রাজ্যে ফের সক্রিয় মৌসুমি অক্ষরেখা
আবারও দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে মৌসুমি অক্ষরেখা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের মতে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই কলকাতা-সহ একাধিক জেলায় ঘন কালো মেঘে ঢেকেছে আকাশ। কোথাও টিপটিপ বৃষ্টি, আবার কোথাও ঝোড়ো হাওয়া ও বজ্রপাত। এই পরিস্থিতি অন্তত আগামী সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
কলকাতায় ভোর থেকেই মেঘলা আকাশ
রাজধানী কলকাতার আকাশ ভোর থেকে ঢেকে গিয়েছে কালো মেঘে। অনেক জায়গায় সকাল থেকেই ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। দিনের বেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ হালকা থেকে মাঝারি বর্ষণ শহরবাসীর জন্য বাড়তি ভোগান্তি তৈরি করেছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, এই মেঘলা আকাশ ও বৃষ্টির প্রবণতা অন্তত চার-পাঁচ দিন চলবে।
দক্ষিণবঙ্গে জারি হলুদ সতর্কতা
আলিপুর হাওয়া অফিস বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় বজ্রঝড় ও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়ে হলুদ সতর্কতা জারি করেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা প্রবল। শুক্রবার উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদেও ভারী বৃষ্টি হতে পারে। শনিবার থেকে ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পশ্চিম বর্ধমান যোগ হবে এই তালিকায়।
একের পর এক দিনে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া প্রবল বৃষ্টির দাপট টানা কয়েক দিন বজায় থাকবে বলে হাওয়া অফিস ইঙ্গিত দিয়েছে। রবিবার ও সোমবারও একাধিক জেলায় বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কৃষকদের জন্যও প্রকৃতির এই খামখেয়ালি আবহাওয়া বাড়তি চিন্তার কারণ হয়ে উঠছে।
উত্তরবঙ্গেও দুর্যোগের ইঙ্গিত
শুধু দক্ষিণবঙ্গই নয়, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলাতেও দুর্যোগের ছবি ধরা পড়ছে। বৃহস্পতিবার জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে প্রবল বৃষ্টির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ফের জলপাইগুড়িতে ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের সঙ্গে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। সপ্তাহান্তে মালদহ, দক্ষিণ দিনাজপুর ও কালিম্পংয়েও ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
তাপমাত্রায় কিছুটা স্বস্তি, কিন্তু আর্দ্রতায় অস্বস্তি
কলকাতায় বৃহস্পতিবার ন্যূনতম তাপমাত্রা ছিল ২৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ২৯.৮ ডিগ্রিতে, যা স্বাভাবিকের থেকে আড়াই ডিগ্রি কম। তবে স্বস্তির মাঝেও বিপত্তি রয়ে গিয়েছে—আর্দ্রতার জেরে চরম অস্বস্তি ভোগ করতে হচ্ছে শহরবাসীকে।
সমুদ্রে উত্তাল হাওয়া, জারি সতর্কতা
উত্তর বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন উপকূলে আগামী শনিবার ও রবিবার সমুদ্র বেশ উত্তাল হতে পারে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছনোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাই গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। উপকূলীয় জেলাগুলিতে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যেই।
কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়াল অনিয়মিত বৃষ্টি
প্রবল বৃষ্টি যদিও আমন ধান চাষের জন্য উপকারী, তবে অতিরিক্ত বর্ষণ ফসল নষ্টের আশঙ্কা তৈরি করেছে। বিশেষ করে নদীয়া, বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদের কৃষকরা প্রবল উদ্বেগে রয়েছেন। কোথাও জমিতে জল দাঁড়িয়ে থাকছে, আবার কোথাও বজ্রপাতের ভয়। এর ফলে কৃষিজমির ক্ষতি হলে চাষিরা বড়সড় আর্থিক ধাক্কায় পড়বেন বলে আশঙ্কা।
শহরে ভোগান্তি চরমে
কলকাতা ও শহরতলিতে সকাল থেকেই জল জমে তৈরি হচ্ছে যানজট। অফিস যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বেড়েছে ঝড়ো হাওয়া ও বজ্রপাতের কারণে। মেট্রো, লোকাল ট্রেন ও বাস পরিষেবায়ও বিলম্বের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই টানা বৃষ্টির কারণে শহরের নানা প্রান্তে রাস্তার অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছে।
সোমবার পর্যন্ত অব্যাহত দুর্যোগ
আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, অন্তত সোমবার পর্যন্ত এই দুর্যোগের প্রবণতা চলবে। এরপরে বৃষ্টি কিছুটা কমলেও মৌসুমি অক্ষরেখা সক্রিয় থাকায় সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও আবহাওয়া অনিশ্চিত থাকতে পারে। তাই আপাতত রাজ্যবাসীকে ছাতা ও রেইনকোট নিয়েই ঘর থেকে বের হতে হবে।