্যন্ত আদালতে মামলার শুনানি সম্পন্ন হচ্ছে, ততক্ষণ এই সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া উচিত নয়, কারণ সিনেমার বিষয়বস্তু তাকে বিচার প্রক্রিয়া ছাড়াই দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা করছে।

পুরো ঘটনাটি কী?

'উদয়পুর ফাইলস' সিনেমাটি ২০২২ সালে উদয়পুরে দর্জি কানহাইয়া লাল সাহুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। এই মর্মান্তিক ঘটনা সারা দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। সিনেমার ট্রেলার মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিতর্ক শুরু হয়। আসামি মোহাম্মদ জাভেদ সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে দাবি করেছেন যে, এই সিনেমার মাধ্যমে জনগণের মনে তাঁর বিরুদ্ধে পূর্বধারণা (Prejudice) তৈরি করা হচ্ছে এবং এর ফলে তাঁর বিরুদ্ধে চলমান বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত হতে পারে।

আবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, যতক্ষণ না আদালতের মামলার নিষ্পত্তি হচ্ছে, ততক্ষণ সিনেমার মুক্তি স্থগিত করা হোক। এছাড়াও, আবেদনকারী অভিযোগ করেছেন যে সিনেমার ট্রেলার এবং প্রচার সামগ্রীতে তাঁকে এবং অন্যান্য আসামিদের আগেই দোষী হিসেবে দেখানো হচ্ছে।

সিনেমা নির্মাতাদের বক্তব্য

অন্যদিকে, সিনেমা নির্মাতাদের বক্তব্য হল 'উদয়পুর ফাইলস' একটি সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে তৈরি ক্রাইম-থ্রিলার, এবং এতে বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান জানানো হয়েছে। নির্মাতাদের মতে, সিনেমাটি সমাজের সামনে সেই বীভৎস ঘটনার সত্য তুলে ধরার চেষ্টা করছে, কোনো আসামিকে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া দোষী সাব্যস্ত করার চেষ্টা নয়।

সিনেমা নির্মাতারা দিল্লি হাইকোর্টের ১০ জুলাইয়ের সেই আদেশকেও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেছেন, যেখানে সিনেমার মুক্তির ওপর অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টে আজ এ বিষয়েও শুনানি হবে।

সিনেমা মুক্তির তারিখের দিকে দৃষ্টি

আজ সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর 'উদয়পুর ফাইলস'-এর মুক্তির তারিখ নিয়ে ছবিটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। যদি আদালত সিনেমাটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয়, তাহলে এর মুক্তির তারিখ দ্রুতই নির্ধারিত হতে পারে। আপাতত, আদালতের সিদ্ধান্তের জন্য সিনেমা নির্মাতাদের পাশাপাশি চলচ্চিত্র জগৎ এবং দর্শকও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।

জনগণের মধ্যে ভিন্ন মত

'উদয়পুর ফাইলস' নিয়ে জনগণের মধ্যেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একটি পক্ষ এটিকে সত্য তুলে ধরার চেষ্টা হিসেবে দেখছে, আবার অন্য পক্ষ এটিকে বিচার প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করে বিরোধিতা করছে। কিছু মানুষের মতে, সিনেমাটি সমাজকে ভুল বার্তা দিতে পারে, যেখানে সমর্থকরা বলছেন যে সত্যকে উন্মোচন করা জরুরি। আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় বিবেচনা করবে: 

  • সিনেমাটি কি বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে?
  • সিনেমাটিতে এমন কোনো বিষয়বস্তু আছে যা আসামিকে বিচার শুরুর আগেই দোষী দেখাচ্ছে?

যদি সুপ্রিম কোর্ট এমন কোনো ঝুঁকির সম্ভাবনা না দেখে, তাহলে সিনেমা মুক্তির পথ সুগম হতে পারে। কিন্তু যদি আদালত মনে করে যে এর ফলে মামলার ওপর প্রভাব পড়বে, তাহলে মুক্তির ওপর স্থগিতাদেশ বজায় থাকতে পারে।

Leave a comment