২০০২ সালের বিশেষ ভোটার তালিকা এক ক্লিকে নিজের নাম আছে কি না দেখে নিন

২০০২ সালের বিশেষ ভোটার তালিকা এক ক্লিকে নিজের নাম আছে কি না দেখে নিন

বাংলার রাজনীতির কারুশিল্পে ভোটার তালিকার গুরুত্ব অপরিসীম। এই তালিকাই নির্ধারণ করে কার হাতে থাকবে ভোটের ক্ষমতা। এবার বিশেষ গুরুত্ব পেল ২০০২ সালের সেই বিশেষ ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা সংক্ষেপে SIR-এর তালিকা। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যেই এই তালিকা আপলোড করেছে অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। পশ্চিমবঙ্গের ভোটাররা এক ক্লিকে দেখে নিতে পারবেন ২০০২ সালের সেই তালিকায় নিজেদের নাম আছে কি না।

প্রথমেই আসা যাক — SIR কি এবং কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? 

নির্বাচন কমিশন দেশের বিভিন্ন রাজ্যে সময় সময় ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সংশোধন চালায়। ২০০২ সালেও পশ্চিমবঙ্গসহ দেশের কিছু রাজ্যে নিঃশব্দে এই ধরনের সংশোধন হয়েছিল। বিহারের ২০০৩ সালের ভোটেও একই রকম SIR প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। এর মূল লক্ষ্য থাকে অবৈধ ভোটার বা অতিরিক্ত নাম বাদ দিয়ে খসড়া তালিকাকে নিখুঁত করে তোলা। ফলে ভোট প্রক্রিয়া হয় আরও স্বচ্ছ এবং নির্ভরযোগ্য।

এই বিশেষ নিবিড় সংশোধনের মাধ্যমে ভোটার তালিকায় যারা আছেন, তাদের নথি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে 

অনেক ক্ষেত্রে ছাড় পাওয়া যায়। বিহারের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় নাম থাকলেই ভোটারকে অতিরিক্ত নথিপত্র দেখানোর দরকার পড়ে নি। বাংলায়ও SIR যদি সেই ‘বিহার মডেল’ অনুসরণ করে, তাহলে ২০০২ সালের সেই তালিকা রাজ্যের ভোটারদের জন্য এক বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে। কারণ এটা প্রমাণ করবে কেউ নির্বাচনী অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না।

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এই তালিকা দেখতে গেলে কী করতে হবে? 

পশ্চিমবঙ্গের চিফ ইলেক্টোরাল অফিসারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (ceowestbengal.nic.in) গিয়েই আপনি খুব সহজেই নিজের নাম খুঁজে পেতে পারেন। হোমপেজের লেটেস্ট নিউজ সেকশনে ‘Electoral Roll of SIR 2002’ লেখা থাকবে। সেটাতে ক্লিক করলেই আপনি রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ভোটার তালিকা দেখতে পাবেন। এরপর আপনার নিজের জেলার নাম বাছাই করলে আসবে বিধানসভা কেন্দ্রের তালিকা। ওই কেন্দ্রে ক্লিক করলেই পাওয়া যাবে পোলিং স্টেশনের নাম এবং আপনার ভোট কেন্দ্র। এখান থেকেই আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন ২০০২ সালের SIR তালিকায় আপনার নাম রয়েছে কি না।

ভোটার তালিকা আপডেটের এই পদ্ধতি কেন এত জরুরি?

 এখন নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় ভোটারদের নির্দিষ্ট নথি প্রদর্শন করতে হয়। আধার কার্ড, প্যান কার্ড থেকে শুরু করে ভোটার আইডি কার্ড পর্যন্ত নানা ধরণের ডকুমেন্ট চাওয়া হয়। কিন্তু SIR এর মাধ্যমে, যদি ২০০২ সালের তালিকায় নাম পাওয়া যায়, তাহলে অনেক সময় অতিরিক্ত নথির প্রমাণ দেখানো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এটি ভোটারদের জন্য এক ধরনের আরামদায়ক ব্যবস্থা। ভোটের দিন ঝামেলা কমে এবং ভোটারদের আস্থা বেড়ে যায় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি।

আরও বড় কথা হলো, SIR এর মতো বিশেষ নিবিড় সংশোধন প্রক্রিয়া 

এই চালু থাকলে অবৈধ ভোটার বা ভুয়া নাম থাকাও কঠিন হয়ে পড়ে। এই ব্যবস্থা ভোটের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বড় ভূমিকা রাখে। ভোটার তালিকার এ ধরনের স্বচ্ছতা রাজনীতির মূলমন্ত্র — ভোটাধিকারকে সুরক্ষিত রাখা। আর পশ্চিমবঙ্গের মত রাজ্যে যেখানে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্র, সেখানে এর গুরুত্ব একপ্রকার অমূল্য।সুতরাং, ভোটারের কাছে এই তথ্য থাকা অত্যন্ত জরুরি, যে তিনি নিজেই যাচাই করতে পারবেন তাঁর নাম ভোটার তালিকায় রয়েছে কি না। নিজের অধিকার সুরক্ষিত রাখতে নিজেই সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারও এই বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে কাজ করছেন। তিনি বারবার ভোটারদের উৎসাহিত করছেন নিজেদের ভোটার তালিকা নিয়মিত পরীক্ষা করে নিতে।এবার যদি পশ্চিমবঙ্গেও বিহারের মতো SIR কার্যক্রম সফল হয়, তাহলে আগামী নির্বাচনে ভোটারদের বিভ্রান্তি কমবে, অনভিপ্রেত নাম বাদ যাবে, এবং ভোটের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে ভোট প্রক্রিয়া হবে আরও গতিশীল ও বিশ্বাসযোগ্য। রাজ্যের রাজনীতির জন্য এটি এক ইতিবাচক সংকেত।

অতএব, যারা এখনও ২০০২ সালের SIR তালিকা চেক করেননি, তাদের জন্য সময় এখনই সঠিক। 

ceowestbengal.nic.in ওয়েবসাইটে লগইন করে আপনার জেলা, বিধানসভা কেন্দ্র ও পোলিং স্টেশন নির্বাচন করে নিজের নাম নিশ্চিত করুন। নির্বাচন কমিশন এই সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে ভোটারের অধিকার সুরক্ষায় এক নতুন অধ্যায় শুরু করেছে।

স্মরণ রাখতে হবে, ভোটাধিকার প্রতিটি নাগরিকের গৌরব ও দায়িত্ব

 নিজের নাম ভোটার তালিকায় থাকা মানেই নিজের দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের অধিকার পাওয়া। তাই ভোটাররা সচেতন হয়ে নিয়মিত নিজেদের নাম যাচাই করুন, যাতে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা এড়িয়ে চলা যায়।

Leave a comment