উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০২৫: এনডিএ প্রার্থীর জয় প্রায় নিশ্চিত, তবে আড়াআড়ি ভোটের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০২৫: এনডিএ প্রার্থীর জয় প্রায় নিশ্চিত, তবে আড়াআড়ি ভোটের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন ২০২৫ আগামীকাল। এনডিএ প্রার্থী সি পি রাধাকৃষ্ণের জয় প্রায় নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। ওয়াইএসআর কংগ্রেস সমর্থন জানিয়েছে, কিন্তু বিজু জনতা দল (বিজেডি) এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতি (বিআরএস) এর অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। আড়াআড়ি ভোট (ক্রস ভোটিং) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

Vice President Election: ভারতে উপরাষ্ট্রপতি (Vice President) পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদগুলির মধ্যে একটি। উপরাষ্ট্রপতি কেবল রাষ্ট্রপতি অনুপস্থিত থাকলে তাঁর দায়িত্ব পালন করেন না, তিনি রাজ্যসভার অধ্যক্ষও হন। সংসদীয় কার্যাবলী সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর। আর এই কারণেই উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং শাসক দল এবং বিরোধী দল উভয়ের জন্যই এটি একটি মর্যাদার লড়াই হয়ে দাঁড়ায়। এবারের নির্বাচনকেও বিশেষ বলে মনে করা হচ্ছে, কারণ এতে শাসক দল এনডিএ (NDA)-র পাল্লা ভারি মনে হলেও, পরিসংখ্যান অনুযায়ী পরিস্থিতি ততটা সহজ নয়।

ভোটদানের পদ্ধতি

উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পদ্ধতি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের থেকে কিছুটা ভিন্ন। এতে শুধুমাত্র সাংসদরা ভোট দেন। বর্তমানে লোকসভায় ৫৪২ জন এবং রাজ্যসভায় ২৩৯ জন সদস্য রয়েছেন। উভয় কক্ষ মিলিয়ে মোট ৭৮১ জন সাংসদ ভোট দেবেন। জয়লাভের জন্য যেকোনো প্রার্থীর কমপক্ষে অর্ধেকের অর্থাৎ ৩৯১টি ভোট পেতে হবে। ভোটদানের প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ গোপন ব্যালট (Secret Ballot) পদ্ধতির মাধ্যমে হয়। অর্থাৎ, সাংসদরা তাঁদের দলীয় নির্দেশিকা থেকে সরে এসেও ভোট দিতে পারেন এবং এই বিষয়ে কেউ জানতেও পারবে না। আর এই কারণেই এই নির্বাচনে প্রায়শই আড়াআড়ি ভোট (ক্রস ভোটিং) দেখা যায়।

পূর্বের রেকর্ড

২০২২ সালে অনুষ্ঠিত উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএ (NDA) প্রার্থী জগদীপ ধনখড় এক অসাধারণ জয় অর্জন করেছিলেন। তিনি মোট ৫২৮টি ভোট পেয়েছিলেন, যা মোট ভোটের প্রায় ৭৫ শতাংশ। এই জয় এত বড় ছিল কারণ সেই সময় বেশ কয়েকটি বিরোধী দলও এনডিএ-কে (NDA) সমর্থন করেছিল। ওয়াইএসআর কংগ্রেস (YSR Congress), বিজু জনতা দল (BJD) এবং বেশ কয়েকজন নির্দল সাংসদও ধনখড়কে ভোট দিয়েছিলেন। বিরোধী পক্ষ থেকে মার্গেরিট আলভা (Margaret Alva) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন, কিন্তু তিনি মাত্র ১৮২টি ভোট পেয়েছিলেন। এই নির্বাচন প্রমাণ করেছিল যে বিরোধী পক্ষ ঐক্যবদ্ধ নয় এবং এনডিএ (NDA) একটি শক্তিশালী কৌশলের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় জয়লাভ করেছে।

বর্তমান পরিস্থিতি

এইবার এনডিএ (NDA) তামিলনাড়ু থেকে আসা প্রবীণ নেতা সি পি রাধাকৃষ্ণনকে (C P Radhakrishnan) প্রার্থী করেছে। পরিসংখ্যান বলছে তাঁর জয় প্রায় নিশ্চিত, কারণ এনডিএ (NDA)-এর হাতে ইতিমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং বেশ কয়েকটি সহযোগী দলও তাঁকে সমর্থন করছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এবারের ভোট শতাংশ অতীতের মতো অতটা বেশি হবে না। আড়াআড়ি ভোটের সম্ভাবনা এবং কিছু সহযোগী দলের নীরবতা পরিস্থিতিকে কিছুটা আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

ওয়াইএসআর কংগ্রেসের (YSR Congress) সমর্থন

অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জগন্মোহন রেড্ডির (Jaganmohan Reddy) দল ওয়াইএসআর কংগ্রেস (YSRCP) এবারও এনডিএ-কে (NDA) সমর্থন করার ঘোষণা দিয়েছে। দলটির লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে মোট ১১ জন সাংসদ রয়েছেন। ওয়াইএসআর কংগ্রেসের (YSR Congress) সমর্থনের ফলে রাধাকৃষ্ণের (Radhakrishnan) জয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়। ওয়াইএসআর কংগ্রেস (YSRCP) আগেও এমন নির্বাচনে এনডিএ-র (NDA) পাশে দাঁড়িয়েছে এবং এবারও তাদের একই অবস্থান দেখা যাচ্ছে।

বিজেডি (BJD) এবং বিআরএস (BRS)-এর দিকে নজর

বিজু জনতা দল (BJD) এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS) এইবার "কিংমেকার" (Kingmaker) অর্থাৎ নিয়ামকের ভূমিকায় আবির্ভূত হচ্ছে। বিজু জনতা দল (BJD)-এর ৭ জন সাংসদ রয়েছেন, অন্যদিকে ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS)-এর ৪ জন সাংসদ রয়েছেন। উভয় দলই এখনও তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি। গতবার বিজু জনতা দল (BJD) এনডিএ-কে (NDA) সমর্থন করেছিল, যার ফলে ধনখড় বড় জয় পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। যদি বিজু জনতা দল (BJD) এবং ভারত রাষ্ট্র সমিতি (BRS) উভয়ই এনডিএ-কে (NDA) সমর্থন করে, তবে রাধাকৃষ্ণের (Radhakrishnan) ভোটের সংখ্যা আরও বাড়বে। যদি তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখে, তবে এনডিএ (NDA) অতীতের মতো অত ভোট এবার পাবে না।

আপ (AAP) সাংসদ নিয়ে অনিশ্চয়তা

আম আদমি পার্টি (AAP)-এর (AAP) সাংসদ স্বাতী মালিওয়ালকে (Swati Maliwal) নিয়েও এই নির্বাচনে অনিশ্চয়তা রয়েছে। স্বাতী মালিওয়ালের (Swati Maliwal) সাথে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সম্পর্ক সম্প্রতি तनावপূর্ণ (tension-filled) রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, তিনি দলীয় নির্দেশিকা মেনে ভোট দেবেন নাকি অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন, তা স্পষ্ট নয়। সংসদে আপ (AAP)-এর (AAP) মোট ১০ জন সাংসদ রয়েছেন। যদি সকল সাংসদ বিরোধী প্রার্থীকে ভোট দেন, তবে বিরোধীরা কিছুটা শক্তি পাবে, কিন্তু যদি আড়াআড়ি ভোট (cross voting) হয়, তবে তা এনডিএ-র (NDA) পক্ষেই যাবে।

নির্দল সাংসদদের ভূমিকা

লোকসভায় ৭ জন নির্দল সাংসদও উপস্থিত রয়েছেন। সাধারণত নির্দল সাংসদরা শাসক দলের সমর্থন করেন, কারণ তাঁদের নিজ নিজ অঞ্চলের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তার প্রয়োজন হয়। এই নির্বাচনেও সম্ভাবনা এটাই যে, তাঁরা এনডিএ (NDA) প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁরা এখনও কোনো বিবৃতি দেননি।

আনুমানিক ভোট এবং সম্ভাব্য ফলাফল

যদি এনডিএ (NDA) ওয়াইএসআর কংগ্রেস (YSR Congress), নির্দল সাংসদ এবং তাদের সকল সহযোগী দলের সমর্থন পায়, তবে সি পি রাধাকৃষ্ণের (C P Radhakrishnan) প্রায় ৪৫৮টি ভোট পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সংখ্যা জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৩৯১টি ভোটের চেয়ে অনেক বেশি, তবে অতীতের ৫২৮টি ভোটের চেয়ে কম। এর মানে স্পষ্ট যে রাধাকৃষ্ণের (Radhakrishnan) জয় প্রায় নিশ্চিত, কিন্তু এই জয় অতীতের ধনখড়ের (Dhanakhar) মতো বড় হবে না।

আড়াআড়ি ভোটের (Cross Voting) প্রভাব

আড়াআড়ি ভোট (Cross voting) এইবারও একটি বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। যেহেতু ভোটদান গোপন ব্যালটে হয়, তাই সাংসদরা তাদের দলীয় নির্দেশিকা থেকে সরে এসেও ভোট দিতে পারেন। গতবার অনেক বিরোধী সাংসদ এনডিএ-কে (NDA) ভোট দিয়েছিলেন। এবারও যদি এমন হয়, তবে বিরোধী প্রার্থী বড় ধাক্কার সম্মুখীন হবেন।

Leave a comment