বোলপুরে পুজোর আগে রঙিন আলো, হোর্ডিং আর মানুষের কেনাকাটার ভিড়ের মাঝেই হঠাৎ সিঁদুরে মেঘ। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের উচ্ছেদ নোটিসে দিশাহারা রাস্তার হকাররা। আড়াই কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে হকার বসা যাবে না—এই নির্দেশ ঘিরেই নতুন করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
হকার উচ্ছেদে বিশ্বভারতীর নোটিস
গত ১৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ নোটিস জারি করে জানায়, ‘ইন্টারন্যাশনাল গেস্ট হাউস’ থেকে ‘ফায়ার ব্রিগেড’ মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার এলাকায় কোনও হকার বসতে পারবেন না। সাত দিনের মধ্যে সমস্ত হকারদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। এই নোটিস হাতে পাওয়ার পর থেকেই উদ্বিগ্ন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাঁদের মতে, বছরের সবচেয়ে বড় উৎসবের আগে ব্যবসা বন্ধ হলে সংসার চালানোই দুষ্কর হয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ ও অসহায়তা
প্রবীণ হকারদের দাবি, দীর্ঘ ২৫-৩০ বছর ধরে তারা এই জায়গায় ব্যবসা করছেন। পরিবেশ নোংরা না করে নিয়ম মেনে দোকান সাজিয়ে আসছেন। তবুও হঠাৎ এমন উচ্ছেদ নোটিস কেন, তা বুঝতে পারছেন না কেউই। এক ব্যবসায়ী প্রশ্ন তুলেছেন, “আমরা যদি উঠে যাই, তবে খাব কী? সন্তানদের পড়াশোনার খরচই বা চলবে কীভাবে?” আরও এক হকারের বক্তব্য, সময় দেওয়া হলেও বিকল্প জায়গার ব্যবস্থা নেই। ফলে বাস্তবে তাঁরা কোথায় যাবেন, সেই প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে।
রাজনৈতিক তরজার আঁচ
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, বিতর্কিত উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলে যেমন একাধিক সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছিলেন, তেমনই বর্তমান প্রশাসনও একই পথে হাঁটছে। পুজোর আগে মানুষের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া অন্যায্য—এমনই দাবি শাসকদলের।অপরদিকে, বাম দলগুলিও একই সুরে বলছে, বিশ্বভারতীর এই সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের জীবিকার পথে বড় ধাক্কা দেবে। তাঁদের বক্তব্য, বিশ্বভারতী মানুষের জন্য, অথচ তারাই মানুষকে বিপদে ফেলছে।বিজেপি অবশ্য তুলনামূলক ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। তাদের বক্তব্য, বিশ্বভারতীর জমি, তারা নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তবে পুজোর ঠিক আগে এই নোটিস দেওয়া অমানবিক।
পুজোর আগে চাপে ব্যবসায়ীরা
যখন শহর ও গ্রামে উৎসবের আমেজ বাড়ছে, মানুষ কেনাকাটায় মেতে উঠছেন, তখন হকারদের উপর নেমে এসেছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। পরিবারের ভরণপোষণ, শিশুদের পড়াশোনা, এমনকি ঋণ শোধ করা—সব কিছুই থমকে যেতে পারে এই উচ্ছেদ নোটিস কার্যকর হলে। ফলে পুজোর আনন্দ এখন ভয়ের ছায়ায় ঢাকা পড়েছে হকার পরিবারগুলির কাছে।
বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে রাস্তার পাশে হকারদের উচ্ছেদের নোটিস জারি হতেই ক্ষোভ ছড়িয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। পুজোর আগে নেওয়া এই সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলেও তোলপাড় শুরু হয়েছে।