রাশিয়ার ভারী হামলার পর ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি নরম মনোভাব গ্রহণ করে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি রাশিয়ার সাথে আলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এবং শান্তির জন্য একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকের দাবি জানিয়েছেন।
Russia-Ukraine: রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধ একটি নতুন মোড় নিয়েছে। রাশিয়া কর্তৃক সম্প্রতি ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে জোরদার সামরিক হামলার পর এখন ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কির মনোভাব নরম হয়েছে। এই প্রথম তিনি যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছেন। জেলেনস্কি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে তাঁর সরকার রাশিয়ার সাথে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, যুদ্ধ শেষ করার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক খুবই জরুরি এবং ইউক্রেন এই বিষয়ে সম্ভাব্য সবকিছু করবে।
রাষ্ট্রপতির জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ
বিগত সন্ধ্যায় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণে জেলেনস্কি তাঁর বিবৃতিতে বলেন, "রাশিয়া সিদ্ধান্ত নিতে দ্বিধা করছে। যুদ্ধবিরতি করার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করা হবে। দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠক অত্যন্ত জরুরি।" জেলেনস্কি এই বিবৃতি এমন সময়ে দিয়েছেন যখন রাশিয়া ইউক্রেনের প্রধান শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করেছে।
বিদেশমন্ত্রীর রিপোর্টের পর তৎপরতা বৃদ্ধি
এই ঘটনার আগে ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা রাষ্ট্রপতিকে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। এই রিপোর্টে যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছিল। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইউক্রেন সরকার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার পরিস্থিতি এবং রাশিয়ার সাথে আলোচনার কাঠামো নিয়ে বিবেচনা করছে। এই রিপোর্টের পরেই জেলেনস্কি তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করেছেন এবং আলোচনার দিকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে দায়িত্ব অর্পণ
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য আলোচনার নেতৃত্ব এখন ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ দিচ্ছেন। সম্প্রতি তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উমেরভের নিরাপত্তা ও সামরিক বিষয়ে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনিই এখন আলোচনা প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেবেন।
তবে, এর আগে দুই দেশের মধ্যে যে আলোচনাগুলো হয়েছিল, সেগুলো কোনো ठोस সিদ্ধান্তে পৌঁছানো ছাড়াই শেষ হয়ে গিয়েছিল। এইবার সরকারের কৌশল হল আলোচনাকে একটি নতুন কাঠামো ও নেতৃত্বের সাথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।
রাশিয়ার শর্ত এবং ইউক্রেনের প্রত্যাখ্যান
যুদ্ধবিরতি নিয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কিছু কঠোর শর্ত রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবি হল ইউক্রেন যেন রাশিয়ার দখলে নেওয়া চারটি অঞ্চল তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়। এছাড়াও, রাশিয়া এও দাবি করেছে যে ইউক্রেন যেন ন্যাটো (NATO)-র সদস্য হওয়ার দিকে কোনো পদক্ষেপ না নেয় এবং তাদের সামরিক নীতিতে নিরপেক্ষতা বজায় রাখে।
এই শর্তগুলো ইউক্রেন সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে। রাষ্ট্রপতি জেলেনস্কি স্পষ্ট করে বলেছেন যে ইউক্রেন কোনো মূল্যে তার ভূমি ছাড়বে না এবং দেশের অখণ্ডতার সাথে আপস করা হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে এও বলা হয়েছে যে যদি আলোচনা করতে হয়, তবে তা সমান স্তরে এবং কোনো পূর্বশর্ত ছাড়াই হতে হবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সতর্কতা
এই পুরো ঘটনার মধ্যে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পও রাশিয়ার উপর কঠোর মনোভাব রেখেছেন। ট্রাম্প রাশিয়াকে ৫০ দিনের সময়সীমা দিয়ে বলেছেন যে যদি এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হয়, তবে তার উপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর পাশাপাশি, তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে রাশিয়া থেকে ব্যবসা করা দেশগুলোর উপরও ৫০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।