উত্তরপ্রদেশের বাগপতে নেপালী মহিলা তেজকুমারী মঙ্গলবার রাতে তার তিন সন্তানকে হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন। সাত বছরের দাম্পত্য জীবনের পরও হওয়া বিবাদ গোটা এলাকা এবং পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
বাগপত: উত্তরপ্রদেশের বাগপত জেলার টিকরি শহরে মঙ্গলবার রাতে একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা গোটা এলাকাকে নাড়িয়ে দিয়েছে। নেপাল বংশোদ্ভূত মহিলা তেজকুমারী তার তিন মেয়েকে হত্যা করার পর নিজেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। এই ঘটনা কেবল পরিবারকেই নয়, গোটা সমাজের কাছেই গভীর প্রশ্ন রেখে গেছে। পুলিশ তদন্তে নেমেছে, তবে এই পদক্ষেপের পেছনের আসল কারণ এখনও স্পষ্ট হয়নি।
তিন মেয়েকে নিয়ে তেজকুমারীর নতুন দায়িত্ব
তেজকুমারী মূলত নেপালের বাসিন্দা ছিলেন। প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের পর তিনি পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় চাকরি করতে শুরু করেন, যেখানে তার দেখা হয় বিকাশের সাথে। বিকাশও বিবাহবিচ্ছিন্ন ছিলেন। দুজনে একে অপরের সঙ্গ গ্রহণ করেন এবং সাত বছর আগে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা টিকরি শহরে বসবাস শুরু করেন এবং তাদের নতুন জীবন শুরু করেন।
শুরুতে জীবন স্বাভাবিক ও সুখকর ছিল। তেজকুমারী তার প্রথম কন্যা গুঞ্জন ছাড়াও বিয়ের পর আরও দুই মেয়ের—কিটটো এবং নীরা—মা হন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে বাড়িও পান, যা পরিবারকে স্থিতিশীলতার অনুভূতি দেয়। বাইরে থেকে সবকিছু ঠিকঠাক মনে হলেও, ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্কে নীরব উত্তেজনা দেখা দিতে শুরু করে।
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমীমাংসিত বিবাদ
পরিবারের সদস্য এবং প্রতিবেশীদের মতে, বিকাশ বেশ কয়েক মাস ধরে বাড়ির উঠোনে ঘুমোচ্ছিলেন। এমনকি খারাপ আবহাওয়াতেও তিনি এই অভ্যাস বজায় রেখেছিলেন। এটি স্পষ্ট করে যে দম্পতির মধ্যে কোনো গুরুতর মতপার্থক্য ছিল, যা সম্ভবত তারা জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি।
তেজকুমারী বাইরে থেকে স্বাভাবিক এবং গৃহবধূর ভূমিকা পালন করতেন বলে মনে হত। তিনি সাংসারিক কাজে ব্যস্ত থাকতেন এবং সন্তানদের দেখাশোনা করতেন। কিন্তু ভেতর ভেতর তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। এই মানসিক চাপ অবশেষে একটি ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়েছিল, যার কেউ অনুমান করতে পারেনি।
ফরেনসিক টিম প্রমাণাদি পরীক্ষা করছে
মঙ্গলবার রাতে তেজকুমারী বাড়ির ভিতরে ছিলেন এবং দরজা ভেতর থেকে তালাবদ্ধ ছিল। পুলিশ পৌঁছলে ঘরে চারটি মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। তিন শিশু এবং তাদের মা মৃত অবস্থায় ছিলেন। এই দৃশ্য দেখে গোটা শহরে শোকের ছায়া নেমে আসে।
সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো, দরজা তালাবদ্ধ কেন ছিল। সাধারণত আত্মহত্যার ঘটনায় কপাট বন্ধ করা দেখা যায়, কিন্তু তালা লাগানোর পরিস্থিতি তদন্তকে জটিল করে তুলেছে। পুলিশ মনে করছে, তেজকুমারী শিশুদের হত্যা করে আত্মহত্যা করেছেন, কিন্তু তারা এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। ফরেনসিক টিম প্রমাণাদি পরীক্ষা করছে এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে।
তেজকুমারীর মৃত্যু সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা
তেজকুমারী এবং তার মেয়েদের মৃত্যু কেবল একটি অপরাধমূলক ঘটনা নয়, বরং এটি সমাজের জন্য একটি গুরুতর সতর্কবার্তা। কেন নারীরা মানসিক অবসাদ এবং পারিবারিক বিবাদের কারণে এত বড় মূল্য দিতে বাধ্য হন? শিশুসুলভ নিষ্পাপ জীবনকে এর সাথে জড়িত করার সাহস কোথা থেকে আসে?
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সম্পর্কের মধ্যে যোগাযোগের অভাব এবং সমস্যা লুকিয়ে রাখার অভ্যাস অনেক সময় এই ধরনের দুর্ঘটনার জন্ম দেয়। পরিবার এবং সমাজকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে যাতে মানসিক অবসাদে ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা খোলাখুলিভাবে তাদের কথা বলতে পারেন। অন্যথায়, এই ধরনের ঘটনা কেবল পরিবারের জন্যই নয়, গোটা সমাজের জন্যও মারাত্মক প্রমাণিত হতে পারে।