উত্তরাখণ্ডে ভারতের দীর্ঘতম রেল সুড়ঙ্গ, জনসুর থেকে দেবপ্রয়াগ পর্যন্ত ১৪.৫৭ কিমি দীর্ঘ, সম্পন্ন হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ হিমালয়ের দুর্গম এলাকা দিয়ে চমোলা, রুদ্রপ্রয়াগ, পাউরি গড়ওয়াল, তেহরি গড়ওয়াল এবং দেরাদুনকে সংযুক্ত করবে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং রাজ্যের সংযোগ ও পর্যটন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
কর্ণপ্রয়াগ রেল সুড়ঙ্গ: উত্তরাখণ্ডের ১২৫ কিমি দীর্ঘ ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেল লিঙ্ক প্রকল্পের অংশ, ভারতের দীর্ঘতম রেল সুড়ঙ্গ, জনসুর থেকে দেবপ্রয়াগ পর্যন্ত ১৪.৫৭ কিমি দীর্ঘ, সম্পন্ন হয়েছে। হিমালয়ের দুর্গম এলাকায় এই প্রথম টিবিএম মেশিন ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সুড়ঙ্গ চমোলা, রুদ্রপ্রয়াগ, পাউরি গড়ওয়াল, তেহরি গড়ওয়াল এবং দেরাদুনকে সংযুক্ত করে রাজ্যের সংযোগ এবং পর্যটন ব্যবস্থাকে উন্নত করবে।
নির্মাণে চ্যালেঞ্জ এবং টিবিএম-এর ভূমিকা
এই প্রকল্পে সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত অবদান ছিল সুড়ঙ্গ খননকারী মেশিন টিবিএম (টানেল বোরিং মেশিন) অপারেটরদের। ৪৪ বছর বয়সী বলজিন্দর সিং বলেছেন যে এই কাজটি করার অভিজ্ঞতা ছিল এক রোলার কোস্টার রাইডের মতো। তিনি জানান যে সাধারণত মেশিনটিকে ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ কিলো নিউটন শক্তিতে চালানো হয়, কিন্তু ভূমিধস এবং ধ্বংসস্তূপের বাধা দূর করার জন্য ১৩০,০০০ কিলো নিউটন শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে।
নির্মাণের সময় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল হঠাৎ ভূমিধস, যা ৩.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সুড়ঙ্গ পথকে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছিল। তাঁর সহকর্মী রাম অবতার সিং রানা বলেছেন যে প্রায় ১০ দিন ধরে একটানা ১২ ঘন্টার শিফটে কাজ করে এই বাধা দূর করা হয়েছিল। যখন ধ্বংসস্তূপ সরানো হয়, তখন পুরো দল স্বস্তি এবং আনন্দ অনুভব করে।
হিমালয়ে প্রথমবার টিবিএম-এর ব্যবহার
কর্তৃপক্ষের মতে, এটি হিমালয় অঞ্চলে প্রথমবার কোনো রেল প্রকল্পের জন্য টিবিএম মেশিন ব্যবহার করা হয়েছে। এই মেশিন ব্যবহারের ফলে কেবল সময়ই বাঁচেনি, কাজের নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্বও নিশ্চিত হয়েছে। এই সুড়ঙ্গ রাজ্যের সমতল এবং পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে সংযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হবে।
রাজ্যের সংযোগ এবং উন্নয়নে প্রভাব
এই সুড়ঙ্গ চালু হওয়ার পর উত্তরাখণ্ডের সংযোগ ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসবে। ধর্মীয় ও পর্যটন স্থানগুলিতে রেলপথে পৌঁছানো সহজ হবে। এর ফলে কেবল রাজ্যের মধ্যেই নয়, জাতীয় রাজধানী অঞ্চলেও সংযোগ উন্নত হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পর পর্যটক এবং তীর্থযাত্রীরা সময় সাশ্রয় এবং সুবিধার সুবিধা উভয়ই উপভোগ করতে পারবেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটি উত্তরাখণ্ডের পরিকাঠামো এবং পর্যটন উন্নয়নে একটি গেম চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হবে। রাজ্যের শিল্প ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও এই রেল সংযোগের মাধ্যমে প্রসার লাভ করবে।
দেশের অন্যান্য দীর্ঘ রেল সুড়ঙ্গের সাথে তুলনা
ভারতে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি দীর্ঘ রেল সুড়ঙ্গ রয়েছে, যেগুলির দৈর্ঘ্য এবং গুরুত্ব ভিন্ন। পীর পাঞ্জাল রেলওয়ে সুড়ঙ্গ ১১.২১৫ কিমি দীর্ঘ এবং এটি বানিহাল-কাজিগুণ্ড রেলওয়ে সুড়ঙ্গ নামেও পরিচিত। সাঙ্গলদান রেলওয়ে সুড়ঙ্গ ৭.১ কিমি দীর্ঘ এবং এটি জম্মু-বারামুলা লাইনের কাটরা-বানিহাল অংশে অবস্থিত।
রাপুরু রেলওয়ে সুড়ঙ্গ অন্ধ্র প্রদেশের নেল্লোরে অবস্থিত এবং এর দৈর্ঘ্য ৬.৭ কিমি। মহারাষ্ট্রে কোঙ্কন রেলওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ কারবুডে সুড়ঙ্গ ৬.৫ কিমি দীর্ঘ। ওড়িশার মালিনগুড়া সুড়ঙ্গ ৪.৪২ কিমি দীর্ঘ, যা জাপানি প্রকৌশলীরা ১৯৬১-৬৬ সালের মধ্যে তৈরি করেছিলেন। এই সুড়ঙ্গগুলির তুলনায় ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ সুড়ঙ্গটি দেশের দীর্ঘতম এবং প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প।