বিহারের রাহুল গান্ধী এবং তেজस्वी যাদবের 'ভোট অধিকার যাত্রা' ১৭ই আগস্ট থেকে শুরু হতে চলেছে। এই যাত্রাটি ২৩টি জেলায় যাবে, যেখানে ভোটারদের ভোটের গুরুত্ব এবং নির্বাচন কমিশনের কথিত অনিয়ম সম্পর্কে সচেতন করা হবে।
পাটনা: বিহারের রাজনীতি এই বছর আগস্ট-সেপ্টেম্বরে একটি নতুন দিকে মোড় নিতে চলেছে। বিরোধী দলের বিশিষ্ট নেতা রাহুল গান্ধী এবং রাজ্যের তরুণ নেতা তেজस्वी যাদব ১৭ই আগস্ট থেকে শুরু হওয়া ‘ভোট অধিকার যাত্রা’র মাধ্যমে বিহারের ২৩টি জেলায় ভোটারদের সচেতন করতে মাঠে নামছেন। এই যাত্রা ১লা সেপ্টেম্বর পাটনায় শেষ হবে এবং এই সময়কালে এই দুই নেতা ভোটার অধিকার, নির্বাচন কমিশনের কথিত অনিয়ম এবং গণতন্ত্রে ভোটের গুরুত্বের উপর বিশেষ জোর দেবেন।
বিহারে ভোটার সচেতনতার বড় অভিযান
‘ভোট অধিকার যাত্রা’র উদ্দেশ্য হল বিহারের ভোটারদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করা। নির্বাচন কমিশনের উপর আরোপিত কথিত অনিয়মের বিরুদ্ধে এই যাত্রা একটি শক্তিশালী বার্তা দেওয়ার প্রচেষ্টা। রাহুল গান্ধী এবং তেজस्वी যাদব একসঙ্গে বিহারের গ্রামীণ এবং শহর উভয় অঞ্চলে গিয়ে ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই যাত্রা মহাজোটের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি বিহারে আসন্ন নির্বাচনগুলির জন্য একটি কৌশলগত পদক্ষেপ। ২০২৪ সালের লোকসভা এবং বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উদ্যোগ ভোটারদের সক্রিয় করতে সহায়ক হতে পারে।
যাত্রার রূপরেখা এবং প্রধান কার্যক্রম
যাত্রাটি ১৭ই আগস্ট রোহতাস জেলা থেকে শুরু হবে। এরপর ১৮ই আগস্ট ঔরঙ্গাবাদ, ১৯শে আগস্ট গয়া ও নালন্দা, ২১শে আগস্ট শেখপুরা ও লखीসরাই, ২২শে আগস্ট মুঙ্গের ও ভাগলপুরের মতো প্রধান জেলাগুলিতে বিরতি দিয়ে তেজस्वी-রাহুল দল তাদের সভা আয়োজন করবে। এর মাঝে কয়েকদিন বিরতিও রাখা হয়েছে যাতে যাত্রা সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে।
যাত্রার শেষ দিন ১লা সেপ্টেম্বর পাটনায় একটি বড় সভা অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে উভয় নেতাই বিহারের ভোটারদের ভোট দেওয়ার গুরুত্ব এবং তাদের ভোটের সঠিক ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত করবেন।
তেজस्वी যাদবের কেন্দ্র সরকার এবং নীতীশ কুমারের প্রতি কটাক্ষ
যাত্রার ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তেজस्वी যাদব মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং কেন্দ্র সরকারের প্রতি তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, 'চোর আইডিয়া চুরি করতে পারলেও ভিশন কোথা থেকে আনবে?' তেজস্বীর এই বক্তব্য তাঁর কৌশলগত রাজনীতির একটি ঝলক, যেখানে তিনি নিজেকে 'যুব সরকারের' প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরে বর্তমান সরকারকে 'নকলনবীশ' বলছেন।
এই বিবৃতি মহাজোটের সেই সংকল্পকে প্রতিফলিত করে, যেখানে তারা বিহারে পরিবর্তনের জন্য একটি নতুন সরকার আনার দাবি করছে। তেজস্বী যাদবের মতে, তাঁর 'যুব সরকার' বিহারে উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রকে একটি নতুন দিক দেবে।
মহাজোটের ঐক্যবদ্ধ রূপ যাত্রায় অংশ নেবে
এই ‘ভোট অধিকার যাত্রা’য় মহাজোটের ছয়টি দল সক্রিয় অংশগ্রহণ করবে। রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খারগেও প্রথম দিন উপস্থিত থাকবেন। এই যাত্রা ৭ই আগস্ট দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর বাড়িতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর तय হয়েছিল, কিন্তু শিবু সোরেনের মৃত্যুর কারণে এতে সামান্য বিলম্ব হয়েছে।
মহাজোটের সমস্ত দল এই যাত্রাকে বিহারে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে এবং ভোটারদের মধ্যে নিজেদের विचारधारा পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছে।
ভোটের অধিকার এবং গণতন্ত্রের শক্তি
যাত্রার সময় রাহুল গান্ধী এবং তেজस्वी যাদব ভোটারদের ভোটের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করবেন। তারা বলবেন যে কীভাবে ভোটের সঠিক ব্যবহার গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং নির্বাচন কমিশনের মতো সংস্থাগুলির স্বচ্ছতা কেন জরুরি।
ভোটদানের অধিকার নিয়ে এই অভিযান বিহারে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়াতে সহায়ক হবে। উভয় নেতাই ভোটারদের বোঝাবেন যে নির্বাচনে তাদের ভূমিকা শুধুমাত্র ভোট দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর মাধ্যমে তারা সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করতে পারেন।
নির্বাচন কমিশনের উপর প্রশ্ন এবং সতর্কতা
যাত্রার একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল নির্বাচন কমিশনের কথিত অনিয়মগুলি তুলে ধরা। রাহুল গান্ধী এবং তেজস্বী যাদবের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশন অনেকবার তাদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে, যার ফলে গণতন্ত্র দুর্বল হয়েছে।
এই বিষয়টি বিহারের নির্বাচনী রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে, কারণ এখানে ভোটাররা কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ‘ভোট অধিকার যাত্রা’ এই দিকে সচেতনতা বাড়িয়ে নির্বাচন কমিশনকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার একটি প্রচেষ্টা।