উত্তর ভারতের বহু অঞ্চলে, বিশেষ করে দিল্লি-এনসিআর-এ, বর্তমানে তীব্র তাপদাহের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং তাপমাত্রা রেকর্ড সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। তীব্র রোদ এবং গরম বাতাসের ফলে জনজীবনে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।
আবহাওয়ার আপডেট: উত্তর ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে এখন তাপপ্রবাহ চরম সীমায় পৌঁছেছে। রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের মতো রাজ্যগুলিতে লোকজন তীব্র তাপদাহ এবং রোদের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, দিল্লি-এনসিআর-এ আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ঝড়ো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে, যা কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। অন্যদিকে, অসম এবং কেরলের আবহাওয়ার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অসমে অবিরত বৃষ্টিপাতের ফলে জলাবদ্ধতার সমস্যা দেখা দিয়েছে, আর কেরলের ক্ষেত্রে এ বছর মৌসুমি বৃষ্টি নির্ধারিত সময়ের আগেই আসতে পারে।
দিল্লি-এনসিআর-এ ঝড়ো বৃষ্টিপাতের সতর্কতা
দিল্লিবাসীদের জন্য স্বস্তির খবর। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (IMD)-এর মতে, দিল্লি-এনসিআর-এ আগামী তিন দিনের মধ্যে হালকা বৃষ্টিপাত এবং ধুলোবালির ঝড়ো বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ২৫ মে পর্যন্ত ৩০ থেকে ৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে তীব্র বাতাস বয়ে যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে বাতাসের বেগ ৫০ থেকে ৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা কমবে এবং তাপদাহ থেকে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যাবে। IMD স্পষ্ট করে বলেছে যে আগামী সাত দিন তাপদাহ চলার সম্ভাবনা কম, যা দিল্লিবাসীদের জন্য বড় স্বস্তির বার্তা।
উত্তরপ্রদেশে তাপদাহ অব্যাহত, তবে বৃষ্টির সম্ভাবনা
উত্তরপ্রদেশে তাপদাহ জনজীবনে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। লখনউ, কানপুর, প্রয়াগরাজ এবং বারাণসী-র মতো শহরগুলিতে তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। তবে, আবহাওয়া বিভাগ ২৫ মে পর্যন্ত রাজ্যের বেশ কিছু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত এবং বজ্রপাতসহ ঝড়ো বাতাসের সম্ভাবনা প্রকাশ করেছে। পশ্চিম এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশের কিছু জেলায় বজ্রপাত এবং ৪০ থেকে ৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে বাতাস বয়ে যাওয়ার সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর ফলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা রয়েছে, যা তীব্র তাপদাহ থেকে জনসাধারণের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।
বিহারে আবহাওয়ার পরিবর্তন, সীমান্ত অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত
বিহারে পশ্চিমা বাতাসের তীব্রতা কমে যাওয়া এবং পূর্বা বাতাসের প্রভাবে আবহাওয়া পরিবর্তিত হয়েছে। সীমান্ত অঞ্চল যেমন, অররিয়া, কিষাণগঞ্জ, সুপৌল এবং পূর্ব চম্পারণে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই অঞ্চলগুলিতে ৪০-৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রাজধানী পটনা সহ মধ্য বিহারের অঞ্চলে উমস ভরা গরম থাকবে, তবে কিছু অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। তাপমাত্রায় বড় ধরনের পরিবর্তন হবে না, তবে আবহাওয়ার আর্দ্রতা মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে।
রাজস্থানে তাপদাহের তীব্রতা অব্যাহত
রাজস্থান বর্তমানে তীব্র তাপদাহের কবলে পড়েছে। পিলানিতে তাপমাত্রা ৪৬.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং চুরুতে ৪৬.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বিকাণের, জোধপুর এবং শেখাবাটির বেশ কিছু অঞ্চলে আগামী ৩-৪ দিন তাপদাহ চলার সতর্কতা রয়েছে। তবে, উদয়পুর এবং কোটা বিভাগে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিকাণের এবং জোধপুর বিভাগে ৩০-৪০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে ধুলোবালির ঝড়ো বাতাস বয়ে যেতে পারে, যার ফলে দৃশ্যমানতা কমতে পারে।
অসমে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে জনজীবন বিপর্যস্ত
অসমের রাজধানী গুয়াহাটিতে গত কয়েকদিন ধরে হচ্ছে ভারী বৃষ্টিপাত, যার ফলে মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। আবাসিক এলাকা এবং রাস্তাঘাটে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ রাজ্যের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে আগামী তিন দিন ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করেছে। কিছু স্থানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২০০ মিমি পর্যন্ত পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে বন্যার মতো পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রশাসন সতর্কতা জারি করে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
কেরলে দ্রুত আসবে মৌসুমি বৃষ্টি
দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরলে এবার মৌসুমি বৃষ্টি নির্ধারিত সময়ের আগেই আসতে চলেছে। আবহাওয়া বিভাগের মতে, ২৩ থেকে ২৭ মে-র মধ্যে কেরলে মৌসুমি বৃষ্টি আসার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে, যা স্বাভাবিক সময় (১ জুন) এর আগে। যদি এই পূর্বাভাস সঠিক হয়, তাহলে ২০০৯ সালের পর প্রথমবারের মতো দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বৃষ্টি এত তাড়াতাড়ি কেরলে পৌঁছাবে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়ের আগে মৌসুমি বৃষ্টি কৃষিকাজ এবং জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ হতে পারে।
