শ্রীকৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ আজ ১৬ই আগস্ট আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হচ্ছে। এই দিনে ভক্তরা লাড্ডু গোপালকে মাখন-মিশ্রী, মালপোয়া এবং ক্ষীর-এর মতো প্রিয় ভোগ নিবেদন করেন। বিশ্বাস করা হয় যে এতে বাড়িতে অন্ন-ধনের অভাব হয় না এবং ভগবান কৃষ্ণের বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। তুলসী পাতা এবং শুদ্ধ বিধি মেনে ভোগ নিবেদন করা জরুরি বলে মনে করা হয়।
নয়াদিল্লি: আজ জন্মাষ্টমীর পবিত্র উৎসব সারা দেশে বিপুল উৎসাহ ও শ্রদ্ধার সাথে পালিত হচ্ছে। আজ অর্থাৎ শনিবার, ১৬ই আগস্ট ২০২৫ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মবার্ষিকী। ভক্তরা সকাল থেকেই মন্দির ও বাড়িতে বিশেষ পূজা করছেন। জায়গায় জায়গায় ঝঁাকি ও সজ্জা করা হয়েছে, আবার রাত ১২টায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মের আরতি হবে। এই দিনে লাড্ডু গোপালকে নতুন বস্ত্র পরিয়ে ফুল-মালা দিয়ে সাজানো হয় এবং তাঁর প্রিয় ভোগ যেমন মাখন-মিশ্রী, মালপোয়া ও ক্ষীর নিবেদন করা হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, আজ ভক্তি ভরে ভোগ নিবেদন করলে ও পূজা করলে ভগবান প্রসন্ন হন এবং ঘর-পরিবারে সুখ-সমৃদ্ধি, অন্ন-ধন ও শান্তি বিরাজ করে।
মাখন এবং মিশ্রী: কানহার সবচেয়ে প্রিয় ভোগ
শাস্ত্রে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে যে কানহা ছোটবেলা থেকেই মাখন ও মিশ্রী খুব ভালোবাসতেন। গোকুলের গলিতে তিনি গোপীদের ঘর থেকে মাখন চুরি করে খেতেন এবং তাঁর সখা-সহচর ও বানরদেরও খাওয়াতেন। মাখনকে শুদ্ধতা ও বাৎসল্যের প্রতীক হিসাবে মনে করা হয়, অন্যদিকে মিশ্রী জীবনে মধুরতার ইঙ্গিত দেয়। জন্মাষ্টমীতে সাদা টাটকা মাখন এবং মিষ্টি মিশ্রী নিবেদন করলে লাড্ডু গোপাল প্রসন্ন হন। ভক্তরা মনে করেন যে এই ভোগে বাড়িতে প্রেম, আনন্দ এবং ইতিবাচকতা সঞ্চারিত হয়।
মালপোয়া: রাধা-কৃষ্ণ প্রেমের স্মৃতি
ভারতীয় মিষ্টির তালিকায় মালপোয়ার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। কাহিনী আছে যে রাধারানী নিজের হাতে শ্রীকৃষ্ণের জন্য মালপোয়া তৈরি করতেন এবং নন্দলাল তা আনন্দের সাথে খেতেন। ময়দা, দুধ, এলাচ এবং মৌরি দিয়ে তৈরি মালপোয়া যখন ঘিয়ে ভাজা হয় এবং রসে ডোবানো হয়, তখন তার স্বাদ অসাধারণ হয়ে যায়। জন্মাষ্টমীর রাতে মালপোয়ার ভোগ নিবেদনের ঐতিহ্য অনেক জায়গায় পালিত হয়। বলা হয় যে এই ভোগে জীবনে মাধুর্য ও সমৃদ্ধির আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
ক্ষীর: পবিত্রতা ও মঙ্গলকামনার প্রতীক
ক্ষীরের ভোগ নিবেদনের ঐতিহ্য বহু শতাব্দী ধরে চলে আসছে। দুধ, চাল ও চিনি দিয়ে তৈরি ক্ষীরের গুরুত্ব প্রতিটি পূজা-পার্বণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দ্বারকার কাহিনী অনুসারে, রুক্মিণী দেবী স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণকে ক্ষীর তৈরি করে খাওয়াতেন। দুধের সাদা রঙ পবিত্রতার এবং চালের পূর্ণতা সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়। জন্মাষ্টমীর রাতে, এলাচ এবং বাদাম দিয়ে সাজানো ক্ষীরের ভোগ নিবেদন করলে সৌভাগ্য ও সুখ লাভ হয়। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, এতে বাড়িতে কখনও অন্ন-ধনের অভাব হয় না।
পঞ্চামৃত দিয়ে অভিষেক ও শৃঙ্গার
জন্মাষ্টমীতে ভোগ নিবেদনের আগে লাড্ডু গোপালের বিধি অনুযায়ী অভিষেক করা হয়। গঙ্গাজল, দুধ, দই, ঘি, মধু ও চিনি মিশিয়ে পঞ্চামৃত তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণ দিয়ে বাল গোপালকে স্নান করানোর রীতি প্রচলিত আছে। এরপর তাঁকে পীতাম্বর বা রেশমের বস্ত্র পরানো হয় এবং ফুলের মালা ও অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয়। এই বিশেষ সাজসজ্জার পরেই প্রিয় ভোগ নিবেদন করা হয়।
ছাপ্পান্ন ভোগের পরম্পরা
অনেক মন্দির ও বাড়িতে জন্মাষ্টমীতে লাড্ডু গোপালকে ছাপ্পান্ন ভোগ নিবেদনের রীতিও প্রচলিত আছে। এতে ৫৬ রকমের ব্যঞ্জন সাজানো হয়, যার মধ্যে মিষ্টি, ফল, নোনতা এবং নানা ধরনের পদ থাকে। এই রীতি ভগবানকে অসীম ভক্তি ও প্রেম নিবেদনের প্রতীক হিসাবে বিবেচিত হয়।
মন্ত্র জপ ও ভোগ নিবেদন
ভোগ নিবেদনের সময় শুধু ব্যঞ্জন নয়, শ্রদ্ধা ও মন্ত্রোচ্চারণও জরুরি বলে মনে করা হয়। ভক্তরা "ওঁ নমো ভগবতে বাসুদেবায়" মন্ত্রটি ১১, ২১ বা ১০৮ বার জপ করেন। এরপর লাড্ডু গোপালকে প্রণাম করে ভোগ নিবেদন করা হয়। এই ভোগ পরে প্রসাদ হিসেবে ভক্ত ও পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
জন্মাষ্টমীর রাতের রেশ
১৬ই আগস্ট রাতে যখন ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের সময় দেখাবে, তখন মন্দিরের ঘণ্টা ও শঙ্খধ্বনির মধ্যে লাড্ডু গোপালের জন্মোৎসব পালিত হবে। ভক্তরা মাখন-মিশ্রী, মালপোয়া ও ক্ষীর দিয়ে সাজানো থালি নিয়ে ভগবানকে ভোগ নিবেদন করবেন। এই অনুষ্ঠানে ভজন-কীর্তনে পরিবেশ ভক্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে।