মার্কিন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও তাঁর কঠোর বাণিজ্য নীতি নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে তাঁর 'শূন্য শুল্ক চুক্তি' এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকা ইন্দোনেশিয়ার বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে, যেখানে ইন্দোনেশিয়াকে তাদের রপ্তানির উপর ১৯ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। এবার একই ধরনের চুক্তির ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে ভারতের সঙ্গেও।
ইন্দোনেশিয়া নতি স্বীকার করে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে
ট্রাম্প প্রশাসনের এই চুক্তিতে ইন্দোনেশিয়াকে অনেক ক্ষেত্রে বড় পরিমাণে জিনিস কিনতে হয়েছে। তারা আমেরিকা থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি পণ্য, ৫০টি বোয়িং জেট এবং ৪.৫ বিলিয়ন ডলারের কৃষি পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়াও, মার্কিন টেক্সটাইল বাজারে রপ্তানি করার জন্য এখন ইন্দোনেশীয় কোম্পানিগুলোকে ১৯ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে, যেখানে আগে এই কর ছিল ১০ শতাংশ।
ট্রাম্প এপ্রিল মাসে ইন্দোনেশিয়াকে ৩২ শতাংশ শুল্কের হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু আলোচনার পরে ১৯ শতাংশে বিষয়টি মীমাংসা হয়। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে আমেরিকার নীতি হল চাপ সৃষ্টি করে তাদের জন্য লাভজনক চুক্তি আদায় করা।
ভারতের সঙ্গেও কঠোর চুক্তি হতে পারে
এখন ভারত ও আমেরিকার মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনার দিকে নজর রাখা হচ্ছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ভারতের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেছেন যে আমেরিকা এখন ভারতীয় বাজারগুলিতে প্রায় প্রবেশাধিকার অর্জন করেছে। এর আগে ভারত আমেরিকার অনেক পণ্যের উপর শুল্ক কমিয়েছে, যা চুক্তির সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমেরিকার পরিকল্পনা হল ভারত-এর মতো বাজারগুলিতে তাদের পণ্যের জন্য আরও স্থান তৈরি করা এবং এর জন্য শুল্ক ছাড়ের সঙ্গে ভারতীয় বাজারে প্রবেশাধিকার চাওয়া।
শূন্য শুল্ক চুক্তির উদ্দেশ্য কী
ট্রাম্প প্রশাসনের 'শূন্য শুল্ক চুক্তি' আসলে একতরফা একটি সমঝোতা। এর মাধ্যমে আমেরিকা অন্য দেশের বাজারে পূর্ণ প্রবেশাধিকার চায়, কিন্তু নিজের দেশে তারা শুল্ক আরোপ করে। ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে হওয়া চুক্তিতে এটা স্পষ্ট দেখা গেছে যে সেখানে মার্কিন পণ্যের উপর কোনো কর লাগবে না, তবে ইন্দোনেশীয় পণ্যের উপর ১৯ শতাংশ কর আরোপ করা হবে।
এর উদ্দেশ্য হল আমেরিকার বাণিজ্য ঘাটতি কমানো এবং মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বিশ্বব্যাপী সুবিধা দেওয়া।
ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ এবং সুযোগ দুটোই
ভারতীয় শিল্পের জন্য ট্রাম্পের এই নীতি একদিকে যেমন উদ্বেগের কারণ, তেমনই কিছু ক্ষেত্রে সুবিধা নিয়ে আসতে পারে। স্টেট ব্যাঙ্কের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলির উপর ভারী শুল্ক আরোপের ফলে ভারতীয় কোম্পানিগুলো মার্কিন বাজারে ভালো প্রতিযোগিতার সুযোগ পেতে পারে।
টেক্সটাইল, রাসায়নিক এবং পাদুকা শিল্পের মতো ক্ষেত্রগুলিতে ভারত রপ্তানি বাড়ানোর সুযোগ পেতে পারে, যদি ভারত আমেরিকার সঙ্গে আলোচনায় তাদের স্বার্থ রক্ষা করে।
কূটনীতি এবং দর কষাকষি চলছে
ভারতের কর্মকর্তারা আমেরিকার সঙ্গে এই চুক্তি নিয়ে আলোচনায় ব্যস্ত রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভারতের চেষ্টা হল কৃষি পণ্যের উপর শুল্কে কিছু ছাড় দেওয়া, তবে দুগ্ধ, অটোমোবাইল, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইলেকট্রনিক্সের মতো ক্ষেত্রগুলিতে তাদের স্বার্থ রক্ষা করা।
ভারতের কৌশল হল শুল্কে আংশিক ছাড়ের বিনিময়ে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে ভারতীয় বাজারে কিছুটা প্রবেশাধিকার দেওয়া, তবে তাদের শিল্পকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো।
মার্কিন বাজারে অংশীদারিত্ব বাড়ানোর আশা
যদি ভারত আমেরিকার সঙ্গে এমন একটি চুক্তি করে যেখানে শুল্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে নির্ধারিত হয়, তবে তারা মায়ানমার এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলির তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকতে পারে। এর ফলে ভারতীয় পণ্যগুলো মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে।
তবে এটাও নিশ্চিত যে যদি আমেরিকাকে ভারতে শূন্য শুল্কের অনুমতি দেওয়া হয়, তাহলে এফএমসিজি এবং দুগ্ধজাত পণ্যের মতো সেক্টরে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে।
আগস্টের সময়সীমা এবং চাপ তৈরির কৌশল
রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প আমেরিকায় শুল্ক আরোপের জন্য ১লা আগস্টের সময়সীমা নির্ধারণ করেছেন। অর্থাৎ, ভারতের কাছে চুক্তি করার বা তাদের অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য বেশি সময় নেই।
ট্রাম্পের এই কৌশলকে বাণিজ্যিকভাবে চাপ তৈরির নীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে, যেখানে তিনি চুক্তির জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেশগুলোকে তাদের পছন্দের শর্তে রাজি করান।
ট্রাম্পের নীতির উপর সারা বিশ্বের নজর
ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই বাণিজ্য মডেল কেবল ভারত বা ইন্দোনেশিয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তিনি চীন, কানাডা, মেক্সিকো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো দেশগুলির সঙ্গেও একই ধরনের শুল্ক যুদ্ধের কৌশল গ্রহণ করেছেন। তাঁর দাবি, এর ফলে আমেরিকার সুবিধা হচ্ছে এবং বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে।