হোয়াটসঅ্যাপ জুন ২০২৫ সালে ভারতে ৯৮ লক্ষেরও বেশি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে। প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার, ভুয়ো খবর এবং স্প্যাম কার্যকলাপের কারণে এই লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীকে সরানো হয়েছে। কোম্পানিটি ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড ২০২১-এর অধীনে এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
WhatsApp: দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপ আবারও বড় পদক্ষেপ নিয়েছে। জুন ২০২৫-এ ৯৮ লক্ষেরও বেশি ভারতীয় ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে। কোম্পানিটি সম্প্রতি প্রকাশিত তাদের মাসিক কমপ্লায়েন্স রিপোর্টে এই তথ্য জানিয়েছে। প্ল্যাটফর্মে ক্রমবর্ধমান ভুল কার্যকলাপ, ভুয়ো খবর এবং নিয়ম লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এটি একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঘটনাটি কী?
মেটা-র মালিকানাধীন হোয়াটসঅ্যাপ জুন মাসে ভারতে ৯৮,২৯,০০০ অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করেছে। এর মধ্যে প্রায় ১৯.৭৯ লক্ষ অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীরা নিজেরাই রিপোর্ট করেছিলেন। বাকি অ্যাকাউন্টগুলি হোয়াটসঅ্যাপের অটোমেটেড অ্যাবিউজ ডিটেকশন সিস্টেম দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির দাবি, নিষিদ্ধ করা বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট থেকেই স্প্যাম মেসেজিং, ভুয়া তথ্য বা প্ল্যাটফর্মের অপব্যবহার সম্পর্কিত কার্যকলাপ চলছিল। এই পদক্ষেপটি ভারত সরকারের ডিজিটাল মিডিয়া এথিক্স কোড, ২০২১-এর অধীনে নেওয়া হয়েছে, যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিকে প্রতি মাসে ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্ট প্রকাশ করতে হয়।
১৬ হাজারের বেশি ব্যবহারকারীর অভিযোগ
হোয়াটসঅ্যাপ জুনে মোট ২৩,৫৯৬ জন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে, যার মধ্যে ১৬,০৬৯টি অনুরোধ শুধুমাত্র অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করা সম্পর্কিত ছিল। এই রিপোর্ট অনুসারে, হোয়াটসঅ্যাপ মোট ১,০০১টি অ্যাকাউন্টের উপর সরাসরি ব্যবস্থা নিয়েছে, যার মধ্যে ৭৫৬টি অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এবং বাকি ক্ষেত্রে সতর্কতা, মনিটরিং বা অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনটি পর্যায়ে কাজ করে ব্যান সিস্টেম
হোয়াটসঅ্যাপ তাদের বিবৃতিতে জানিয়েছে যে তারা একটি 'থ্রি-স্টেজ অ্যাবিউজ ডিটেকশন সিস্টেম' ব্যবহার করে। এতে তিনটি প্রধান পর্যায় রয়েছে:
- অ্যাকাউন্ট সেটআপ স্টেজ: এই স্তরে নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করার সময় সন্দেহজনক কার্যকলাপ চিহ্নিত করা হয়।
- মেসেজিং স্টেজ: প্রেরণ করা মেসেজগুলির উপর নজর রাখা হয়। অনিয়ম দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
- রিঅ্যাকশন ও ফিডব্যাক স্টেজ: ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে আসা রিপোর্ট এবং নেতিবাচক ফিডব্যাক বিশ্লেষণ করা হয়।
এই সিস্টেমের সাহায্যে কোম্পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হাজার হাজার সন্দেহজনক অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করতে পারে, যার ফলে যেকোনো ধরনের অপব্যবহার রোধ করা সম্ভব।
ভারতে কঠোর নিয়মের প্রভাব
ভারত সরকারের নতুন আইটি নিয়ম অনুসারে, যে সকল সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানির ৫০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে, তাদের প্রতি মাসে মাসিক কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট প্রকাশ করতে হয়। এতে ব্যবহারকারীদের অভিযোগ, তাদের সমাধান এবং গৃহীত পদক্ষেপের বিস্তারিত তথ্য থাকে। হোয়াটসঅ্যাপ জানিয়েছে যে, যদি কোনও ব্যবহারকারী মনে করেন তার অ্যাকাউন্টটি অন্যায়ভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে তিনি 'গ্রিভেন্স অ্যাপিলেট কমিটি'-র কাছে আপিল করতে পারেন। তবে, কোম্পানির দাবি তারা কোনো ठोस কারণ ছাড়া কোনো অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধ করে না।
কেন এই পদক্ষেপ জরুরি?
ভুয়ো খবর, স্প্যাম, সাইবার বুলিং এবং অনলাইন ফ্রডের মতো ঘটনা গত কয়েক বছরে দ্রুত বেড়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে बड़ी সংখ্যায় এমন গ্রুপ তৈরি হয়েছে যেখানে গুজব, বিদ্বেষপূর্ণ বার্তা এবং ভুয়া স্কিম দ্রুত ভাইরাল হয়। এই সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোম্পানি ক্রমাগত মনিটরিং সিস্টেমকে শক্তিশালী করছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলির প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি মানবিক নজরদারিও বাড়ানো উচিত, যাতে শুধুমাত্র মেশিনের উপর নির্ভর করে होने वाली ভুলগুলি থেকে বাঁচা যায়।
ব্যবহারকারীদের কী করা উচিত?
যদি আপনার হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট কোনো কারণ ছাড়াই নিষিদ্ধ হয়ে যায়, তবে घबराएं नाहें। আপনি হোয়াটসঅ্যাপ সাপোর্ট টিমের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং রিভিউয়ের জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়াও, অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি ध्यान रखें:
- অজানা নম্বরের উপর বিশ্বাস করবেন না।
- যাচাই না করে ফরোয়ার্ড করা মেসেজ শেয়ার করবেন না।
- যেকোনো ধরনের স্প্যাম কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকুন।
- ग्रुप অ্যাডমিন হওয়ার দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করুন।