বিহার সরকার TRE 4 এবং 5 শিক্ষক নিয়োগে ডোমিসাইল নীতি লাগু করেছে। এর ফলে এখন থেকে শুধুমাত্র বিহারের স্থায়ী বাসিন্দারাই পরীক্ষায় বসতে পারবে।
Bihar Domicile Policy: মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বিধানসভা নির্বাচনের আগে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি শিক্ষক নিয়োগে ডোমিসাইল নীতি লাগু করার ঘোষণা করেছেন। এই নীতি এখন TRE 4 এবং TRE 5 শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে লাগু হবে, যেখানে শুধুমাত্র বিহারের স্থায়ী বাসিন্দারাই অংশগ্রহণ করতে পারবে। এই পদক্ষেপকে সরাসরি নির্বাচনী কৌশল হিসেবে মনে করা হচ্ছে, যার উদ্দেশ্য রাজ্যের যুবকদের মন জয় করা।
ডোমিসাইল নীতি কী
ডোমিসাইল নীতির মানে হল কোনো রাজ্যের সরকারি চাকরিতে সেই রাজ্যের মূল বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া। বিহার সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর এখন থেকে সেই প্রার্থীরাই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে পারবে যাদের কাছে বিহারের বৈধ ডোমিসাইল সার্টিফিকেট থাকবে। এর ফলে বাইরের রাজ্যের প্রার্থীদের অংশগ্রহণ সীমিত হয়ে যাবে এবং বিহারের যুবকরা সরাসরি সুবিধা পাবে।
কারা যোগ্য
এই নীতির অধীনে তারাই যোগ্য হবে যারা বিহারে জন্মেছে, যাদের বাবা-মা রাজ্যের বাসিন্দা, যাদের শিক্ষা বিহারে হয়েছে, যাদের সম্পত্তি রাজ্যে আছে, অথবা যাদের বিয়ে বিহারের কোনো বাসিন্দার সঙ্গে হয়েছে। এই শর্তগুলো পূরণ করতে পারলে প্রার্থীরা ডোমিসাইল সার্টিফিকেট তৈরি করতে পারবে এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে।
নীতীশের নির্বাচনী মাস্টারস্ট্রোক
এই নীতির ঘোষণা এমন সময় হয়েছে যখন রাজ্যে নির্বাচনী আবহাওয়া জোরদার হচ্ছে। নীতীশ কুমার এই পদক্ষেপ যুবকদের পুরনো দাবি মেনে নিয়ে করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ছাত্ররা এই দাবি করছিল যে বিহারের চাকরিতে বাইরের রাজ্যের প্রার্থীদের প্রবেশ বন্ধ করা হোক। মুখ্যমন্ত্রী এই ঘোষণার সাথে এই বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন যে সরকার যুবকদের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুতর।
বিরোধী দলের প্রতিক্রিয়া
এই সিদ্ধান্তে বিরোধী দল তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব দাবি করেছেন যে ডোমিসাইল নীতি তার নিজের উদ্যোগ ছিল এবং নীতীশ সরকার তাদের নীতি নকল করেছে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে নীতীশ সরকারের নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা নেই। অন্যদিকে, প্রশান্ত কিশোর এটিকে গণতন্ত্রের জয় বলে উল্লেখ করে বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনী বাধ্যবাধকতার কারণে নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন যে নীতীশ কুমার গত ২০ বছরে যুবকদের জন্য বিশেষ কিছু করেননি।
সরকারি পক্ষের বক্তব্য
জেডিইউ এবং বিজেপি নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। জেডিইউ মুখপাত্র নীরজ কুমার বলেছেন যে এই সিদ্ধান্ত বিহারের যুবকদের স্বার্থে নেওয়া হয়েছে এবং এতে তাদের ভবিষ্যৎ আরও শক্তিশালী হবে। বিজেপি মুখপাত্র প্রভাকর মিশ্রও ডোমিসাইল নীতিকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে এর স্বাগত জানিয়েছেন।
আগেও উঠেছিল ডোমিসাইলের প্রসঙ্গ
ডোমিসাইলের প্রসঙ্গ বিহারে নতুন নয়। ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও নীতীশ কুমার এই নীতি লাগু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই সময় এই নীতি লাগুও হয়েছিল, কিন্তু ২০২৩ সালে এই যুক্তিতে তুলে নেওয়া হয় যে রাজ্যে বিজ্ঞান ও গণিত পড়ানোর জন্য যোগ্য শিক্ষক পাওয়া যাচ্ছে না। এই সিদ্ধান্তের পর ছাত্ররা ব্যাপক প্রতিবাদ জানায় এবং সরকারের ওপর বাইরের প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার অভিযোগ করে।
বিহারের যুবকদের জন্য কেন জরুরি এই নীতি
বিহার রাজ্যে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। শিক্ষক নিয়োগের মতো পরীক্ষাগুলোতে ঝাড়খণ্ড, উত্তর প্রদেশ এবং মধ্য প্রদেশের মতো রাজ্য থেকে প্রচুর সংখ্যক প্রার্থী অংশগ্রহণ করত। এতে বিহারের যুবকরা সুযোগ কম পেত। ডোমিসাইল নীতি লাগু হওয়ার ফলে এখন স্থানীয় যুবকরা অগ্রাধিকার পাবে, যার ফলে তারা নিজের রাজ্যেই রোজগারের ভালো সুযোগ পাবে। পাশাপাশি, শিক্ষার গুণগত মানও বাড়বে কারণ স্থানীয় শিক্ষকরা ছাত্রদের ভাষা এবং সংস্কৃতি ভালোভাবে বোঝেন।
অন্যান্য রাজ্যে আগে থেকেই লাগু আছে ডোমিসাইল
উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যগুলোতে আগে থেকেই ডোমিসাইল নীতি লাগু আছে। সেখানকার শিক্ষক নিয়োগ এবং অন্যান্য সরকারি চাকরিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে বিহারে এই নীতি লাগু করা একটি যুক্তিযুক্ত পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে।