যমুনা নদীর পরিচ্ছন্নতায় দিল্লি সরকারের ৯০০০ কোটি টাকার বাজেট

যমুনা নদীর পরিচ্ছন্নতায় দিল্লি সরকারের ৯০০০ কোটি টাকার বাজেট

দিল্লি সরকার যমুনা নদী পরিষ্কার করার জন্য ৯০০০ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করেছে। ডাচ মডেলের অধীনে ১৪টি বিভাগ একসঙ্গে কাজ করবে। ১৫০০ কোটি টাকা সিভার ট্রিটমেন্টের জন্য এবং অতিরিক্ত ২০০০ কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছে চাওয়া হয়েছে।

Yamuna River: দিল্লিতে যমুনা নদীর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সংরক্ষণের জন্য নতুন পরিকল্পনা শুরু করা হচ্ছে। ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে এই কাজের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকা সিভার ট্রিটমেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামোতে খরচ হবে। একই সাথে কেন্দ্র সরকারের কাছে অতিরিক্ত ২০০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। যমুনা পরিষ্কার করার জন্য ভারত নেদারল্যান্ডের সাথে মিলিতভাবে একটি বিশেষ কৌশল নিয়েছে, যাকে 'ডাচ মডেল' বলা হয়। এই পরিকল্পনার অধীনে ১৪টি বিভাগ এবং এজেন্সির দায়িত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে যাতে নদীর পরিচ্ছন্নতাকে কার্যকর করা যায়।

যমুনা পরিষ্কার করার জন্য সরকারের নতুন উদ্যোগ

দিল্লিতে বিজেপি সরকার গঠনের পর যমুনা নদীর অবস্থা सुधारানোর জন্য গুরুতর প্রচেষ্টা শুরু করা হয়েছে। রাজ্য সরকার ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এর মধ্যে ১৫০০ কোটি টাকা সিভার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট এবং পাইপলাইনের উন্নতির জন্য খরচ করা হবে। এছাড়াও, জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে যমুনা সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্র সরকারের কাছে অতিরিক্ত ২০০০ কোটি টাকার সাহায্য চাওয়া হয়েছে।

সরকার 'রিভার সিটি অ্যালায়েন্স'-এর নতুন পরিকল্পনা 'আরবান রিভার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান'-এর অধীনে নদীর পরিচ্ছন্নতা নিয়ে একটি ব্যাপক কৌশল তৈরি করেছে। এই পরিকল্পনা শহরের সমস্যাগুলোর সমাধান না করে যমুনার অবস্থার উন্নতি সম্ভব নয় বলে মনে করে। তাই, দিল্লির উন্নয়ন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণকে যমুনা পরিচ্ছন্নতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে।

১৪টি বিভাগ এবং এজেন্সি একসঙ্গে কাজ করবে

যমুনাকে পরিষ্কার করার জন্য ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা (এনএমসিজি) নেদারল্যান্ডের বিশেষজ্ঞদের সাথে মিলিত হয়ে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ আরবান অ্যাফেয়ার্স (এনআইইউএ), আইআইটি দিল্লি সহ মোট ১৪টি বিভাগ এবং এজেন্সির ভূমিকা নির্ধারণ করেছে। এই জোটের উদ্দেশ্য হল দীর্ঘমেয়াদী মালিকানা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা সুনিশ্চিত করা।

দিল্লি জল বোর্ড, দিল্লি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, দিল্লি পৌর নিগম, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড এবং দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ সমিতি সহ অনেক প্রতিষ্ঠান এই প্রচেষ্টায় অংশ নিয়েছে। সকলে যমুনা নদীর জলের গুণমান উন্নত করতে এবং নদীর আশেপাশের অঞ্চলকে দূষণমুক্ত করতে সংকল্পবদ্ধ।

ডাচ মডেল কী?

নেদারল্যান্ডের একটি বড় অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নীচে এবং সেখানকার প্রায় ৬০ শতাংশ জমি জোয়ারের সময় বন্যার কবলে পড়ে। এটি বন্ধ করার জন্য নেদারল্যান্ড 'জল উত্তোলনের ডাচ নীতি' গ্রহণ করেছে। এই নীতি পানিকে কেবল একটি সম্পদ নয়, বরং একটি কৌশলগত সরঞ্জাম হিসেবে মনে করে।

এই নীতিতে স্থিতিশীল উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক সাম্যকে উন্নীত করার উপর জোর দেওয়া হয়। বন্যা, দূষণ এবং জলের সঙ্কট जैसी জটিল সমস্যার সমাধান এতে অন্তর্ভুক্ত। ডাচ মডেল-এ জল ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি স্থানীয় লোকদেরও সক্রিয় অংশগ্রহণকারী করা হয়।

ডাচ বিশেষজ্ঞ হেঙ্ক ওভিঙ্কের মতে, জলের শক্তি এবং তার সংযোগকারী ক্ষমতা বোঝা এবং তার সঠিক ব্যবহার করা প্রয়োজন। ভারত এর মতো দেশে, যেখানে জল দেবতা এবং নদীকে দেবীরূপে পূজা করা হয়, এই মডেল নদীর পবিত্রতা বজায় রাখার একটি উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা।

ভারত-নেদারল্যান্ড কৌশলগত অংশীদারিত্বের ইতিহাস

ভারত ও নেদারল্যান্ডের মধ্যে জল সংরক্ষণের জন্য কৌশলগত অংশীদারিত্বের শুরু ২০১৫ সালে, যখন নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুট্টে ভারত সফর করেন। এর পর ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেদারল্যান্ড সফর করেন এবং দ্বিপাক্ষিক জল অংশীদারিত্বে সম্মতি জানান।

এই অংশীদারিত্বের অধীনে ভাদোদরায় 'ডাচ ইন্ডো ওয়াটার অ্যালায়েন্স' এবং দিল্লিতে 'লোকাল ট্রিটমেন্ট অফ আরবান সিভেজ স্ট্রিমস ফর হেলদি রিউজ' (লোটাস) এর মতো প্রজেক্ট শুরু করা হয়েছে। এপ্রিল ২০২১ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে হওয়া ভার্চুয়াল বৈঠকের পর এই চুক্তিতে ২০২২ সালে औपचारिक স্বাক্ষর হয়।

Leave a comment