নির্বাচন-পূর্ব জল্পনার শেষ
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন বা এসআইআর নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চরম জল্পনা শুরু হয়েছিল। ভোটার তালিকায় ভুল সংশোধনের বিষয়টি জনগণ ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি করেছিল। রবিবার নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের এসআইআর কবে থেকে শুরু হবে তা সঠিক সময়ে ঘোষণা করা হবে। কমিশন এই প্রক্রিয়ার প্রতি তাড়াহুড়ো ও ভুল ব্যাখ্যার সমালোচনা করেছে।
বিহার ও বাংলার তুলনামূলক প্রেক্ষাপট
বিহার ও বাংলার বিধানসভা ভোটের আগে ভোটার তালিকায় বিশেষ সংশোধনের বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছে। বিহারে এসআইআর চালুর পর বড় সংখ্যক ভোটারের নাম তালিকা থেকে বাদ যাওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন ভোটকে সামনে রেখে এই প্রক্রিয়ার জন্যও শুরু হয়েছে সমান জল্পনা। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন, প্রক্রিয়াটি শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং সফলভাবে সম্পন্ন হবে, ঠিক যেমন ২০০৩ সালে বিহারে হয়েছে।
সাংবাদিক বৈঠকে কমিশনের বক্তব্য
নির্বাচন কমিশন রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ভোটার তালিকার শুদ্ধিকরণ সময়মতো সম্পন্ন হবে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জ্ঞানেশ কুমার বলেন, “নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকার সংশোধন অপরিহার্য। ২০০৩ সালেও বিহারে এসআইআর সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন সবসময় নিশ্চিত করে যে, সমস্ত ক্লেইম এবং অভিযোগের ভিত্তিতে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে তা জানানো হয়।”
চূড়ান্ত তালিকা ও স্বচ্ছতা
চূড়ান্ত ভোটার তালিকার প্রকাশের পরও ভোটাররা যদি কোনো ভুল খুঁজে পান, তবে তারা তা সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও রাজ্যের সিইওর কাছে জানাতে পারেন। এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও ডিসেন্ট্রালাইজড। কমিশনের ওয়েবসাইটেও ড্রাফট ও চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। ইসিআই নিশ্চিত করছে যে প্রতিটি রাজনৈতিক দল তালিকায় পরিবর্তন সংক্রান্ত তথ্য জানতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের ব্যাখ্যা
জ্ঞানেশ কুমার আরও বলেছেন, “ভোটার তালিকার রিভিশনের সময় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে ড্রাফট তালিকা দেওয়া হয়। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পরও ৪৫ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করার সুযোগ থাকে। এ সময়সীমা পেরোনোর পর অভিযোগ তোলা আইন অনুযায়ী কঠিন।” তিনি উল্লেখ করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলির প্রশ্ন তোলা প্রক্রিয়ার নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে হলে তা জনসাধারণের জন্য বিভ্রান্তিকর হতে পারে।
এসআইআর এবং তৃণমূলের সম্ভাব্য পদক্ষেপ
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সময়সীমার তথ্য আগে থেকেই জানানো হয়। তৃণমূলসহ অন্যান্য দল নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন থাকলেও, কমিশন আশা করছে যে সকল পক্ষ আইন ও প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান দেখাবে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে, এসআইআর-এর মাধ্যমে ভোটার তালিকায় সংশোধন প্রয়োজনীয় এবং তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
ভোটারদের জন্য নির্দেশনা
কমিশন ভোটারদেরও নির্দেশ দিয়েছে যে তারা যদি তাদের নাম বা ঠিকানায় কোনো ত্রুটি খুঁজে পান, তবে সংশ্লিষ্ট জেলা ও রাজ্য নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এতে করে ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিশ্চিত হয় এবং নির্বাচনের স্বচ্ছতা বজায় থাকে। চূড়ান্ত তালিকার প্রকাশের পরে ৪৫ দিনের মধ্যে যে কোনও আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে।পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা জল্পনা অবশেষে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের মাধ্যমে স্থিতিশীল হলো। ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা এবং সংশোধনের সময়সূচি নির্ধারণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল এবং ভোটার উভয়ের জন্য নিশ্চিত করা হয়েছে প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা। এবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ার দিকে সবদিক থেকে মনোযোগ রাখা যাবে।